ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :
ঝিনাইদহের শৈলকুপায় নদী থেকে অবৈধভাবে মাটি ও বালু উত্তোলন করায় নদী ভাঙ্গনের কবলে বসতভিটা ও ফসলি জমি এখন হুমকির মুখে। সরকারি আইন অমান্য করে একটি স্বার্থান্বেষী মহল প্রতিবছর কুমার, গড়াই ও কালী নদী থেকে অবৈধভাবে মাটি ও বালু উত্তোলন করে আসছে। বর্তমানে শৈলকুপায় মাটি ,বালু ও নদী খেকোদের খুঁটির জোর কোথায়? এই কথা এখন সাধারণ মানুষের মুখে মুখে শোনা যাচ্ছে। কোনো ভাবেই বন্ধ হচ্ছে না বালু উত্তোলন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহের শৈলকুপার মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীর বুক থেকে মাটি ও বালু দেদারছে উত্তোলন করছে। দীর্ঘ দিন ধরে উপজেলার নিশ্চিন্তপুর, শিতলীডাঙ্গা, বালিয়াঘাট ও রতিডাঙ্গাসহ কালী নদীর বিভিন্ন এলাকা থেকে নদী খেকোরা অবৈধভাবে নদীর বুক থেকে মাটি ও বালু উত্তোলন করছে। শ্রমিক,ভেকু ও ড্রেজার ম্যাশিনের মাধ্যমেও নদীর বুক থেকে অবৈধভাবে দেদারছে মাটি ও বালু উত্তোলন করলেও প্রশাসন নীরব ভুমিকা পালন করছে। দেখার কেউ নেই, এ যেনো নদী খেকোদের স্বর্গরাজ্য। মাটি ও বালু উত্তোলনের ফলে ফসলি জমি ও বসতবাড়ী হুমকির মুখে পড়েছে। টানা বৃষ্টিতে ও নদীর পানি বাড়ার সাথে সাথে আশপাশের এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতিদিন বালু ও মাটিবাহী ট্রাক গ্রামের রাস্তা দিয়ে চলাচল করায় একদিকে যেমন রাস্তা-ঘাট নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে ধুলাবালিতে অতিষ্ঠ হচ্ছে সাধারণ বসতি। রাস্তায় চলাচলে চরম ঝুঁকিতে রয়েছে স্কুলগামী শিক্ষার্থী ও শিশুরা।
সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, নিশ্চিন্তপুর গ্রামের জালাল উদ্দিন ও তার ভাই সাবেক ইউপি সদস্য আলাল উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে নিশ্চিন্তপুর নদীর চর থেকে অবৈধভাবে শ্রমিক, ভেকু এবং ড্রেজার লাগিয়ে বালু ও মাটি উত্তোলন করছে। শিতলীডাঙ্গা গ্রামের নুরইসলাম নামে এক ব্যাক্তি প্রতিনিয়তই চর থেকে মাটি ও বালু উত্তোলন করায় বসতবাড়ী হুমকির মুখে পড়েছে। ভোর অন্ধকার থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত ফিটনেসবিহীন ছোট বড় নানা প্রকার যানবাহনে ইটভাটাসহ নদীর এ বালি ও ফসলী জমির মাটি কেটে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করছে এসব মাটি ও বালু ব্যবসায়ীরা।
শিতলী গ্রামের বদর খান জানান, বালু ও মাটি ব্যবসায়ীরা মাটি কাটতে কাটতে তার বসতঘরের কাছে চলে এসেছে। যেকোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন তারা।
তিনি আরো জানান, বালু ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালী হওয়ায় এমনভাবে মাটি কাটছে যে,পাশের জমি তাদের দিতে বাধ্য হয়। এটা তাদের একটা কৌশল। অনেক জমির মালিকই জানান, জমির চারিদিক থেকে ভূমি খেকোরা মাটি কেটে নেওয়ায় প্রতিবছর তাদের নিজ নিজ জমি নদীতে বিলীন হয়ে যায়। যে কারণে নিজেদের সংসার চালানোর তাগিদেই মাটি ব্যবসায়ীদের কাছে জমির মাটি বিক্রি করতে হয়। প্রতিবছর বালি ও মাটি কাটার ফলে কালী নদীসহ অন্যান্য নদী ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়। ঘরবাড়ি ভেঙ্গে নি:স্ব হয় মানুষ, নদীগর্ভে হারিয়ে যায় তাদের ফসলী জমি।
ভূক্তভোগীরা জানান, নদী পাড়ের শত শত ফসলি জমি ও বসতবাড়ী নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার আগেই অবৈধ বালু উত্তোলন ও মাটি কাটা বন্ধে এখনই প্রশাসনের কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
এ ব্যাপারে শৈলকুপা উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা উসমান গনি জানান, অবৈধ মাটি ও বালু ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় এনে খুব শীঘ্রই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।