ব্যাংক ঋণ মওকুফ চায় কৃষকরা
মো. আক্তার হোসেন, বিশেষ প্রতিনিধি>>
ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে টানা তিন দিনের ভারী বর্ষণে কুমিল্লার হোমনায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে বোরো বীজতলা, আলু, সবজি ও রবি ফসল। এতে ভেঙে গেছে কৃষকের স্বপ্নও। ফসল ফলাতে ঋণগ্রস্ত হয়েছেন অনেক কৃষক। ব্যাংকের সেই ঋণ পরিশোধের চিন্তায় এখন দিশেহারা। ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারের কাছে ঋণ মওকুফ চায় তারা।
জাতীয় পুরষ্কারপ্রাপ্ত কৃষক লাল মিয়ার বোরো ৯২ ধানের বীজতলা তিন ফুট পানির নিচে। চল্লিশ বিঘা আলুও তলিয়ে গেছে তার। সারাদিন কোদাল কাঁধে নিয়ে ঘুরেও পানি নিষ্কাশনের কোনো গতি পান না। এ ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে সরকারের কাছে চেয়েছেন প্রণোদনা।
তার মতো শিক্ষিত যুবক আনোয়ারের ষাট বিঘা আলু বীজতলাও পানিতে থৈ থৈ। চাষী ইয়াসিন, শহিদ মিয়া, লাখ মিয়া, কামাল মিয়া, আবদুল ওয়াহাব, রফিকুল ইসলাম, সাত্তারসহ আরো অনেক কৃষকই তাদের ঘামে রোপিত স্বপ্নের ফসল হারানের শঙ্কায় এখন দিশেহারা।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এ মৌসুমে ১৯০ হেক্টর বোরো বীজতলাসহ ২ হাজার ৮৯৩ হেক্টর ফসলী জমি আবাদ করা হয়েছিল। এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে টানা বর্ষণে ১শ’ হেক্টর বোরো বীজতলাসহ ১ হাজার ৪৮৭ হেক্টর জমির ফসল ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হয়েছে। এখনও ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। তবে, বোরো ধানের বীজতলা ১৯০ হেক্টরের মধ্যে ১শ হেক্টর, গম ১৬৭ হেক্টরের ৯৫ হেক্টর, ভ‚ট্টা ৯৫ হেক্টরের ৪০ হেক্টর, সবজি ৫৬০ হেক্টরের ২৩৫ হেক্টর, আলু ২২০ হেক্টরের ১০৫ হেক্টর, মিষ্টি আলু ৫০ হেক্টরের ২৫ হেক্টর, সরিষা ৪২০ হেক্টরের ২৩০ হেক্টর, বাদাম ৬৫ হেক্টরের ৩০ হেক্টর, মসুর ২০৫ হেক্টরের ১১০ হেক্টর, মটর ১৫ হেক্টরের ৫ হেক্টর, মুগ ৪ হেক্টরের ২ হেক্টর, পেঁয়াজ ৩৫ হেক্টরের ২০ হেক্টর, রসুন ৮৫ হেক্টরের ৪০ হেক্টর, ধনিয়া ২৫০ হেক্টরের ১৩০ হেক্টর, মরিচ ২৬৯ হেক্টরের ১৮০ হেক্টর, খিরা ৩৫ হেক্টরের ২০ হেক্টর, বাঙ্গি ৪৫ হেক্টরের ৩০ হেক্টর, সূর্যমূখী ৮ হেক্টরের ৫ হেক্টর, আখ ৪০ হেক্টরের ১০ হেক্টর ফসলী জমি ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হয়েছে।
কৃষক লাল মিয়া বলেন,‘ধান বীজতলার তিন ফুট পানি নিমু কই, নেওয়ার ব্যবস্থা নাই। পাঁচ একর ধানের বীজতলা আর চল্লিশ বিঘা আলু শেষ হইয়া গেছেগা। সকাল সাতটায় কোঁদাল লইয়া জমিতে আইছি। কেমনে পানি নামামু। সরকার যেন প্রণোদনা ও বীজ দেয়।’
কোম্পানির চাকুরি ছেড়ে নিজের অর্জিত অর্থ আর বিএডিসির সহায়তায় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কৃষিকাজে আত্মনিয়োগ করেছিলেন আনোয়ার হোসেন। উপজেলার ঘাগুটিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ চুনারচর (নয়াগাঁও) গ্রামের এই যুবক বিএডিসির সঙ্গে চু্ক্তিবদ্ধ হয়ে আরও কয়েকজন চাষীকে নিয়ে বীজ আলু উৎপাদনে ৬০ বিঘা জামি আবাদ করেছেন।
