ক্রাইম পেট্রোল ডেস্কঃ
চট্টগ্রামে পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, এলপিজি ও জ্বালানি তেলের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ পরবর্তী বিষয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে ক্যাব এর মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ সোমবার, ২৫ জুলাই ২০২২খ্রি. নগরীর চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রমহান হলে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইনের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির জ্বালানি উপদেষ্টা ও দেশের বিশিষ্ট জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম. শামসুল আলম। ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরীর সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও ক্যাব চট্টগ্রামের সহ-সভাপতি এম নাসিরুল হক, ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু। এসময় উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, বীরমুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর ইদ্রিস আলী, ক্যাব পাঁচলাইশের সাধারন সম্পাদক মোঃ সেলিম জাহাঙ্গীর, ক্যাব ডবলমুরিং এর মোনায়েম বাপ্পী প্রমুখ।
মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে ক্যাব’র অধ্যাপক এম. শামসুল আলম বলেন, চট্টগ্রাম দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক, বন্দর ও শিল্প নগরী। বন্দর নগরী হিসেবে পানি, বিদ্যুত, গ্যাস ও জ্বালানি খাতে সরকারের অনেক গুরুত্ব প্রদানের কথা থাকলেও এখাতের সরকারি সংস্থাগুলির সাথে সরাসরি আলোচনা ও তাদের প্রদত্ত তথ্য মোতাবেক অনেক জায়গায় গড়মিল পরিলক্ষিত হচ্ছে। যা দেশের শিল্প, কলকারখানা ও উৎপাদনে নেতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি করবে। যেহেতু বিষয়টি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সমস্যা, জনগণ ও ভোক্তারা অনেক কিছু মেনে নিতে শুরু করেছেন। সরকারের মাঠ পর্যায়ে কিছু কিছু জায়গায় সমন্বয়হীনতা ও দায়িত্বপালনে গাফলতি থাকলেও নীতিনির্ধারকদের আন্তরিকতা ও সদিচ্ছার অভাব নেই। মাঠ পর্যায়ের অসংগতি ও সমন্বয়হীনতার বিষয়গুলি সমাধানের জন্য ক্যাব সরকারের নীতি নির্ধারক, মন্ত্রনালয়, এনার্জি রেগুলেটরী কমিশনে উপস্থাপন করেন। যেখানে ব্যত্যয় ঘটে, সেখানে প্রয়োজনে ভোক্তাদের বৃহত্তর স্বার্থে আইনী প্রতিকার কামনা করা হয়।
তিনি আরও বলেন পানি, বিদ্যুত ও গ্যাসের ক্ষেত্রে অনেক জায়গায় অবকাঠামো তৈরি করা হয়ে আছে। কিন্তু উৎসস্থলে সরববরাহ ও বিতরণের ক্ষেত্রে সক্ষমতা তৈরি হয়নি। এটা এ সমস্ত সেবার ক্ষেত্রে বড় হু’মকি। একটা সময় এসমস্ত খাতে ভোক্তাদের মধ্যে অসন্তুষ্টি দানা বেঁধে উঠবে। বিতরণের ক্ষেত্র তৈরির পাশাপাশি সরবরাহের সক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন। একই সাথে বিভিন্ন অজুহাতে দাম বাড়ানোর যে প্রক্রিয়া চলমান আছে তা সামগ্রিক জ্বালানি খাতের জন্য শুভকর নয়। কারণ ভোক্তাদের মাঝে মানসম্মত ও গুনগত সেবা পৌঁছানো, অধিকতর কমসামর্থ্যবানদের কাছে সেবা নিশ্চিত করা না গেলে বৈষম্যের মাত্রা সামাজিক অস্থিরতা তৈরি করবে। উন্নয়ন প্রকল্পে নাগরিক পরিবীক্ষণ না থাকায় সুশাসনের ঘাটতির কারণে অ’নিয়ম ও দু’র্নীতির মতো বিষয়গুলো স্থায়ি বাসা বাঁধছে বলেও মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, সরকার ও প্রশাসনে সকল পর্যায়ে ব্যবসায়ীদের ক্ষমতা ও প্রভাব এত বেশি হয়ে আছে, যেখানে সবকিছু তারা নিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছেন। সোখানে জেলা পর্যায়ে সরকারী কর্মকর্তাদের পক্ষে ব্যবসায়ীদের ওপর প্রভাব বিস্তার করা কোনভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। তাই এখন প্রয়োজন অ’নিয়ম ও ভো’গান্তির বিরুদ্ধে তৃণমূলে জনগণের সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা। যা রেলের অ’নিয়ম নিয়ে মহিউদ্দীন রনি শুরু করেছেন।
মুক্ত আলোচনায় কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মী বিদ্যুত ও গ্যাসে প্রিপেইড মিটার স্থাপনে সেবা সংস্থাগুলোর দীর্ঘসূত্রিতা, লোডশেডিং এ অব্যবস্থাপনা, গ্যাস ও পানি সরবরাহে ঘোষণা ছাড়া সেবা বন্ধ রাখা, চট্টগ্রামে সোয়ারেজ সার্ভিস বিহীন ওয়াসার কর্মকান্ড যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হু’মকি বলে মন্তব্য করেন। এছাড়াও বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস উৎপাদনে অতিরিক্ত প্রকল্প ব্যয়, প্রকল্পের ব্যয় মাঝপথে দ্বিগুণেরও বেশি বাড়ানো, প্রকল্পে ধীরগতির দায়ভার জনগণের ওপর সুদের বোঝা বাড়াচ্ছেন বলে মত প্রকাশ করেন। বিষয়গুলো সরকারের সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের মাঝে পৌঁছাবেন বলে আশ্বস্ত করেন।
সভাপতির বক্তব্যে ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, জ্বালানি খাতে বৈশ্বিক অ’স্থিরতায় বাংলাদেশও আক্রান্ত। সেকারণে পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, এলপিজি ও জ্বালানি তেলে সাশ্রয়ী হতে সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা, গনমাধ্যম কর্মীসহ সকলে এ সমস্যায় জর্জরিত। যারা সরকার চালান তারাও এদেশের নাগরিক এবং তাদের আত্মীয়-স্বজনও এ সমস্ত সমস্যা থেকে মুক্ত নয়। তাই বৈশ্বিক এই সমস্যা মোকাবেলায় সকলকে সম্মিলিতভাবে কাজ করার বিকল্প নাই। ক্যাব দেশের ভোক্তাদের প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে জনগণের সমস্যাগুলো গণমাধ্যম ও সরকারের কাছে তুলে ধরার কারণে অনেকে মনে করে থাকেন ক্যাব নেতৃবৃন্দ শুধু ত্রুটিই দেখেন। প্রকৃত অর্থে যে কাজটি রাজনৈতিক দলগুলো করার কথা ছিলো। আর ক্যাব জনগণের ভো’গান্তিগুলো তুলে ধরে সরকারের নীতিনির্ধারকদেরকে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন।