
বিশেষ প্রতিনিধি : দেশে দীর্ঘদিন ধরে কথিত ডিজিটাল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ফাউণ্ডেশনের নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ইমু, হোয়াটস অ্যাপসহ অন্যান্য মাধ্যম ব্যবহার করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে মো. আতিকুর রহমান ও তার চক্রের বিরুদ্ধে। মো. আতিকুর রহমান পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার ছোট শিবেরচর গ্রামের মো. হাবিবুর রহমান মৃধার ছেলে।সে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসলেও প্রশাসন তাকে এখনও আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয় নি। এদিকে ভুক্তভোগীরা মো. আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় প্রশাসনের নিকট অভিযোগ করেও দৃশ্যমান কোনো প্রতিকার পায় নি বলে অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুরহুদা মডেল থানায় জিডি যার নং- ২৩৪, তারিখঃ ৫/২/২০২০ ইং, দুর্নীতি দমন কমিশনে(দুদক) অভিযোগ দায়ের, তারিখ : ২০/১/২০২০ ইং, মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইর থানায় সিআর মামলা নং-৪০৭, (সিং)/২০১৭ ইং, পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা/২০২০ইং, পল্লবী থানা, ডিএমপি, ঢাকায় জিডি, যার নং- ২৪৭৮, তারিখ: ৩০/৮/২০২০ ইং সহ দেশের বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া সে কতটি বিয়ে করেছে তার কোনো হদিস নেই। তার তিনটি স্ত্রীর অস্তিত্ব পাওয়া গেলেও তার অত্যাচার ও নির্যাতনের কারণে বর্তমানে একজন স্ত্রীও তার সংসারে নেই। প্রতারক মোঃ আতিকুর রহমান তার কথিত ডিজিটাল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ফাউণ্ডেশন ( সরকারি স্বীকৃতিবিহীন) এর নাম করে বিভিন্ন সময়ে গ্রাম-গঞ্জের অনেক সহজ-সরল মানুষকে তার প্রতারণার ফাঁদে ফেলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। প্রতারক মো. আতিকুর রহমান ইতোমধ্যে চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুরহুদা থানার চিৎলা গ্রামের মো. নুর ইসলামএর ছেলে মো. মামুন হোসেনের নিকট থেকে ৬০ হাজার টাকা এবং তাদের মোকাদ্দমাধীন জমি উদ্ধার করে দেওয়ার কথা বলে প্রতারণার মাধ্যমে নন জুডিশিয়াল ব্ল্যাঙ্ক স্ট্যাম্পে মো. মামুন হোসেন ও তার পিতা মো. নূর ইসলামের স্বাক্ষর নিয়ে ১২ একর ৭৯ শতাংশ জমি মো. আতিকুর রহমান তার নিজ নামে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি করে নেয়। এ ঘটনায় মো. মামুন হোসেন প্রতারক মো. আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুরহুদা মডেল থানায় একটি জিডি করেন যার নং-২৩৪, তারিখঃ ৫/২/২০২০ ইং।
মো. মামুন হোসেন জিডিতে উল্লেখ করেছেন, আমার চাচা মো. ফরজ আলী এর সহিত আমার জমজিমা নিয়া বিজ্ঞ আদালতে মামলা চলাকালিন বিবাদী আতিকুর রহমান আমাকে জানায় যে, তোমাদের জমি নিয়ে যে সমস্যা তা আমি ঠিক করে দিচ্ছি। তুমি তোমার বাবাকে সাথে নিয়ে আমার বর্তমান ঠিকানায় যোগাযোগ কর। বর্তমান ঠিকানা বুশরা ক্লিনিক, ৫ম তলা, মিরপুর-১০, ঢাকা। আমি ও আমার আব্বা উক্ত ঠিকানায় যাই এবং বিবাদীর সাথে কথা বলি যে, আমার জমির সমস্যা মিটিয়ে দেবে বলে।আমার নিকট থেকে নগদ ১৭ হাজার টাকা নিয়া একটি নন জুডিশিয়াল ৫০০ টাকার ব্ল্যাঙ্ক স্ট্যাম্পে সহি করিয়া নেয়। পরবর্তীতে বিবাদীর উক্ত মোবাইল নাম্বার হইতে ফোন করিয়া বিভিন্ন মেয়াদে আমার নিকট থেকে সর্বমোট ৬০ হাজার টাকা নেয় এবং আমার কাছে আবার টাকা চাহিলে এবং আমি টাকা দিতে অস্বীকার করিলে বিবাদী আমাকে খুন জখমের হুমকি ধামকি প্রদান করে। বিগত অনুমান চার মাস পূর্বে আমি জানতে পারি যে, উক্ত স্ট্যাম্পে আমার স্থাবর ও অস্থাবর সমস্ত সম্পত্তি পাওয়ার অব অ্যাটর্নি করে নেয় এবং আমার মামলার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মো. মামুন হোসেন বলেন, মো. আতিকুর রহমান ডিজিটাল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ফাউণ্ডেশন এবং আমার জমিজিমা সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করার কথা বলে বিভিন্ন সময়ে আমার নিকট থেকে ৬০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তাছাড়া প্রতারণার মাধ্যমে ৫০০ টাকার নন জুডিশিয়াল ব্ল্যাঙ্ক স্ট্যাম্পে আমার ও আমার বাবার স্বাক্ষর রেখে আমাদের স্থাবর ও অস্থাবর সমস্ত সম্পত্তি প্রতারক মো. আতিকুর রহমান তার নিজ নামে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি করে নেয়। এদিকে আমার বাবা একজন প্রতিবন্ধী। হঠাৎ তিনি একদিন বাড়ি থেকে হারিয়ে