তিনি বলেন,‘বিএডিসির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ঘাগুটিয়া ইউনিয়নের দূর্গাপুর ব্লকে বীজ আলু উৎপাদন করতে ৬০ বিঘা জমি চাষ করেছি। সার, কীটনাশক, শ্রমিক ও পরিচর্যা বাবদ ব্যাংক থেকে ৯ লাখ টাকা ঋণ এবং নিজের আরও ৫ লাখ টাকা লগ্নি করেছি। আরও টাকা লাগবে। এখন দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে সব বীজতলা তলিয়ে সর্বনাশ হয়ে গেছে। পানিতে আলু টেকে না। এতে আমাদের বিরাট লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে। আল্লাহ জানেন, ঋণের বোঝা সইবো কীভাবে। ক্ষতি কাটিয়ে বাঁচতে সরকারের কাছে ব্যাংক ঋণ মওকুফের জন্য বিনীত প্রার্থনা জানাচ্ছি।’
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘জাওয়াদের প্রভাবে টানা বর্ষণে আমাদের কৃষিতে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির সঠিক পরিমাপ নিরূপণ করা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, বিশ ভাগ ফসলের ক্ষতি হতে পারে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আলু, পেঁয়াজ, মরিচ ও গমের। আমরা চেষ্টা করছি, যেন কৃষকের ক্ষতি কম হয়। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা তৈরি করছি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য সরকারের কাছে বরাদ্দ চাইবো। এলে সহযোগিতা দিতে পারবো।
বিএডিসি হোমনা হিমাগারের উপ পরিচালক মোহাম্মদ আলী মিয়াজী বলেন, টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে বিএডিসির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ আলু বীজ উৎপাদনকারী চাষীদের মারাত্মক ক্ষতি হয়ে গেছে। বীজ আলু উৎপাদনে সার, কীটনাশক ও শ্রমের জন্য তাদেরকে ব্যাংক লোনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। তাদেরই উৎপাদিত বীজ আলু বিএডিসি ক্রয় করে তাদের ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করা হয়। গত তিন দিনের অতি বৃষ্টিতে বীজ আলু বিনষ্টের ফলে চাষী এবং বিএডিসি উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ অবস্থায় তাদের ক্ষতি কমিয়ে আনতে বিএডিসির পক্ষ থেকে চেষ্টা করছি। এই ডিসেম্বর মাসেই যদি আবার চাষীদের ভর্তুকি ও বীজ আলু দিয়ে সাহায্য করা যায়, তাহলেই ক্ষতি কিছুটা কমিয়ে আবার দাঁড়াতে পারবে।
সম্পাদক মণ্ডলীর সভাপতি: প্রফেসর নূর মো. রহমত উল্লাহ। নির্বাহী সম্পাদকঃ ব্যারিস্টার মো. ইমরান খাঁন, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: মো. ওমর ফারুক
ইমেইল: mdibrahimkhalil494@gmail.com মোবাইল: ০১৭৫৪-২২২৫০২
অফিসঃ গ্রামঃ শ্রীমদ্দি(আলোনিয়াকান্দি), পোঃ- হোমনা, উপজেলাঃহোমনা, জেলাঃ কুমিল্লা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. ইব্রাহিম খলিল কর্তৃক কুমিল্লা জেলা থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত।