পাবনা প্রতিনিধি :
পাবনার সুজানগরে দেশীয় হস্তশিল্প মেলায় র্যাফেল ড্রয়ের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারক চক্র। মাত্র ২০ টাকায় মোটর সাইকেল, রেফ্রিজারেটর, স্বর্ণালংকারসহ নানা লোভনীয় পণ্যের প্রচারণায় চলছে টিকিট বিক্রি।
লোভে পড়ে দরিদ্র ও সাধারণ মানুষ প্রতারিত হলেও আয়োজকদের দাবি প্রশাসনের অনুমতিতেই চলছে এই লটারীর নামে মানুষ ঠকানোর খেলা। কেবল সুজানগরই নয়, আমিনপুর থানা পুলিশের অনুমতি নিয়ে এ্কই উপজেলার আহমেদপুর ইউনিয়নের চরগোবিন্দপুরেও চলছে এই অভিনব জুয়া।প্রায় দুইমাস ধরে কেবল টিভিতে সরাসরি সম্প্রচারে লটারীর ড্র হলেও এসব ব্যপারে নির্বিকার প্রশাসন।
স্থানীয়রা জানান, জেলা প্রশাসনের অনুমোদন নিয়ে সুজানগর পৌরসভার পরিত্যক্ত বাসস্ট্যাণ্ডে মাসব্যাপী দেশীয় হস্তশিল্প ও বৈশাখী মেলা চলছে।
গত পহেলা বৈশাখে স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিনুজ্জামান শাহিন ও পৌর মেয়র আব্দুল ওয়াহাবসহ স্থানীয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ এই মেলার উদ্বোধন করেন। মেলায় স্থান পেয়েছে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের হস্তশিল্প ও কসমেটিকস স্টল, শিশুদের খেলার জন্য নানা রাইডস এবং দৈনিক র্যাফেল ড্র।
প্রতিদিন আড়াই শত সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও ভ্যানে মাইকিং করে সুজানগর ছাড়াও পার্শ্ববর্তী পাবনা সদর, আটঘরিয়া, চাটমোহর, সাঁথিয়া ও বেড়া উপজেলায় এই র্যাফেল ড্রয়ের টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত টিকিট বিক্রি শেষে রাত ৯টার পর র্যাফেল ড্রয়ের পুরস্কার কার্যক্রম স্থানীয় ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্কে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।
সম্প্রতি, সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিদিন ৫টি মোটরসাইকেল পুরস্কারের কথা বলে র্যাফেল ড্রয়ের টিকিট বিক্রি করছেন মামুন নামের এক ব্যক্তি।
তিনি জানান, র্যাফেল ড্রয়ে মানুষকে আগ্রহী করতেই মোটরসাইকেল, স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল ফোন পুরস্কার রাখার কথা বলা হচ্ছে।
দুলাই বাজারে অটোভ্যানে ভ্রাম্যমান এক টিকিট বিক্রেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মেলার শুরুতে প্রথম দিনেই তিনি প্রায় এক হাজার টিকিট বিক্রি করেছেন। যতই দিন যাচ্ছে টিকিট বিক্রি বাড়ছে।
সাঁথিয়া উপজেলার আড়িয়াডাঙ্গি গ্রামের গৃহবধু জোসনা খাতুন আক্ষেপের সাথে বলেন, স্বর্ণের গহনার লোভে তিনটি হাঁস বিক্রি করে টিকিট কেটেছিলাম, অথচ আমার কপালে গহনা তো দূরে থাক কিছুই জোটে নি।
নগরবাড়ী ঘাট এলাকার ব্যবসায়ী রতন মিয়া জানান, তার দোকানের পাঁচ কর্মচারী নিয়মিতই র্যাফেল ড্রয়ের টিকিট কিনছে। একেক জন ১০ থেকে ১৫টা পর্যন্ত টিকিট কিনলেও এখন পর্যন্ত কোনও পুরস্কার পায়নি। র্যাফেল ড্রয়ের নামে এটি জুয়া ছাড়া আর কিছুই না। গত দেড়মাস ধরে বেড়া সিএন্ডবি মোড়েও এই ব্যবসা চলে, আবার সুজানগরেও শুরু হয়েছে। প্রতিদিন কোটি টাকা টিকিট বিক্রি হলেও ভ্যাট ট্যাক্স কিছুই দিতে হয় না।
বেড়া উপজেলার কাজিরহাটের এক হোটেল কর্মচারী ওয়াসিম জানান, তিনি প্রতিদিন হোটেলে কাজ করে ৪ শ’ টাকা পান। এই টাকা থেকে প্রতিদিনই ১০ থেকে ১২টা টিকিট কিনছেন। মোটরসাইকেলের আশায় তিনি টিকিট কিনছেন বলে জানান।
মেলার আয়োজক সুজানগর উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিনুজ্জামান শাহিন বলেন, জেলা প্রশাসনের অনুমোদন নিয়েই মেলা চালানো হচ্ছে।র্যাফেল ড্র সীমিত আকারে চলছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘এটি কোনোভাবেই জুয়ার মধ্যে পরে না।
পাবনার পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, সুজানগর উপজেলা ছাড়া আর কোথাও কোন র্যাফেল ড্র চলছে না। চরগোবিন্দপুর বাজারে চলার কথা শুনে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করে দেয়।
পাবনা জেলা প্রশাসক মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন, জুয়া, অশ্লীল নৃত্য পরিবেশনে নিষেধাজ্ঞাসহ কয়েকটি শর্ত সাপেক্ষে সুজানগরে দেশীয় হস্তশিল্প মেলার জন্য এক মাসের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। শর্ত বহির্ভূত কাজ করা হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।