শনিবার(১৪ নভেম্বর) দুপুরে নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার চিলাহাটিতে ভারত-বাংলাদেশ রেল লাইন সংযোগ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ পরিদর্শন শেষে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
এ সময় রেলপথমন্ত্রী আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতুর তিনশ’ মিটার উত্তরে যমুনা নদীর উপর দেশের সবচেয়ে বড় রেল সেতু তৈরি করা হবে। ১৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে আগামী ২৯ নভেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সেটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। সেটির নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হবে ২০২৫ সালের আগস্ট মাসে। দেশের দ্বিতীয় ওই রেল সেতু হবে ডুয়েল গেজ ও ডাবল লাইন যেটি দিয়ে একশ’ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করবে। এটি বাস্তবায়িত হলে দেশের পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগ আরও সহজ হবে ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার আরও উন্নয়ন ঘটবে।বর্তমানে যমুনা নদীর উপর যে সেতুটি রয়েছে সেটি সিঙ্গেল লাইনের। তাতে ১০ থেকে ১২ কিলোমিটারের বেশি গতিতে ট্রেন চালানো যায় না। ফলে অনেক সময় নষ্ট হয়। ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় হয়।তাই নতুন রেল সেতুতে ডাবল লাইন রাখা হয়েছে। সেইসঙ্গে দুই দিক থেকে ট্রেন চলাচল করতে পারবে। আগামী ২০৪৫ সালের মধ্যে বৈদ্যুতিক রেল ইঞ্জিন দিয়ে রেল চলবে। পৃথিবীর উন্নতমানের আধুনিক ট্রেন চালু করা হবে দেশে।
রেলমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের পর্যটক বর্তমানে স্থলপথের বাংলাবান্ধা-হিলি কিংবা বুড়িমারী দিয়ে ভারত নেপাল-ভুটানে যায়। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ সংস্থা (বিআরটিসি) বাস ভারতের কলকাতা ও আগরতলা, বুড়িমারী ও বাংলাবান্ধা পর্যন্ত স্থলপথে সংযোগ চালু করেছে। আকাশপথে ভারতের কলকাতা মুম্বাই-চেন্নাই-ব্যাঙ্গালুর ফ্লাইট চালু আছে। যাত্রীরা সাধারণত রেল ভ্রমণে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। রেলপথে ঢাকা ও খুলনা থেকে কলকাতার সরাসরি সংযোগ আছে রেলের।
তিনি বলেন, চিলাহাটি-হলদীবাড়ি ইন্টারচেঞ্জ লিংক চালু হলে বন্ধুপ্রতীম দুই দেশের মধ্যে উন্নয়নের দুয়ার আরও একধাপ খুলে যাবে। এতে লাভবান হবে উভয় দেশ।চিলাহাটি দিয়ে ট্রেন ভারতে ঢুকে প্রথমেই হলদিবাড়ি স্টেশন। তার পরে জলপাইগুড়ি টাউন স্টেশন হয়ে শিলিগুড়ি (এনজেপি) যাবে ওই ট্রেন।ভারতের রেল যোগাযোগের এটিই প্রধান পথ ছিল। সেই রেল যোগাযোগটি ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের সময় বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে যে সোনালি অধ্যায়ের সূচনা করেছে তারই ফলে এই রেলপথ পুনরায় চালু হতে যাচ্ছে।
এর আগে রেলমন্ত্রী চিলাহাটি রেল স্টেশন এলাকায় চিলাহাটি আন্তর্জাতিক রেলস্টেশন নির্মাণ কাজের ভিত্তি স্থাপন শেষে রেলের গ্যাং কার যোগে চিলাহাটি-হলদিবাড়ি সীমান্তের জিরো রেখা পর্যন্ত যান।এরপর দুই দেশের সীমান্তের জিরো রেখায় দীপাবলী উপলক্ষে ফুলের তোরা ও মিষ্টি দিয়ে মন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) পক্ষে এসি সিদ্ধার্থ। তারপর দুপুরের দিকে তিনি সেখান থেকে চিলাহাটি স্টেশনে ফিরে আসেন।সে সময়ে উচ্ছেদ হওয়া রেলের জায়গায় বসবাসকারী ৭৮টি পরিবার তাদের পুনর্বাসনের দাবিতে সীমান্তের জিরো পয়েন্টে অবস্থান নেন। মন্ত্রী তাদের প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ প্রদানের আশ্বাস দেন।
এসময় অন্যান্যদের মধ্যে নীলফামারী জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরী, ৫৬ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্ণেল মামুনুল হক, পশ্চিমাঞ্চল রেলের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক সহিদুল ইসলাম, ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনা শবনম, বিভাগীয় পরিবহণ কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন, সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান উদ্দিন, রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আব্দুর রহীম, নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান উদ্দিন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাসট্রাকচার লিমিটেডের প্রকল্প পরিচালক মো. রোকনুজ্জামান সিহাব উপস্থিত ছিলেন।