আবু সায়েম মোহাম্মদ সা'-আদাত উল করীম>> জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে জুয়ার আসরে আধিপত্য বিস্তার ও টাকার ভাগ-বাটোয়ারাকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনায় নদীতে ঝাঁপিয় পড়া ৩ জুয়ারির লাশ ভিন্ন ভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।

রোববার ২৯ নভেম্বর তারাকান্দি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই খালিদ মাসুদ উপজেলা পিংনা ইউনিয়নের যমুনা নদীর বাসুরিয়া চর এলাকা থেকে দুই জনের এবং টাঙ্গাইল জেলার ভুয়াপুর উপজেলার অর্জুনা ইউনিয়নের গোবিন্দপুর চরে নদীর কিনারা থেকে এক জনের লাশ ভূয়াপুর থানা পুলিশ উদ্ধার করেছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ২ জনকে আটক করা হয়। জুয়ার বোর্ড বসানোর ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে দুই পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করেছে পুলিশ সুপারের কার্যালয়। শনিবার সন্ধ্যায় তারাকান্দি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপ পরিদর্শক মো. ইউনুস আলী ও কনস্টেবল মনির উদ্দিনকে জামালপুর পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,সরিষাবাড়ী উপজেলার আওনা ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য কুমারপাড়া গ্রামের সিদ্দিক তালুকদারের ছেলে লিটন তালুকদার, পোগলদিঘা ইউনিয়নের পাখিমারা গ্রামের আজাহার আলীর ছেলে খোকন মিয়া ও পিংনা নরপাড়া গ্রামের মৃত বাহেজ আকন্দের ছেলে আব্দুল মান্নান সরকার ও কান্দারপাড়া আলী এর নেতৃত্বে আওনা ও পিংনা ইউনিয়ন এবং তারাকান্দিসহ বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে মোবাইল ফোনে জুয়ারি সরবরাহ করে ভ্রাম্যমাণ জুয়ার বোর্ড বসিয়ে দীর্ঘদিন ধরে লাখ লাখ টাকার বিভিন্ন ধরনের জুয়া খেলা চালিয়ে আসছিল। সরিষাবাড়ী উপজেলার পিংনা ইউনিয়নরে চর বাশুরিয়া এলাকার যমুনা নদীর পাশে নিয়মিত জুয়ার আসর বসে। গত বৃহষ্পতিবার (২৬ নভেম্বর) রাতে জুয়ার আসরে আধিপত্য বিস্তার ও টাকার ভাগ-বাটোয়ারাকে কেন্দ্র করে জুয়ারিদের কয়েকটি গ্রুপের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতির এক পর্যায়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বাঁধে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের প্রায় ৮জন জুয়ারি আহত হয়। হামলায় আহত উপজেলার পিংনা নরপাড়া গ্রামের বাহেছ আকন্দের ছেলে জুয়ার বোর্ডের মালিক আব্দুল মান্নান সরকারকে (৫২) গুরুতর জখম অবস্হায় টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অপর দুই জুয়ার বোর্ডের মালিক লিটন তালুকদার ও খোকন মিয়াকে পিটুনি দিলে তারা নদী সাঁতরিয়ে চলে আসে। হামলার ঘটনায় আতঙ্কিত তিন জুয়ারি গভীর যমুনা নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং নিখোঁজ হয়ে যায়। নিখোঁজ জুয়ারিরা হলো- সরিষাবাড়ী উপজেলার পোগলদিঘা ইউপির পাখিমারা গ্রামের শামছুল হকের পুত্র ছানোয়ার হোসেন ছানু (৪০) গোপালপুুর উপজেলার শাখারিয়া গ্রামের মৃত জমসের খাঁনের পুত্র হাফিজুর রহমান খাঁন (৪৫) ও ভুয়াপুরের গোবিন্দাসী গ্রামের ফজল মিয়া (৪০)। নিখোঁজের ঘটনায় শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) রাতে তারাকান্দি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে নিখোঁজ তিন ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে পৃথক পৃথক সাধারণ ডায়েরী করা হয়। যার জিডি নং-৬৪১,৬৪৩,৬৪৫, তারিখ-২৭-১১-২০২০ইং। শনিবার ২৮ নভেম্বর জামালপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক এর নেতৃত্বে ডুবুরী দল বেলা-২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ২ ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে উদ্ধার করতে ব্যর্থ হন।এ ঘটনায় গত শনিবার দুপুরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামালপুর সদর সার্কেল শাহ্ শিবলী সাদিক ও সরিষাবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ আবু মো. ফজলুল করীম ঘটনা স্হান পরির্দশন করেছেন। এ দিকে জুয়ার বোর্ডে হামলার ঘটনায় সম্পৃক্ত সন্দেহে দুই জনকে আটক করা হয়। আটকরা হলো- সরিষাবাড়ী উপজেলার পিংনা ইউনিয়নের বালিয়ামেন্দা গ্রামের সোহেল মিয়া (৩৫) ও টাঙ্গাইলের ভুয়াপুর উপজেলার চর রামাইল গ্রামের সজিব (৩৫)। নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধারে পরিবার -পরিজন বিভিন্ন স্থানে মাইকিং করার ফলে রোববার দুপুরে টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর উপজেলার শাখারিয়া গ্রামের মৃত জমসের আলী খান এর ছেলে নিখোঁজ হাফিজুর রহমান (৩৭) এর লাশ ভুয়াপুর উপজেলার অর্জুনা ইউনিয়নের গোবিন্দপুর চরে নদীর কিনারায় জেলেরা ভাসমান দেখতে পায়। স্হানীয় জনতা পরে মোবাইল ফোনের মাধ্যেমে নিখোঁজ হাফিজুরের লোকজন খবর পেয়ে লাশ শনাক্ত করেন এবং ভুয়াপুর থানা পুলিশকে খবর দিলে এস আই লিটন মিয়া লাশের সুরতহাল করে লাশ থানায় নিয়ে যায়। একই সঙ্গে নিখোঁজ তিন জনের মধ্যে হাফিজুরের লাশ উদ্ধারের খবর ছড়িয়ে পড়লে নিখোঁজ টাঙ্গাইল জেলার ভ’য়াপুর উপজেলার নিকলাপাড়া গ্রামের আব্দুল বারেক এর ছেলে ফজল মন্ডল (৩৩) এর বোন আসেনা বেগম (২৫) ও চাচাত ভাই শফিকুল ইসলাম পরিবার পরিজন নিয়ে নৌকা দিয়ে খোঁজাখুঁজি’র এক পর্যায়ে উপজেলা পিংনা ইউনিয়নের যমুনা নদীর বাসুরিয়া চর এলাকায় ফজল মন্ডল ও ছানোয়ার হোসেন ছানুর মরদেহ দেখতে পেয়ে তারাকান্দি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে খবর দেন। তদন্ত কেন্দ্রের এস আই খালিদ মাসুদ লাশের সুরতহাল করে লাশ উদ্ধার করে।নিহত ছানু জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলার আওনা ইউনিয়নের পাখিমারা গ্রামের শামছুল হক এর ছেলে ছানোয়ার হোসেন ছানুর পরিবার পরিজন লাশ শনাক্ত করেছে।