যান। এই সংবাদ আতিকুর রহমান জানতে পেরে আমাকে মোবাইল ফোনে বলে, তুমিই তোমার বাবাকে গুম করেছ। এখন তুমি গুমের আসামি। এই মামলা থেকে বাঁচতে হলে তুমি আমাকে টাকা দিতে হবে। এভাবে জমি পাওয়ার আশায় এবং মামলা থেকে বাঁচার জন্য বিভিন্ন সময়ে বিকাশে এবং সশরীরে উপস্থিত হয়ে প্রতারক মো. আতিকুর রহমানকে আমি ৬০ হাজার টাকা প্রদান করি। কিন্তু সে আমাদের জমি উদ্ধারের বিষয়ে কিছুই করতে পারে নি। এরপর একদিন আমি তাকে ফোন দিয়ে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি ফেরত চাইলে সে আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। পরবর্তীকালে সে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে। এখন আমি আমার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি এবং তার বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেও এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না। আমি সরকার ও আইন-শৃঙ্খলাকারী বাহিনীর কাছে এই প্রতারকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
গাজীপুর জেলার ভুক্তভোগী তাহেরা পারভীন ইভা অভিযোগ করে বলেন, প্রতারক মো. আতিকুর রহমান তার কথিত ডিজিটাল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ফাউণ্ডেশনের নামে বিভিন্ন সময়ে আমার কাছ থেকে ৮৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আমি এই প্রতারককে অতিদ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার জন্য প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
খুলনার ভুক্তভোগী শাহিনূর আক্তার অভিযোগ করে বলেন, প্রতারক মো. আতিকুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে গ্রাম-গঞ্জের সহজ-সরল মানুষকে তার প্রতারণার ফাঁদে ফেলে ডিজিটাল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ফাউণ্ডেশনের নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সে আমার কাছ থেকেও কয়েক ধাপে প্রায় ২৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। কেউ তার অপকর্মের বিরুদ্ধে মুখ খুললেই আতিকুর রহমান তার ফেসবুক আইডিতে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধ মানহানিকর পোস্ট করতে থাকে এবং তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি প্রদান করে। এই প্রতারককে দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
আরেক ভুক্তভোগী, মোরসালিন ইসলাম বাবু অভিযোগ করে বলেন, মো. আতিকুর রহমান একজন ডিজিটাল প্রতারক। সে আমার কাছ থেকে ডিজিটাল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ফাউণ্ডেশনের নামে প্রতারণা করে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আমি তার এ ধরনের অপকর্মের বিষয়ে প্রতিবাদ করলে সে তার ফেসবুক আইডি থেকে আমার বিরুদ্ধে মানহানিকর পোস্ট করে এবং আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। আমি এই প্রতারকের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ৩১ আগস্ট, ২০২০ খ্রি. তারিখে ডিজিটাল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ফাউণ্ডেশনের চেয়ারম্যান মো. আতিকিুর রহমানের নিয়মিত ব্যবহৃত দু’টি মোবাইল নাম্বার যথাক্রমে ০১৭১৮৪৭৩৬৪৭ এবং০১৯১৩৯৬৪৬৯৪ -এ একাধিকবার ফোন করলেও তিনি এই নাম্বারগুলোতে দেওয়া ফোন রিসিভ না করে অন্য একটি অপরিচিত মোবাইল নাম্বার ০১৮৫৫৬৪৯৬৫৬ থেকে প্রতিদেককে ফোন করে। প্রতিবেদক মো. আতিকুর রহমানকে তার ব্যবহৃত দু’টি নাম্বারে দেওয়া ফোন রিসিভ না করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি (মো. আতিকুর রহমান) বলেন, আমার ওই নাম্বারগুলোতে নেটওয়ার্ক ভালো না। আপনি ০১৮৫৫৬৪৯৬৫৬ নাম্বারে কথা বলেন। এরপর প্রতিবেদক মো. আতিকুর রহমানকে তার নিয়মিত ব্যবহৃত ০১৭১৮৪৭৩৬৪৭ এবং ০১৯১৩৯৬৪৬৯৪ নাম্বারে ফোন রিসিভ করতে বললে, তিনি এই নাম্বারগুলোতে কথা বলতে রাজি হন নি। সেকারণে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয় নি।
উল্লেখ্য, মো. আতিকুর রহমান তার গড়া ডিজিটাল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ফাউণ্ডেশনের প্রধান কার্যালয়ের ঠিকানা বুশরা ক্লিনিকের ৫ম তলা, মিরপুর-১০, ঢাকা-১২১৬ ব্যবহার করলেও এই ঠিকানায় তার কোনো অফিসের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় নি। তাছাড়া সে তার ফেসবুক প্রোফাইলে পুলিশের সাবেক ডি আইজি মো. আনোয়ার হোসেনসহ অনেক ভিআইপিদের ছবি ব্যবহার করে এবং তাদের নাম করে প্রতারণার মাধ্যমে সারা দেশের মানুষের নিকট থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।