সরকারের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না আসায় ক্ষুব্ধ ও হতাশ শিক্ষক সমাজ
মো. ইব্রাহিম খলিলঃ
এমপিওভুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের দাবিতে সারা দেশ থেকে আসা শিক্ষক-কর্মচারীরা আজ শুক্রবার ৮ম দিনের মতো রাজপথে অবস্থান করলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না আসায় শিক্ষকদের মাঝে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।
জানা গেছে, গত ২৪ জানুয়ারি, ২০২৩ খ্রি. থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী জাতীয়করণ প্রত্যাশী মহাজোটের উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালিত হয়ে আসছে। আজ কর্মসূচির ৮ম দিনে ১৬ জন শিক্ষক অসুস্থ হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
আজ শুক্রবার এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী জাতীয়করণ প্রত্যাশী মহাজোটের পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সরকারি- বেসরকারি শিক্ষকদের যোগ্যতা, শিক্ষাক্রম ও কর্মঘণ্টাসহ সকল দায়-দায়িত্ব একই রকম হওয়া সত্ত্বেও আর্থিক সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে দেশের এমপিওভুক্ত প্রায় ৫ লক্ষাধিক শিক্ষক-কর্মচারী চরম বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছেন। সরকারি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মাঝে বিরাজমান বৈষম্যগুলো হলো- সরকারি শিক্ষকরা বাড়ি ভাড়া পান মূলবেতনের ৪০-৫০% আর এমপিওভুক্ত বে শিক্ষকরা পান মাত্র ১ হাজার টাকা, সরকারি শিক্ষকরা মূলবেতনের সমপরিমাণ দু’টি উৎসব ভাতা পেয়ে থাকেন আর এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা পান মূলবেতনের ২৫%, সরকারি শিক্ষকরা চিকিৎসা ভাতা পান ১ হাজার ৫শ’ টাকা আর এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা পান মাত্র ৫শ’ টাকা। এছাড়াও, সরকারি শিক্ষকদের রয়েছে বদলি, পদোন্নতি ও পেনশন সুবিধা। অথচ এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা এসব সুবিধা থেকে বঞ্চিত। শিক্ষক নেতারা বিভিন্ন সময় সংবাদ সম্মেলন, সভা-সমাবেশ ও কুটনৈতিক তৎপরতা চালিয়েও কোনো প্রকার সুফল না পাওয়ায় গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ খ্রি. তারিখ থেকে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সারা দেশের শিক্ষকদের নিয়ে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছে। আজ কর্মসূচির ৮ম দিনেও এমপিওভুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের দাবিতে সারাদেশ থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে শিক্ষকরা অংশগ্রহণ করেছেন। দিন বাড়ার সাথে সাথে শিক্ষকদের উপস্থিতিও বাড়ছে।
মহাজোটের যুগ্ম-আহ্বায়ক মো. জসিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ একটি স্বাধীন দেশে দুই ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা থাকতে পারে না। আমরা এর অবসান চাই, এমপিওভুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা জাতীকরণ চাই। সরকারের পক্ষ থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা জাতীকরণের ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আমরা শিক্ষক সমাজ ঘরে ফিরে যাব না।’
বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী ফোরাম( বাবেশিকফো) এর যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ইব্রাহিম খলিল বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার পদ্মা সেতু নির্মাণ, মেট্রোরেল চালু, বয়স্ক ভাতা প্রদান, ভূমিহীনদের জমিসহ ঘর করে দেয়া, মুক্তিযোদ্ধাদের পর্যাপ্ত সুযোগ -সুবিধা প্রদান, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণসহ প্রতিটি সেক্টরে ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করেছে। কিন্তু এই সরকারের আমলে শিক্ষকদের রাজপথে অবস্থান করা মেনে নেয়া যায়না। এটি জাতির জন্য অত্যন্ত লজ্জাকর বিষয়।’
তিনি মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণা পত্রের ২৩(২) অনুচ্ছেদ, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১৫(খ) এবং ২০(১) অনুচ্ছেদ উল্লেখ করে বলেন, ‘মানবাধিকার এবং সংবিধান অনুযায়ী ‘আমাদের দাবি ন্যায্য।’
এসময় তিনি এমপিওভুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এমপিওভুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ করা হলে কেবল শিক্ষকরা উপকৃত হবেন এমনটা নয়, সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে এদেশের খেটে খাওয়া ১৭ কোটি মানুষ। কারণ তাদের সন্তানেরা অল্প বেতনে পড়াশোনা করতে পারবে। তাই জনগণের স্বার্থেই এমপিওভুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ হওয়া জরুরি।’
এসময় অন্যদের মাঝে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী ফোরামের (বাবেশিকফো) যুগ্ম মহাসচিব মো. জহিরুল ইসলাম, আব্দুল জব্বার, মতিউর রহমান দুলাল, আফজাল হোসেন, মো. মামুনুর রশিদ, মো. মনিরুল ইসলাম প্রমুখ।
