মাহতাব উদ্দিন আল মাহমুদ, ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ
আষাঢ়ে পানি নেই, চলছে দাবদাহ, ঘন ঘন লোডশেডিং অস্বস্তিতে মানুষ।আষাঢ় মাসে চারিদিকে বৃষ্টির পানিতে থইথই থাকার কথা। সেখানে বৃষ্টি তো পরের কথা, আকাশে দেখা মিলছে গর্জন দেয়া মেঘের। উল্টো জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে রোদের তাপে পুড়ছে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটসহ আশেপাশের জেলা-উপজেলা। ভ্যাপসা গরমে শরীর থেকে ঝরছে পানি। অসহনীয় গরমে মানুষের পাশাপাশি হাঁপিয়ে উঠেছে গাছপালাসহ প্রকৃতি।
আষাঢ় মাসের এই ভ্যাপসা গরমে কাটা ঘাঁয়ে নুনের ছিটা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিদ্যুতের অকল্পনীয় লোডশেডিং। দিনরাত মিলিয়ে গড়ে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিংয়ে পড়তে হচ্ছে এই উপজেলাবাসীকে। প্রতি এক ঘণ্টা পরপর বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে বিদ্যুৎ সরবরাহ। দিনের তুলনায় রাতে বিদ্যুতের এই যাওয়া আসা খেলা যেন আরো জমে উঠে।
দিনাজপুর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-২ এর ঘোড়াঘাট জোনাল অফিসের দেওয়া তথ্য বলছে, ডুগডুগিহাট বিদ্যুৎ সরবরাহ উপকেন্দ্র থেকে পৃথক ৯টি ফিডারে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না থাকায় প্রতি এক ঘণ্টা পরপর প্রতিটি ফিডারে লোডশেডিং দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। দিনের বেলা এই ৯টি ফিডারে বিদ্যুতের চাহিদা ৭ দশমিক ৫ থেকে ৮ মেগাওয়াট। সেখানে বরাদ্দ পাওয়া যায় ৬ থেকে ৭ মেগাওয়াট।
রাতের বেলা এই বিদ্যুতের চাহিদা ১১ মেগাওয়াট। চাহিদার বিপরীতে বরাদ্দ মিলছে মাত্র ৭ মেগাওয়াট।
অপরদিকে, দিনাজপুর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্য অনুযায়ী, এই জেলায় আজ বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৪ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ঘোড়াঘাট পৌরএলাকার বাসিন্দা মীর হান্নান বলেন, বিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে আমরা ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারছি না। গরমে বাড়িতে থাকা যাচ্ছে না। অতিরিক্ত গরমে শিশু ও বৃদ্ধরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। বিল নেওয়ার সময় মিটার চার্জ, ডিমান্ড চার্জসহ যত্রতত্র চার্জে ভরপুর। তবে বিদ্যুৎ সরবরাহের সময় তাদের দু’র্নীতি শুরু হয়ে যায়।
পৌর শহরে প্যাডেল রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন গোলাম রসূল। তিনি বলেন, ‘দিনের বেলা রোদের তাপে গা (শরীর) সেদ্ধ হয়ে যাওছে। গরমে শরীর থেকে সারাক্ষণ ঝর্ণার মত পানি ঝরোছে। রাতে বাড়ি ঘুমাবার গেলে শুরু হয় বিদ্যুতের তেলেসমাতি। গরম বেশি হলে বিদ্যুতের যাওয়া আসাও বেশি হয়।’
দিনাজপুর আবহাওয়া পর্যবেক্ষনাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘দিনাজপুরের আশপাশে ইতিমধ্যে বৃষ্টি হয়েছে। আগামী দু‘একদিনের মধ্যে গরম কিছুটা কমে যাবে।’
দিনাজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর ঘোড়াঘাট জোনাল অফিসের উপমহাব্যবস্থাপক কামরুজ্জামান বলেন, ‘দিনের বেলা লোডশেডিং কম হচ্ছে। তবে স্বাভাবিকভাবে রাতের বেলা বিদ্যুতের ব্যবহার বেশি হয়। এতে চাহিদাও বাড়ে। চাহিদা অনুযায়ী গ্রিড থেকে সরবরাহ না পাওয়ায় রাতে লোডশেডিং বেশি হচ্ছে।’