মোঃ মেহেদী হাসান ফারুক, নাগরপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধিঃ গত ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯ খ্রি. সকালে টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার ধুবড়িয়া ইউনিয়নের কুষ্টিয়ার বিল সংলগ্ন সরিষা ক্ষেত থেকে উজ্জ্বল এর ছেলে বিপ্লব (১৫) এর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে নাগরপুর থানা পুলিশ। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যকর সৃষ্টি হয়। ছেলে হত্যার আগে ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯ খ্রি. বিকেলে পিতা উজ্জ্বল মাদকসহ গ্রেফতার হয়।
নাগরপুর থানা পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, উজ্জ্বল দীর্ঘ দিন যাবৎ মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত ছিল। ক্লুলেস বিপ্লব হত্যার তদন্তকারী অফিসার নাগরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি (তদন্ত) মো. গোলাম মোস্তফা মন্ডল এই মামলায় বিবাদী না থাকায় সন্দেহের সাগরে নিমজ্জিত হন। ছেলে হত্যার পর বাদি পূর্ব পাড়া গ্রামের মৃত বুদ্দু শেখ এর ছেলে মো.উজ্জ্বল মিয়া (৩৮) পরনের লুঙ্গি দিয়ে একই ইউনিয়নের শোভা মিয়ার মেহগনি কাঠ বাগানের উত্তর পাশে জিগা গাছের সাথে ঝুলে ২৮ জানুয়ারি ২০২০ খ্রি. মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আত্মহত্যা করে। হত্যা মামলার বাদি পুত্র শোকে আত্মহত্যা করায় হত্যার মূল রহস্য উদ্ঘাটন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। কিন্তু হার না মানা তদন্তকারী চৌকস পুলিশের এ সদস্য বিপ্লব ও উজ্জ্বল পরিবারের বিগত সময়ের ঘটে যাওয়া প্রায় সকল ঘটনার খোঁজ খবর নেন। এছাড়াও তিনি তার সোর্স ও রহস্য উন্মোচনের শিক্ষা এই মামলায় প্রয়োগ করতে থাকেন। তিনি জানতে পারেন, উজ্জ্বল একজন ধোঁকাবাজ মাদক ব্যাবসায়ী ছিল বলে এলাকায় প্রচলিত আছে। বিভিন্ন সময়ে গাঁজা বিক্রির কথা বলে ঘাস, খড়, লতা-পাতা দিয়ে দিতো ক্রেতাদের। পুলিশের এই অফিসার উজ্জ্বলের প্রতারণার স্বীকার এমন মাদকাসক্তদের নজরে আনেন। এই সূত্র ধরে তদন্তকারী অফিসার পায় বেশ কিছু প্রতারিত মাদকাসক্ত। এদের সাথে কথা বললে বেরিয়ে আসতে থাকে ক্লু। পরে তিনি সূত্র ধরে সাগরকে জিজ্ঞেসাবাদ করেন। সাগরের অসংলগ্ন কথাবার্তায় সন্দেহ প্রবল হয়ে ওঠে এ অফিসারের। জিজ্ঞেসাবাদের একপর্যায়ে হত্যার দায় স্বীকার করে সাগর। হত্যাকারী ৪ জনের ৩ জন হল উপজেলার ধুবড়িয়া পূর্ব পাড়া গ্রামের মজনু মোল্লার ছেলে সাগর (১৯), একই গ্রামের মৃত মুকুল মিয়ার ছেলে আছাদুল (২২), শেওয়াইল গ্রামের মৃত আজমত আলীর ছেলে ছানোয়ার (৩০) কে সাগরের জবানবন্দি অনুযায়ী গ্রেফতার করে নাগরপুর থানা পুলিশ। এদের মধ্যে সাগর ১৬৪ ধারায় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রূপম কুমার দাসের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। সাগরের জবানবন্দি অনুযায়ী হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি তাদের বসত বাড়ির রান্না ঘরের পাশের ছাইয়ের নিচ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। এছাড়াও হত্যার সময় তার পরনে থাকা বিপ্লবের রক্তমাখা জ্যাকেট উদ্ধার করে। তার বর্ননা অনুযায়ী ক্লু-লেস এ হত্যার সাথে জড়িত ৪ জনের মধ্যে ৩ জনকে নাগরপুর থানা পুলিশের চৌকস দলটি গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। অকপটে স্বীকার করে সাগর বলে, পূর্ব শক্রতা ও মাদকদ্রব্য ক্রয় করে উজ্জ্বলের কাছ থেকে প্রতারিত হয়ে আমরা ৪ জন উজ্জ্বলকে হত্যার পরিকল্পনা করি। কিন্তু উজ্জ্বল গ্রেফতার হওয়ায় পরিকল্পনা করে তার মাদকাসক্ত ছেলেকে আমরা ২ জন বিপ্লবকে গাঁজা খাইয়ে নদীর পাড়ে নিয়ে যাই। সেখানে আমাদের অপর ২ জন আগেই ছুরি নিয়ে অপেক্ষায় থাকে। গাঁজা খাওয়ার পর উজ্জ্বলের কাছে পাওনা টাকার বিষয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে আমরা ৪ জন ছুরি দিয়ে পেটে ঘা দেই ও গলায় পোজ দেই। মৃত্যু নিশ্চত হয়েছে কিনা তা দেখতে ওর গলার ঢোর টেনে বের করে মিন্নত। বাকিরা বুকের ও হাতের রক্তের শব্দ শুনি । পরে নিশ্চিত হয়ে লাশ সবাই ধরে টেনে সরিষা ক্ষেতের মাঝ খানে ফেলে রেখে চলে যাই।
এ বিষয়ে নাগরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মো. আলম চাঁদ বলেন, এটি একটি ক্লু-লেস হত্যা কান্ড ছিল। এ মামলার তদন্তকারী অফিসার আমাদের পুলিশ সদস্যের একটি চৌকস দল নাগরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি (তদন্ত) মো. গোলাম মোস্তফা মন্ডল তার সঙ্গীয় ফোর্স এসআই নূর মোহাম্মদ ও দল নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে প্রায় ২ দুই মাসের মধ্যেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অভিযান পরিচালনা করে চাঞ্চল্যকর বিপ্লব হত্যার সত্য উদঘাটন করতে পেরেছে। যা নাগরপুর থানা ও পুলিশ সদস্যের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। আমরা আশাবাদী এ হত্যার সাথে জড়িত অপর আসামিকেও গ্রেফতার করতে সক্ষম হবো ।
