আবু হানিফ,পাকুন্দিয়া উপজেলা প্রতিনিধি।। কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার লিচুর গ্রাম হিসেবে খ্যাত মঙ্গলবাড়িয়ায় ভালো ফলন হয়েছে বলে আশা করছেন লিচু চাষিরা।
পাকুন্দিয়া উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, ৫ থেকে ৬হাজারের বেশি লিচুগাছ থেকে এবার ৫ হতে ৭ কোটি টাকা বিক্রি হতে পারে ধারণা করা হচ্ছে।
স্থানীয় লিচু চাষির বলেন, চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই বাজারে পাওয়া যেতে পারে লিচু ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় তিন বর্গকিলোমিটারের মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের প্রতিটি বাড়ির উঠান বা সামনের অংশ, পুকুরপাড়, খেতের আইলসহ ফাঁকা জায়গায় লিচুগাছ লাগানো হয়েছে। দাম কিছুটা বেশি হলেও অন্য এলাকার লিচুর চেয়ে এই এলাকার লিচুর চাহিদা বেশি। গ্রামটিতে উৎপাদিত লিচুতে এক ধরনের মিষ্টি ঘ্রাণ আছে। বিচি ছোট হওয়ায় শাঁসের পরিমাণও বেশি। আর আকারেও বড়। এ ছাড়া এ লিচুর নজরকাড়া গোলাপি রং সহজেই ক্রেতাদের আকর্ষণ করে।
তবে দূরদুরান্ত থেকে আসা ক্রেতারা অভিযোগ করেছেন, মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু দেশে ‘ব্র্যান্ড’ হয়ে যাওয়ায় দাম তুলনামূলক বেশি রাখা হয়। শুধু তাই নয়, অন্য জায়গা থেকে লিচু এনে সেগুলো মঙ্গলবাড়িয়ার বলে চালিয়ে দেন বিক্রেতারা।
আজ বুধবার মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গাছে গাছে ঝুলছে টসটসে লিচু। প্রতিটি গাছের আশপাশে ফলের লোভে ঘুরঘুর করছে পাখির দল। পাখি তাড়ানোর পাশাপাশি গাছের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মালিক বা তাঁদের প্রতিনিধি গাছের নিচে মাচা বানিয়ে শুয়ে–বসে দিন পার করছেন। অনেকেই শেষ পর্যায়ের স্প্রে আর পানি ছিটানোতে ব্যস্ত। লিচুর ভারে নুয়ে পড়ে গেছে। অনেককে খুঁটি দিতেও দেখা যায়।
লিচুগাছের নিচে পাহারায় ছিলেন মিজানুর রহমান নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘এবার তাঁর ১০টি বড়সহ মোট ২৬টি লিচুগাছ আছে। এসব গাছ থেকে ৫০ হাজারের বেশি লিচু পাওয়ার আশা করছেন তিনি। আর সেগুলো সংগ্রহ করে আগামী ৫ দিনের মধ্যে বিক্রি শুরু করবেন। তাঁর প্রত্যাশা, এবারও ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় ১০০ লিচু বিক্রি হবে।
মঙ্গলবাড়িয়া ফকির বাড়ির সাবেক কমিশনার শামিম মিয়ার বাড়িতে প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো বিশাল আকৃতির ৩০টি গাছসহ আরও ৬০ থেকে ৭০টি লিচুগাছ আছে। এসব গাছ থেকে প্রায় পাঁচ লাখ টাকার লিচু বিক্রির প্রত্যাশা করা হচ্ছে।এবার আবহাওয়ার কারণে লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে জানিয়ে মামুন নিয়া নামের আরেক লিচু চাষি বলেন, ‘তাঁর নিজের কোনো গাছ না থাকলেও এবার ৫টি বড় গাছসহ ২০টি লিচুগাছ কিনেছেন।’
স্থানীয় মঙ্গলবাড়িয়া কামিল মাদ্রাসার শিক্ষক মোহাম্মাদুল্লাহ দাবি করেন, দেশের সীমান্ত পেরিয়ে গ্রামটির লিচু সৌদি আরব, দুবাই, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ ও লন্ডনপ্রবাসীদের কাছে পাঠানো হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকার চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে শত শত লিচু গাছ৷ গাছের নিচে পাহারায় সময় দিচ্ছেন চাষীরা। বাদর ও পাখিদের আনাগোনা লেগেই রয়েছে৷ গতবারের চেয়ে এবার ফলন ভালো হওয়ার জন্য বাগান মালিকদের মুখে হাসি দেখা গেছে ৷ অধিকাংশ লিচু গাছ আগেই কিনে নিয়েছেন ব্যাপারীরা৷
পাকুন্দিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর-ই-আলম বলেন, ‘মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের বেলে ও দোআঁশ মাটি লিচু চাষের জন্য বেশ উপযোগী। কৃষি বিভাগের পরামর্শে এবার লিচু চাষিরা সময়মতো ওষুধ ব্যবহারসহ গাছ পরিচর্যা করায় তাঁরা বাম্পার ফলন পেয়েছেন। সঠিক দাম ও বেশি লাভের আশায় গ্রামটির অনেকেই লিচু চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। এ কারণে এলাকাটিতে দিন দিন লিচুগাছের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। গ্রামটিতে দুই শতাধিক বাগান আছে। আর দেড় থেকে দুই হাজার লোক এর সঙ্গে জড়িত। এবার ১০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।