
এএসএম সা’-আদাত উল করীম: জামালপুরে শহরের খামারবাড়ি এলাকায় গৃহকর্তার ধর্ষণের হাত থেকে বাঁচতে বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গুরুতর আহত হয়েছে এক কিশোরী। তার বয়স আনুমানিক ১৪ বছর। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে জামালপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।১৩ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওই কিশোরী এই লালসার শিকার হন। ‘৯৯৯’ থেকে ফোন পেয়ে বৃহস্পতিবার রাতেই জামালপুর সদর থানার পুলিশ ওই গৃহকর্তা আবুল কাশেমকে (৩৬) আটক করেছে। এ ব্যাপারে ওই কিশোরীর বাবা বাদি হয়ে মেয়েকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে গৃহকর্তা আবুল কাশেমকে আসামি করে ১৪ ডিসেম্বর শুক্রবার দুপুরে জামালপুর সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা দায়েরের পর বিকেলে আসামি আবুল কাশেমকে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠিয়েছে সদর থানা পুলিশ। আবুল কাশেম জামালপুর সদর উপজেলার রানাগাছা ইউনিয়নের দড়িহামিদপুর গ্রামের মো. জাফর আলীর ছেলে। তিনি সৃষ্টি স্কুল অ্যান্ড কলেজ জামালপুর শাখার সাবেক শিক্ষক এবং বর্তমানে একই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন তার স্ত্রী আনজু মনোয়ারা রিতু। এই দম্পতি জামালপুর শহরের খামারবাড়ি এলাকায় জনৈক মো. ইউসুফের বাসার দোতলায় ভাড়াটে হিসেবে বসবাস করেন। আর তাদের বাসায়ই গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ করত ওই কিশোরী। ওই কিশোরী তাদের বাসায় প্রায় তিন বছর ধরে গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ করে আসছে।
অভিযোগের ভিত্তিতে জানা গেছে, গৃহকর্তা আবুল কাশেমের স্ত্রী আনজু মনোয়ারা রিতু তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি স্কুল অ্যান্ড কলেজে একটি জরুরি সভায় অংশ নিতে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে যান। তাদের বাসার গৃহপরিচারিকা ওই কিশোরী রান্নাঘরে কাজ করছিল। গৃহকর্তা আবুল কাশেম রান্না ঘরে গিয়ে ওই কিশোরীকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে তাকে বলেন, ‘শীতের সময় পানির কাজ করিতেছ, তোমার ঠান্ডা লাগে না।’ কিশোরী ভয়ে তাকে বাধা দিলে গৃহকর্তা তাকে জোর করে শোয়ার ঘরে বিছানায় নিয়ে যান। সেখানে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে বিবস্ত্র করে ধর্ষণচেষ্টা করেন তিনি। এ সময় ওই কিশোরী আবুল কাশেমকে ধাক্কা মেরে বাসার ছাদে গিয়ে কান্নাকাটি করে। আবুল কাশেমও পিছু নিয়ে ছাদে গিয়ে পুনরায় তাকে জড়িয়ে ধরে নিচে নামানোর চেষ্টা করেন। পরে ওই কিশোরী দোতলার ছাদের পানির পাইপের সঙ্গে নিজের ওড়না বেঁধে নিচে নামার চেষ্টা করে। তখন মাটিতে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হয় ওই কিশোরী। আহত অবস্থায় মাটিতে হামাগুড়ি দিয়ে ঘটনাস্থলের কাছেই তাদের বাসায় গিয়ে তার মাকে ঘটনা খুলে বলে। ছাদ থেকে পড়ে দুই পা, হাটুসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক আঘাত পেয়েছে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে চামড়া উঠে গিয়ে মারাত্মক জখমও হয়েছে। পরে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় জামালপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ওই কিশোরীর বাবা অভিযোগ করে সাংবাদিকদের বলেন, ‘গৃহকর্তা আবুল কাশেম কিছুদিন ধরে আমার মেয়েকে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। তিনি কাউকে কিছু না বলার জন্য আমার মেয়েকে ভয়ভীতি দেখাইতেন। আমার মেয়েটারে আল্লায় বাঁচাইছে। আমি আবুল কাশেমের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’ এদিকে বাসার ছাদ থেকে এক কিশোরী পড়ে গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনা জানাজানি হলে স্থানীয় কে বা কারা ‘৯৯৯’ নম্বরে ফোন করে ঘটনার বিস্তারিত জানিয়ে পুলিশের সহযোগিতা চান। ৯৯৯ নম্বর থেকে ফোন আসে জামালপুর সদর থানায়। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালেমুজ্জামান বৃহস্পতিবার রাতেই অভিযান চালিয়ে খামারবাড়ির ওই বাসা থেকে গৃহকর্তা আবুল কাশেমকে আটক করে থানায় নিয়ে যান। পরে তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, ‘বৃহস্পতিবার গৃহপরিচারিকাকে ধর্ষণচেষ্টাকারী আবুল কাশেমকে আটক করা হয়েছে এবং মামলা দায়ের করে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গুরুতর আহত ওই কিশোরী জামালপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।