বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যাত্রী ও পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইনল্যান্ড ওয়াটারওয়েজেস অথরিটি অব ইন্ডিয়া এবং বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশন সম্প্রতি পর্যটকবাহী জাহাজ চালুর বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানিয়েছে।
এ ছাড়া ভারতীয় একটি ট্যুর অপারেটর কোম্পানি আগামী মার্চে পর্যটকবাহী জাহাজ নিয়ে বাংলাদেশে আসার প্রথম প্রস্তাব দিয়েছে। এ ব্যাপারে দুটি দেশই ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানা গেছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমডোর এম মোজাম্মেল হক যুগান্তরকে বলেন, ভারতের একটি প্রস্তাব আমরা পেয়েছি। এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবটি পাঠানো হয়েছে। খুব শিগগির সব স্টেকহোল্ডার নিয়ে সভা করা হবে।
তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে পর্যটকবাহী জাহাজ চালুর বিষয়ে আমরা ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছি। তবে ইমিগ্রেশন, নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয় জড়িত আছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে বৈঠকে আলোচনা করা হবে।
জানা গেছে, আগামী মার্চে পর্যটকবাহী জাহাজ নিয়ে বাংলাদেশে আসার প্রস্তাব দিয়েছে ভারতীয় একটি ট্যুর অপারেটর। কলকাতা থেকে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা ঘুরে আসামের গৌহাটিতে টুর শেষ হবে। ১৭ দিনের এ ট্যুরে জাহাজটি ১২ দিনে বাংলাদেশের সুন্দরবন এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকা অতিক্রম করবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দুই দেশের মধ্যে যাত্রী ও পর্যটকবাহী জাহাজ চালুর বিষয়ে অক্টোবরে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত সচিব পর্যায়ের বৈঠকে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) স্বাক্ষরিত হয়। দুই দেশের নৌ প্রটোকল রুট ও উপকূলীয় এলাকায় জাহাজ চলাচলের সুযোগ তৈরি হওয়ায় ভারতীয় অপারেটর আর ভি বেঙ্গল গঙ্গা নামের একটি অপারেটর ১৭ দিনের ভ্রমণ পরিকল্পনা করেছে। এ পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী ২৯ মার্চ পর্যটকবাহী একটি জাহাজ কলকাতা থেকে যাত্রা শুরু করে ১ এপ্রিল বাংলাদেশের মোংলা বন্দরে আসবে। এরপর জাহাজটি পিরোজপুর, স্বরূপকাঠি, বরিশাল, চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ হয়ে ঢাকা নদীবন্দরে (সদরঘাট) আসবে। ঢাকা থেকে জাহাজটি মুন্সীগঞ্জ, মাওয়া, আরিচা, সিরাজগঞ্জ হয়ে কুড়িগ্রামের চিলমারী বন্দরে যাবে। সেখানে ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসের আনুষ্ঠানিকতা শেষে আসামের গৌহাটির উদ্দেশে রওনা হবে।
জানা গেছে, নৌ-প্রটোকল চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ১৯৭২ সাল থেকে পণ্য পরিবহন করা হচ্ছে। তবে এতদিন যাত্রীবাহী কোনো জাহাজ চলাচল করেনি। গত বছর এসওপি স্বাক্ষরের পর যাত্রী ও পর্যটকবাহী জাহাজ চালুর সুযোগ তৈরি হয়।
পর্যটকবাহী জাহাজ চালুর বিষয়ে বাংলাদেশের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক (বন্দর) মো. শফিকুল হক জানান, দুই দেশের মধ্যে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রবেশের পথ মোংলা অথবা আংটিহারা (খুলনা) হবে। এ দুই বন্দরে পণ্যবাহী জাহাজের কাস্টমস সুবিধা রয়েছে। এখন সেখানে পর্যটকদের জন্য ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। জাহাজ চিলমারী উপজেলার ধুবড়ি পোর্ট হয়ে আসামে প্রবেশ করবে। সেখানে একই ধরনের সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। তিনি জানান, এ জাহাজের কোনো পর্যটক বাংলাদেশের মাটিতে নামবেন না। তারা জাহাজে অবস্থান করে বাংলাদেশের নৈসর্গিক শোভা অবলোকন করবেন।
পর্যটকবাহী জাহাজ চালু করতে ভারতীয় ট্যুর অপারেটর এগিয়ে এলেও পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশি অপারেটরা। এ বিষয়ে বাংলাদেশের লঞ্চ মালিক সমিতির সহসভাপতি শহীদুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, বাংলাদেশে অনেক বড় বড় যাত্রীবাহী জাহাজ রয়েছে। তবে পর্যটক নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলাচলের সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন জাহাজ নেই। ব্যক্তিগতভাবে এ ধরনের একটি জাহাজ নির্মাণ করার উদ্যোগ নিয়েছি। পর্যটকবাহী জাহাজের চলাচল শুরু হলে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরাও এগিয়ে আসবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।