মো. আক্তার হোসেন, বিশেষ প্রতিনিধি :
বিশ্বব্যাপি করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে দীর্ঘ দেড় বছর বন্ধ থাকার পর রবিবার কুমিল্লার হোমনা উপজেলায় খুলেছে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সকাল ১০টা বাজতেই বিদ্যালয়ের বারান্দায় দাঁড়িয়ে দপ্তরির কাঠের হাতুরী পেটায় কাঁসার ঘণ্টার টং টং শব্দে জানান দিল আজ পৃথিবীর বুকে যেন শিক্ষালাভের নতুন সূর্যোদয় হয়েছে। ছাত্র শিক্ষক, বিদ্যালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীদের পদচারণায় আবার প্রাণ ফিরে পেয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আঙিনাগুলো। ছাত্র ছাত্রীদের ফুল, বেলুন, কলম, চকলেট উপহার দিয়ে অভ্যর্থনায় বরণ করেছে শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ। কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে প্রবেশের পুরোনো দৃশ্যে ফেরা ছাত্র-শিক্ষকদের বুক থেকে যেন চাপা পাথর সরে গেছে। স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ১০টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত চলেছে পাঠদান। ব্ল্যাকবোর্ড, হোয়াইটবোর্ড, চক-ডাস্টার, মার্কার পেনের চিরচেনা সেই গন্ধে মুহুর্তেই ভুলে গেছে স্কুলে দীর্ঘ অনুপস্থিতির কষ্টগুলো। সবার মনে আনন্দের হিল্লোল, চোখে মুখে স্কুলে ফেরা স্বস্তির ঝিলিক। একে অপরের সঙ্গে বিনিময় করেছে তাদের সুখ-দুঃখের অনুভূতিগুলো।
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী রবিবার উপজেলার ৩টি কলেজ, ১৮ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৯টি মাদ্রাসা, ৯৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও প্রশাসন পরিচালিত একটি কিন্ডারগার্টেন খুলেছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কয়েক দিন আগে থেকেই শিক্ষক কর্মচারীরা মিলেমিশে ধোয়া-মোছাসহ পরিস্কার- পরিচ্ছন্ন করে শিক্ষার পরিবেশ তৈরিতে নতুনভাবে সাজানো হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে হোমনা সদরের কফিল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী সানজিদা আক্তার বলেন, ‘এতদিন বন্ধের পর স্কুলে এসে অনেক ভালো লেগেছে। শিক্ষকদের আন্তরিকতা ও বান্ধবীদের সঙ্গে দেখা করতে পেরে ভীষণ ভালো লাগছে।’
হোমনা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাশেদের অনুভূতি, ‘আমি কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে বিদ্যালয়ের শ্রেণিপাঠগুলো খুব মিস করেছি। বন্ধের সময়গুলোতে নিজের মধ্যে অনেককিছুর পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম হয়েছি, বিশেষ করে আমি কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে আইসিটিতে ভালো দক্ষতা অর্জন করেছি। বাসায় বাবা-মায়ের কাজে সহযোগিতা করেছি।’
প্রশাসন পরিচালিত একমাত্র টিউলিপ প্রশাস কিন্ডার গার্টেনের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী তানজিব রিয়াসাত তাওহীদ বলেন, আমার স্কুল বন্ধ থাকার কারণে আমি প্রতিদিন আমার প্রিয় শিক্ষক ও বন্ধুদের থেকে দূরে ছিলাম। খুব মনে পড়তো আমার স্কুলটিকে। খুব মন খারাপ হত আমার।’
উপজেলার দুলালপুর চন্দ্রমণি বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এটিএম মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘ দেড় বছর বিদ্যালয়ে আসতে না পেরে শিক্ষক ছাত্রদের মনে যে বিষাদের কালো মেঘ জমেছিল; আজ তা যেন নিমেষেই দূর হয়ে গেছে। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকদিন আগে থেকেই পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে বিদ্যালয় পাঠদানের উপযোগী করে সাজানো হয়েছে। এতদিন পর আমাদের চিরচেনা বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের কোলাহল মুখর পরিবেশে আজ আমি আবার যেন হৃদয় স্পন্দন ফিরে পেলাম।’
একজন অভিভাবক ডা. মো. শহিদুল্লাহ তার সন্তানকে স্কুলে দিয়ে বলেন, ’এই করোনা মহামারিতে প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে অবশ্যই বাচ্চাদের অনেক পড়াশোনার ক্ষতি হয়েছে। তারা মোবাইলে আসক্ত হয়ে পড়ছে। পড়াশোনার গতি কমে গিয়েছিল। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি যে, এই মহামারির সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা জরুরি ছিল। বিশ্বের অন্যান্য দেশেও সংক্রমণের হার বেশি ছিল বলেই সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন। আজ প্রতিষ্ঠান খুলেছে, আমি মনে করি, বাচ্চাদের পড়াশোনার চাপ না দিয়ে তাদের স্কুলের দিকে আগ্রহ গড়ে তুলতে হবে।’
পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র ফারশাদ রিজওয়ান তাশফিক জানান, ‘করোনা ভাইরাসের কারণে স্কুল বন্ধ থাকয় আমার পড়াশোনার অনেক ক্ষতি হয়েছে। সামনে আমার সমাপনী পরীক্ষা। তাই খারাপ লাগত স্কুলে যেতে পরতাম না বলে। বন্ধুদের খুব মিস করতাম। আমার প্রিয় শিক্ষকদেরও মিস করতাম।’
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী রুহুল আমিন বলেন, ‘সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমরা সবগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছি। স্বাস্থ্যবিধি ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে যথাযথ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, অত্যন্ত সুন্দর পরিপাটি পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। স্বাস্থবিধি মেনেই স্কুল খোলা হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদের ফুল, বেলুন, কলম চকলেট উপহার দিয়ে তাদের উৎসাহ বাড়ানো হয়েছে। শিশুরাও স্কুলে আসতে পেরে অনেক উচ্ছ্বসিত।
সম্পাদক মণ্ডলীর সভাপতি: প্রফেসর নূর মো. রহমত উল্লাহ। নির্বাহী সম্পাদকঃ ব্যারিস্টার মো. ইমরান খাঁন, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: মো. ওমর ফারুক
ইমেইল: [email protected] মোবাইল: ০১৭৫৪-২২২৫০২
অফিসঃ গ্রামঃ শ্রীমদ্দি(আলোনিয়াকান্দি), পোঃ- হোমনা, উপজেলাঃহোমনা, জেলাঃ কুমিল্লা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. ইব্রাহিম খলিল কর্তৃক কুমিল্লা জেলা থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত।