
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :
ঝিনাইদহ সদর উপজলার উত্তর নারায়নপুর গ্রামের ডা. খাদেমুল হকের ছেলে মেহেদী হাসান বাবুর বাড়ীতে স্ত্রীর স্বীকৃিতির দাবিতে রোকছানা খাতুন ও তার মেয়ে মারিয়া (৯) নিয়ে শুক্রবার থেকে অবস্থান করছে। রোকছানার দাবি, তাদের প্রথম বিয়ে ২০০৯ সালের পরই তার পেটে বাচ্চা থাকা অবস্থায় বাবু তাকে ডিভোর্স দিতে চাপ দেয়। এক পর্যায়ে চাপের মুখে অসুস্থ অবস্থায় ডিভোর্স পেপারে স্বাক্ষর করে নেয়। এর পর বাচ্চা হবার পর আবারও প্রেমের সম্পর্ক হলে ২৫শ ডিসেম্বর ২০১১ সালে বিবাহ হয়। এরপর শুরু হয় নতুন কাহিনী। এই কাহিনীর মূলে রয়েছে ইউপি সদস্য সাগরি খাতুন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বাবুর বাড়িতে বাহিরের গেটে ও বাড়ির ভিতরের গেটে তালা দেওয়া। সেখানে তাদেরকে ডাকাডাকি করলে বাড়ির ভাড়াটিয়া পপি এগিয়ে আসে। তার কাছ রোকছানার কথা জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আমরা এই বাড়িত ভাড়া থাকি। গত শুক্রবার এই মহিলা তার সন্তান নিয়ে এই বাড়িতে এসছে। আর বাড়িতে তালা মারার কথা বলেন, এই বাড়ির মালিক ও মহিলা মেম্বার ঘরের গেট ও বাইরে তালা মেরে রেখে গেছে। এ ব্যাপারে রোকছানার কাছ জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, আমাদর প্রথম প্রেমের সম্পর্ক ছিল।কিন্তু বাবা- মা আমাকে জোর করে বাড়ি থেকে অন্য জায়গায় বিবাহ দেয়। তারপরও বাবু আমাকে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে বলে এই স্বামীকে বাদ দিয়ে বাবুকে বিবাহ করতে হবে। এক পর্যায়ে আমি তাকে ডিভোর্স দিয়ে বাবুকে বিবাহ করি। তখন আমার ও তার বাড়ি থেকে কেউ মেনে নেয়না। এরপর সে আমাকে বাড়িতে না নিয়ে ঝিনাইদহ শহরে ভাড়া বাড়িতে রাখে। আমি বাড়ি যাবার কথা বললে সে বলে, আমার বাবা মারা যাবার পর আমার মা আবার বিবাহ করেছে। তার আলাদা সংসার আছে। আমি যদি তোমাকে এখন বাড়িতে নিয়ে যাই তাহলে আমার মা বাড়ির জমি জায়গা সব আমার বোনদের ও আমার মায়ের নামে নিয়ে নিবে। এই সমস্যা দেখিয়ে সে আমাকে তখন বাড়িতে নেয়নি। এরপর আমার পেটে যখন বাচ্চা আসল তখন তার সাথে নতুন করে বিবাদ শুরু হয়। তখন ওর বাড়ির লোক আমি অসুস্থ থাকা অবস্থায় আমাকে দিয়ে ডিভোর্স পেপারে সই করিয়ে নেয়। তখন আমার পরিবার তাদের বিরুদ্ধ মামলা করে। সে মামলায় সে জেলও খেটেছে। এরপর আমার বাচ্চা হয়। আমার বাচ্চা হবার পর সে আবার আমাকে ফোনদিয়ে আমার সাথে যোগাযোগ করে এবং বলে আমি আমার মায়ের কারণে তোমাকে ভুল বুঝেছি। মায়ের কারণে আমি জেলও খেটেছি। আমাকে মাফ কর দাও। এরপর আবার ২৫শে ডিসেম্বর ২০১১ সালে বিবাহ করি। এরপর থেকে আমাদেরকে ঝিনাইদহ শহর বাসা ভাড়া করে রাখে এবং মাঝে আমার বড় আপার বাড়িতেও থাকি। এর মধ্যে সমস্ত নাটের গুরু ওই মহিলা মেম্রো সাগরি।সে চায় না আমরা সুখ শান্তিতে সংসার করি। সে সবসময় আমার বিরুদ্ধে কটূকথা বলে বেড়ায়। আমি আমার স্বামীর অধিকার ফিরে পেতে চাই এবং আমার সন্তান তার বাবাকে ফিরে পেতে চায়। আপনারা আমাকে দয়া করুন।
রোকছানার বড় বোন জানান, রোকছানার সাথে বাবুর বিবাহ হবার পর তার পেটে বাচ্চা আসে। কিছুদিন পর জানিনা কী কারণে কৌশলে ওর কাছ থেকে ডিভোর্স নিয়ে নেয়। এর পর কোর্টে মামলা করে আমার ভাইয়ারা। তারপর এই সন্তান হলে বাবু আবার তার সাথে যোগাযোগ করে রোকছানাকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে যায় । তখন আমি গ্রামের লোকজনদের ফোন দিলে তারা যায়, সবাই উপস্থিত থেকে বাবুর সাথে আবার ২০১১সালে বিয়ে হয়। আর এখন বাবু আমার বোন ও তার সন্তানকে অস্বীকার করছে। এর একটা সুষ্ঠু বিচার চাই।
এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য সাগরি খাতুনের কাছে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, এই মেয়েটা বাবুকে স্বামী দাবি করছে। কিন্তু তখন আমরা বলি, তাহলে তোমার কাবিননামা দেখাও। তখন সে কাবিন নামা দেখাতে পারেনি। তবে সে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
বাবুর চাচা মতিয়ার রহমান জানান, আমার ভাতিজার সাথে এই মেয়ের একবার বিবাহ হয়। তখন তাকে ডিভোর্স দিয়ে দেয় এবং ৩লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে মীমাংসা করা হয়। গত শুক্রবার এই মেয়ে তার সন্তান নিয়ে এসে দাবি করছে বাবু তার স্বামী এবং এই বাচ্চাটি বাবুর। আসলে আমরা এর কিছুই জানিনা। এখন সে ২০১১ সালের বিবাহের কাবিননামা দেখাচ্ছে । এ নিয়ে কোর্টে মামলা চলমান আছে,যার প্রমাণ রয়েছে। তবে কাগজ পত্র দেখানোর কথা বলে সেগুলো সে আর দেখাতে পারে নি।
এদিকে এলাকাবাসী এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন, তাদের দাবি এই শিশু সন্তানের দিকে তাকিয়ে এর একটা সুরাহা হোক।