মাহতাব উদ্দিন আল মাহমুদ,ঘোড়াঘাট(দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ
দেশ জুড়ে নতুন আতঙ্কের নাম রাসেলস্ ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপের কামড়ের আ’তঙ্ক। ঘোড়াঘাটে ২০ ভায়াল এন্টিভেনাম মজুদ, চাহিদা ৪০ ভায়াল। মৃত্যু কিছুটা নিশ্চিত। তবে নির্দিষ্ট সময়ে এন্টিভেনাম প্রয়োগ করা গেলে বেঁচে যাওয়া সম্ভব। অন্য সময় সাপে কাটা রোগী উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে গেলে মিলত না এন্টিভেনাম। তবে আতঙ্কের মাঝে আশার বাণী শুনিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ সামন্ত লাল সেন। সারা দেশের জেলা-পর্যায়ের হাসপাতালে এন্টিভেনাম আছে এবং চাহিদা অনুযায়ী আরো সরবরাহ করা হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী।
মন্ত্রীর কথা অনুযায়ী দিনাজপুর জেলার প্রত্যন্ত উপজেলা ঘোড়াঘাটে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মজুদ আছে ২০ ভায়াল এন্টিভেনাম। জেলা সদর থেকে প্রায় ৯৯ কিলোমিটার দূরত্বের এই উপজেলায় এন্টিভেনাম এসেছে এখন থেকে প্রায় ১ বছর আগে। নতুন করে আরো ২০ ভায়াল এন্টিভেনামের চাহিদা দেওয়া হয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে।
দিনাজপুর জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য বলছে, পুরো জেলায় সাপের এনিটভেনাম মজুদ আছে ৭৫৬ ভেনাম। এর মধ্যে ঘোড়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০, চিরিরবন্দরে ১০, পার্বতীপুরে ১৮, ফুলবাড়িতে ১৮, বিরামপুরে ১৬, নবাবগঞ্জে ১৪, বোচাগঞ্জে ২০, হাকিমপুরে ১০, কাহারোলে ২২, খানসামায় ২০, বীরগঞ্জে ১৬ এবং বিরল উপজেলায় ২২ ভায়াল মজুদ আছে। এছাড়াও দিনাজপুর এম. আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫০০ এবং জেনারেল হাসপাতালে ৪০ ভেনাম মজুদ রয়েছে। গত ২৩ জুন আরো ৫০০ ভায়ালের চাহিদা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন দিনাজপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ এ এইচ এম বোরহান-উল-ইসলাম সিদ্দিকী।
তবে প্রশ্ন আছে উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে এসব এন্টিভেনাম সংরক্ষণ এবং রোগীর শরীরে প্রয়োগ নিয়ে। কেননা নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় এসব এন্টিভেনাম সংরক্ষণ করতে হয়। পাশাপাশি সাপে কাটা রোগীর শরীরে এন্টিভেনামের ডোজ তৈরি করে তা প্রয়োগ করা অনেক চিকিৎসকের কাছে কঠিন ও সময় সাপেক্ষ বিষয় বলে মনে হয়। তাই অনেক ক্ষেত্রে উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে থাকা চিকিৎসকরা সাপে কাটা রোগীকে জেলা বা বিভাগীয় শহরের হাসপাতালে স্থানান্তর করে বলে অনেকের অভিযোগ রয়েছে।
ঘোড়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, নির্দিষ্ট ফ্রিজিং ব্যবস্থায় ৪-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এসব এন্টিভেনাম সংরক্ষণ করা হয়েছে। মজুদ থাকা ২০ ভায়াল এন্টিভেনামের মেয়াদ রয়েছে ২০২৫ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত।
ঘোড়াঘাট উপজেলার প্রাক্তন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা তৌহিদুল আনোয়ার বলেন, ‘এন্টিভেনাম মজুদ থাকা অবস্থায় কোন অজুহাতে রোগীর শরীরে প্রয়োগ না করার সুযোগ নেই। তবে রোগীর শরীরে এন্টিভেনাম প্রয়োগ করা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। ১০টি ভায়াল থেকে একটি ডোজ তৈরি করতে এবং সময় নিয়ে রোগীর শরীরে তার প্রয়োগ করতে ১ থেকে দেড় ঘন্টা সময় লেগে যায়। এভাবে রোগীর অবস্থা অনুযায়ী ৪০ ভায়াল পর্যন্ত প্রয়োগ করা যায়। তবে এন্টিভেনাম প্রয়োগ খুবই স্বাভাবিক ও সহজ বিষয়। এন্টিভেনাম প্রয়োগে প্রতি ৫ লাখে ১ জন রোগীর শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়।’