
তোফাজ্জল হোসেন বাবু, পাবনা >>
পাবনায় সাড়ে চার বছর বয়সী জমজ দুই ভাই আলাল ও আলামিন। ঝুঁপড়ি ঘরের মেঝেতে দিনরাত শুয়ে শুয়ে সময় কাটে তাদের। হাঁটার শক্তিও নেই। বাঁকা হয়ে গেছে চোখ। মুখে ফোটেনি কথা। ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকে সারাক্ষণ। জন্মের পর থেকেই অজানা রোগে ভূগছে দুই ভাই।
টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না দরিদ্র বাবা-মা। দুই ছেলের এমন অসহায়ত্ব দেখে ডুকরে ডুকরে কাঁদছেন তারা। পাবনার চাটমোহর উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের মাঝগ্রামের দিনমজুর আসাদ আলী ও গৃহিণী সাজেদা বিবির ছেলে আলাল ও আলামিন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঘরে আসবাবপত্র বলতে কিছুই নেই। মাটির মেঝেতে সারের বস্তার ওপর শুয়ে রয়েছে আলাল ও আলামিন। পাশেই বসে আছেন তাদের বাবা-মা। একে অপরকে আদর করছে দুই ভাই। মাঝে মধ্যে উঠে বসার চেষ্টা করেও পারছে না। সম্পদ বলতে কিছুই নেই পরিবারটির। অন্যের জায়গার ওপর পাটকাঠি ও টিন দিয়ে তৈরী ঝুঁপড়ি একটি ঘরে দুই ছেলেকে নিয়ে বসবাস তাদের। অজানা রোগে আক্রান্ত জমজ দুই ছেলের টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। তাই বাধ্য হয়ে দুই ছেলেকে কোলে নিয়ে প্রতিদিন হাটে-বাজারে ভিক্ষা করেন বাবা-মা। যা মেলে সেই টাকা দিয়ে তাদের ওষুধ কেনা হয়।
বাবা আসাদ হোসেন জানান, জন্মের পর হঠাৎ করেই চোখ বাঁকা হতে থাকে আলাল-আলামিনের। দুই পায়ে কোন শক্তি পায় না। স্থানীয় একজন চিকিৎসক দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। কিন্তু তারপরেও রোগ না সারায় পাবনা সদর হাসপাতালের বর্হি:বিভাগে দেখানো হয়। সেখানে চিকিৎসক কিছু ওষুধ পত্র লিখে দেন এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে গিয়ে দেখাতে বলেন। কিন্তু দিনমজুরি করে আসাদ হোসেন যা উপার্জন করেন সেই টাকা দিয়ে সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হয়।
সেখানে দুই ছেলের চিকিৎসা করানো তার কাছে দুঃস্বপ্নের মতো। অথচ বাড়ির পাশে একই সময়ে জন্ম নেয়া অন্য শিশু যখন খেলাধুলা করে তখন আলাল-আলামিন বাবা-মা’র কোলে চেপে ভিক্ষায় বের হয়! কারণ তাদের (আলাল-আলামিন) জন্য সপ্তাহে এক হাজার দুই’শ টাকার ওষুধ কিনতে হয়।
এদিকে দুই ছেলের চিকিৎসা সহযোগিতার জন্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদুল ইসলাম বকুলের কাছে গেলে তিনি ১ হাজার টাকা ও একটি প্রত্যয়ন পত্র দেন। এখন সেই প্রত্যয়নপত্র দিয়েই আলাল-আলামিনকে নিয়ে দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করছেন অসহায় বাবা-মা। তবে দুই ছেলের উন্নত চিকিৎসার জন্য বিত্তবানদের সহযোগিতা চেয়েছেন আসাদ হোসেন।