তারাকান্দি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম সংবাদ মাধ্যমকে জানান,নিখোঁজ ৩ ব্যক্তির লাশের মধ্যে টাঙ্গাইল জেলার ভূয়াপুর উপজেলার নিকলাপাড়া গ্রামের আব্দুল বারেক এর ছেলে ফজল মন্ডল ও জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলার আওনা ইউনিয়নের পাখিমারা গ্রামের শামছুল হক এর ছেলে ছানোয়ার হোসেন ছানুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।উদ্ধারকৃতদের ময়না তদন্তের জন্য জামালপুর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে ।

তিনি আরও জানান, টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর উপজেলার শাখারিয়া গ্রামের মৃত জমসের আলী খান এর ছেলে নিখোঁজ হাফিজুর রহমান(৩৭)এর লাশ ভুয়াপুর উপজেলার অর্জুনা ইউনিয়নের গোবিন্দপুর চরে নদীর কিনারা থেকে ভূয়াপুর থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করেছে। লাশটির সুরতহাল করে আইনগত ব্যবস্হা গ্রহণের জন্য ভূয়াপুর থানা পুলিশ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

সরিষাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু মোঃ ফজলুল করীম বলেন, দায়িত্বে অবহেলার কারণে তারাকান্দি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপ-পরিদর্শক মো. ইউনুস আলী ও কনস্টেবল মনির উদ্দিনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।