ডেস্ক রিপোর্ট :
সমুদ্রের গভীরে লুকিয়ে আছে নানা রহস্য। তার বিশাল অংশই এখনো আমাদের অজানা। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা প্রশান্ত মহাসাগরের তলদেশে বসবাসকারী ৫ হাজারেরও বেশি নতুন প্রজাতির জীবের সন্ধান পেয়েছেন। সমুদ্রের গভীরে এই অঞ্চলটিকে ভবিষ্যতের হটস্পট হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ক্লারিওন-ক্লিপারটন জোন (সিসিজেড) নামে পরিচিত অঞ্চলটি পূর্বে অজানা ছিলো। প্রশান্ত মহাসাগরের হাওয়াই এবং মেক্সিকোর মধ্যে ১.৭ মি বর্গ মাইল বিস্তৃত সমুদ্রের তলদেশের এই অঞ্চলটি তার জীববৈচিত্র্যর জন্য বিজ্ঞানীদের নজরে এসেছে। গবেষণাটি প্রজাতির বিলুপ্তির ঝুঁকি মূল্যায়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। মাংসাশী স্পঞ্জ এবং সামুদ্রিক শসা বাদে এখানে যে প্রাণীগুলির হদিশ মিলেছে সেগুলির বেশিরভাগই অজানা।
এছাড়াও খনিজসম্পদে ভরপুর এলাকাটিতে নজর পড়েছে যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন সহ বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলোর। এখানে কোবাল্ট, ম্যাঙ্গানিজ, নিকেলের অস্বিত্ব রয়েছে। জুলাই মাসে গভীর সমুদ্রের খনির নিয়ন্ত্রণকারী ইন্টারন্যাশনাল সিবেড অথরিটি, (জ্যামাইকা ভিত্তিক জাতিসংঘের সংস্থা) বিভিন্ন কোম্পানিগুলি থেকে খনিজ শোষণের আবেদন গ্রহণ করা শুরু করবে।
এই অঞ্চলে খনিজ অভিযানের জেরে ইকোসিস্টেমে কোনো প্রভাব পড়বে কিনা জানতে বিজ্ঞানীদের একটি আন্তর্জাতিক দল এই অঞ্চলে অভিযান থেকে সমস্ত রেকর্ড সংকলন করে।
সেখান থেকেই জানা গেছে এখানে ৫৫৭৮টি বিভিন্ন প্রজাতি রয়েছে, যার মধ্যে আনুমানিক ৮৮% থেকে ৯২% আগে কখনও দেখা যায়নি। কারেন্ট বায়োলজি জার্নালে গোটা বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে। ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের (NHM) গভীর সমুদ্রের পরিবেশ নিয়ে চর্চাকারী মুরিয়েল রাবোন যিনি এই গবেষণার প্রধান লেখক জানাচ্ছেন- ”আমরা আমাদের গ্রহটিকে এই সমস্ত আশ্চর্যজনক জীববৈচিত্র্যের সাথে ভাগ করে নিয়েছি এবং এটিকে বোঝার ও রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের।” সমুদ্রের তল থেকে নমুনাগুলি অধ্যয়ন এবং সংগ্রহ করার জন্য, জীববিজ্ঞানীরা প্রশান্ত মহাসাগরের ৪ হাজার থেকে ৬ হাজার মিটার গভীরে যান পাঠিয়েছিলেন।
ন্যাচারাল এনভায়রনমেন্ট রিসার্চ কাউন্সিল এবং অন্যান্যদের মাধ্যমে অর্থায়ন করা এই অভিযানটি ইউকে সিবেড রিসোর্সেস (ইউকেএসআর) দ্বারা সমর্থিত। বিজ্ঞানীরা নৌকা থেকে সরাসরি ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে অপারেশনগুলি দেখেন, কারণ নীচের অন্ধকারে দূরবর্তী অপারেটিং যানবাহন দ্বারা নতুন প্রজাতি সংগ্রহ করা হয়। জীববিজ্ঞানী ডঃ অ্যাড্রিয়ান গ্লোভারের মতে, ”সমুদ্রতল একটি আশ্চর্যজনক জায়গা যেখানে চরম ঠান্ডা এবং অন্ধকার থাকা সত্ত্বেও জীবন বিকশিত হয়। অতল পানিতে খাদ্যের অভাব, কিন্তু সেখানেও জীবন টিকে রয়েছে, এটি অদ্ভুত এক রহস্য।”