
মোঃ মেহেদী হাসান ফারুক, টাংগাইল প্রতিনিধি : টাঙ্গাইলের কালিহাতির গোলরা গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী দিনমজুর রফিকুলের সঙ্গে সাত বছর আগে বিয়ে হয় রোজিনার। পাঁচ বছরের মাথায় দুই কন্যার মা হন তিনি। এদিকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী স্বামীর চোখের আলো ফেরাতে দ্বারস্থ হন চিকিৎসকের। চিকিৎসার এক পর্যায়ে বিক্রি করতে হয় তার শেষ সম্বল ভিটেমাটি। তারপরেও সব চেষ্টা বৃথা যায় রোজিনার। পুরোপুরি অন্ধত্ব বরণ করেন স্বামী। স্বামীর অন্ধত্বের সঙ্গে সংসারেও নেমে আসে অন্ধকার। অন্ধ স্বামী আর দুই কন্যা সন্তানের সংসার কোনোভাবেই টানতে পারছিলেন না রোজিনা। তবে জীবনযুদ্ধে হার মানতে না চাওয়া সংগ্রামী রোজিনা বেছে নেন ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা। টাঙ্গাইল শহরের অলি-গলিতে রিকশা চালিয়ে সংসারের হাল ধরেন তিনি। হয়ে ওঠেছেন অন্য নারীদের জন্য অনুপ্রেরণা।
রোজিনা বেগম বলেন, পরের বাসায় কাজ করে যে বেতন পেতাম তাতে কোনো রকম সংসার চলতো। ছেলে-মেয়ে টাকা চাইলেও তাদের প্রয়োজন মেটাতে পারতাম না। প্রতিবন্ধী স্বামীকে নিয়ে সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছিলো। অন্যদিকে আমার দুটি সন্তানকেও মানুষ করতে হবে। বিভিন্ন বিষয় চিন্তা করার পর অটোরিকশা চালানোর সিদ্ধান্ত নেই। পরে অটোরিকশা চালানো শিখে প্রতিদিন অটোরিকশা চালাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, আমার বাড়ি ঘর কিছু নেই। পরের বাসা ভাড়া করে থাকি। পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিল ও এনজিওতে কিস্তি দিতে হয়। এসব কিছুর চাহিদা মেটাতে শহরে অটোরিকশা চালানোর সিদ্ধান্ত নেই। আমার গ্রামের মানুষ প্রথমে অনেক কথাই বলতেন। সরকারের সহযোগিতা অনেকে পেলেও আমি কোনো সহযোগিতা পাইনি। মেম্বার- চেয়ারম্যানরাও আমার প্রতি কোনো সহযোগিতার হাত বাড়ায়নি।
প্রতিবেশী শাহজাহান মিয়া বলেন, নিজের সন্তান দু’টিকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য অটোরিকশা চালান রোজিনা। জীবন বাঁচানোর জন্য একটি মানুষ যেকোন পেশা গ্রহণ করতে পারে। সে পুরুষ হোক আর নারী হোক সেটি কোনো বিষয় না।
টাঙ্গাইল ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট সুমন মিয়া বলেন, টাঙ্গাইল শহরের তিনি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। সংসারের প্রয়োজনে তিনি প্রায় এক বছর ধরে অটোরিকশা চালাচ্ছেন। পুলিশ সুপারের নির্দেশে রোজিনাকে পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। সবদিক থেকে তাকে সহযোগিতা করা হচ্ছে। শহরে দুই শিফটে অটো চললেও তার অটোটি সব সময় চলে। তাকে কোনো বাধা দেওয়া হয় না।
বাসাইল উপজেলার ফুলকি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাবুল হোসেন বলেন, আমার ইউনিয়নের অনেকে প্রয়োজন না থাকলেও সাহায্যের আবেদন করেন। কিন্তু রোজিনা আজ পর্যন্ত কোনো আবেদন করেনি। উপজেলা চেয়ারম্যান, ইনএনও এমপি’র সঙ্গে কথা বলে রোজিনাকে একটি ভিটেবাড়ি ও ঘর দেওয়ার চেষ্টা করবো। সরকারিভাবে তাকে স্বাবলম্বী করা হবে।