জাহিদুর রহমান তারিক,ঝিনাইদহঃ
ঝিনাইদহ জেলার ওপর দিয়ে যাওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক। এই সড়ক দিয়ে প্রায় দিনই চলাচল করে সরকারের সবচেয়ে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং জনপ্রতিনিধিরা। এই সড়কের ওপর প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে ট্রাক ঘন্টার পর ঘন্টা পাকিং করা থাকে। এতে করে সাধারণ মানুষ এবং যানবাহন চলাচলে মারাত্বক ঝুঁকি বলে জানান চলাচলকারীরা। এই সমস্যা দেখেও না দেখার ভান করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ঝিনাইদহের বাস টার্মিনাল থেকে শুরু করে আরাপপুর, তেতুঁলতলা বাজারে রাস্তার ওপর ট্রাক রেখে ধান লোড-আন লোড করা হচ্ছে প্রতিদিন। এদিকে বিষয়খালী বাজারেরও একই অবস্থা। আবার আরেকটু সামনের দিকে গেলে দেখা যাবে খড়িখালী ইয়াফাদ ফিলিং ষ্টেশন এলাকায় এপাশ ওপাশে দূ’পাশে শতশত গাড়ি বিনা কারণে রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে থাকে।
সরোজমিনে কথা হয় রাস্তার উপর ট্রাক রাখা একটি ট্রাক চালক জুয়েলসহ আরো অন্যান্য চালকের সাথে। তারা জানায়, আমরা রাজশাহী থেকে আসছি এই গরমে রাস্তার পিচ অনেক গরম এ জন্য ট্রাকের টায়ারও গরম হয়ে গেছে। তাই টায়ার ঠান্ডা করার জন্য রাস্তার ওপরই গাড়ি রাখছি। তার মতো আরো অনেক ড্রাইভার মহাসড়কের উপর গাড়ি রেখে টায়ার ঠান্ডা করতে দেখা যায়। তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হয় কেন তারা টার্মিনাল বা ফিলিং ষ্টেশনে গাড়ি না রেখে সড়ককের ওপর গাড়ি রেখে টায়ার ঠান্ডা করছেন? এর কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি তাদের কাছ থেকে। ব্যস্ততম এই সড়কের ওপর গাড়ি রাখার কারনে যে কোন মুহুর্তে ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। ঝিনাইদহের বাস টার্মিনাল থেকে শুরু করে আরাপপুর, তেতুঁলতলা বাজারে রাস্তার ওপর গাড়ি রেখে কলা লোড অনলোড করা হয়। তাছাড়া অন্যান্য দিনও এখানে গাড়ি রেখে কাঠ ব্যবসায়ীরা কাঠের গুড়ি লোড অনলোড করে থাকে। হামদহ ট্রাক টার্মিনাল নামক স্থানে রাস্তার পাশে বালু বেঁচাকেনার হাট এই বালু ট্রাকে লোড অনলোড করার সময় ট্রাক রাস্তার ওপর অবৈধ্ পাকিং করে বালু লোড আন লোড করা হয়। অনেক সময় পাকশি থেকে ট্রাক ভর্তি বালু রাস্তার ওপরই রেখে ক্রেতার জন্য অপেক্ষা করে দিনের পর দিন। সরেজমিনে দেখা যায় কোথাও কোথাও সড়কের সাইড লাইন দখল করে অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে পার্কিং স্ট্যান্ড। এতে ব্যস্ততম এ সড়ক সংকুচিত হয়ে যান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টির পাশাপাশি বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। মহাসড়কের পাশে অবৈধ পার্কিং এবং দখলের ফলে জেলার গুরুত্বপূর্ন অংশে প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঝুঁকি নিয়ে চলছে হাজারো যানবাহন। এদিকে আসন্ন ঈদ ও দুর্ঘটনা ঝুঁকি বিবেচনায় মহাসড়কের পাশে গড়ে ওঠা অবৈধ এ ট্রাক টার্মিনাল উচ্ছেদ না হওয়াকে প্রশাসনের দুর্বলতা হিসেবে দেখছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে দূরদুরান্ত থেকে আসা শতশত কাভার্ড ভ্যান, ট্রাক ও কন্টেইনার ট্রাক মহাসড়কের সাইড লাইন দখল করে দাঁড়ালেও কেউ কোন প্রতিবাদ করেন না। আর এ কারণে এ সব স্থানে অবৈধভাবে ট্রাক সহ অন্যান্য যানবাহন পার্কিং করা হচ্ছে। এই মহাসড়কের দু’পাশে প্রায় ৩০ কিলোমিটারেও বেশী অবৈধ পার্কিংয়ের দখলে। অন্য যানবাহনের চালক বা পথচারী এনিয়ে কিছু বলতে গেলে উল্টো তাদেরকে নাজেহাল হতে হয়ে অবৈধ পাকিংকারীদের কাছে। এদিকে অবৈধ এ পার্কিংয়ের সুযোগে এক শ্রেণির লোক এসব গাড়ি থেকে প্রতিদিন টাকা আদায় করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সড়কের পাশে এমন অবৈধ পার্কিংয়ের বিষয়ে ঝিনাইদহের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর জনাব সালাউদ্দিন ও বারোবাজার হাইওয়ে থানার ওসি মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, এর আগে বহুবার অবৈধভাবে পার্কিং করা এসব ট্রাক ও অনান্য যান সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন এসব বাজারে রাস্তার পাশে ট্রাক রেখে লোড করেছে এমন খবর পেয়ে বেশ কয়েকবার আমরা সেখানে যেয়ে ট্রাক সরিয়ে দিয়েছি। এসব জায়গায় রাস্তার ওপরে যাতে ট্রাক না রাখে আমি দ্রুত সে ব্যবস্থা করছি। তিনি আরো বলেন, আমরা প্রতিদিন নিরলসভাবে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাইওয়ে পুলিশ এসব যানবাহন সরিয়ে নিতে চালকদের সতর্ক করছি। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।