ঝিনাইদহ প্রতিনিধি>>
ঝিনাইদহের শৈলকুপা হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার প্রায় ৪ লাখ মানুষের একমাত্র সরকারি চিকিৎসা সেবার এ হাসপাতাল থেকে প্রতিদিন করোনা পরীক্ষার রোগীদের হতে হচ্ছে আর্থিক হয়রানির শিকার। ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে গত বছর মার্চ থেকে শুরু হয় করোনার নমুনা সংগ্রহ। শুরু থেকে ২৯ জুন মঙ্গলবার পর্যন্ত সর্বমোট ১৬৬৮টি নমুনা সংগৃহীত হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্যাথলজি বিভাগের দায়িত্বে থাকা মোঃ আরিফুজ্জামান রোগীদের করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহের পূর্বেই রেজিস্ট্রেশন বাবদ ৩২০ টাকা আদায় করে থাকেন। এক তথ্য মতে ২০ টাকা কাগজপত্র ফটোকপি, ১’শ টাকা ল্যাবচার্জ ও ২’শ টাকা যাতায়াত খরচসহ মোট ৩২০ টাকা নেওয়া হয়। তবে কোন রোগী জমাস্লিপ চাইলে শুধুমাত্র ১’শ টাকার রশিদ কেটে দেওয়া হয়।
কুশোবাড়িয়া গ্রামের রোগীর স্বজন ইপিয়ার হোসেন অভিযোগ করেন, তার বাবার করোনা টেস্টের জন্য ৩২০ টাকার পরিবর্তে তাকে ১’শ টাকার রশিদ দিতে গেলে বিবাদ সৃষ্টি হয়। তিনি আরিফুজ্জামানের নিকট জানতে চেয়েছিলেন, যাতায়াত এবং ফটোকপি খরচ কী তার সঠিক উত্তর পাওয়া যায়নি।
একই দিন পুরাতন বাখরবা গ্রামের শরিফুল ইসলাম জানান, প্রতিজন রোগীর নিকট থেকে যাতায়াতের কথা বলে যে ২’শ করে নিচ্ছে সে হিসেবে এ যাবতকালে আরিফুজ্জামান ১৬৬৮ নমুনা পরীক্ষার বিরপরীতে ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৯শ ২০ টাকা আত্মসাত করেছেন মর্মে প্রতীয়মান হয়।
ব্রহ্মপুর গ্রামের ব্যবসায়ী মধু মোল্লা জানান, করোনা মহামারিতে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা একেবারেই নাজুক। তার উপর সরকারি হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগ মরার উপর খাড়ার ঘা বসিয়ে দিচ্ছে।
কাজীপাড়া গ্রামের রাকিবুজ্জামান অভিযোগ করেন তার মায়ের করোনা পরীক্ষা বাবদ ১’শ টাকার পরিবর্তে কেন ৩’শ ২০ টাকা দিতে হবে প্রশ্ন উঠলে আরিফুজ্জামান উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দিকে আঙ্গুল উঠানোর পরামর্শ দিয়েছেন। সচেতন মহলে প্যাথলজি বিভাগের অন্যান্য পরীক্ষার সরকারি খরচ নিয়ে স্বচ্ছতা ও আরিফুজ্জামানের কর্মকান্ডে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
প্যাথলজিস্ট আরিফুজ্জামান বলেন, টাকা তিনি একা ভোগ করেন না এবং উর্ধ্বতন কর্তপক্ষ বিষয়টি জানেন, তাদের অনুমতিতেই এ টাকা নেওয়া হয়। করোনা আক্রান্ত রোগীদের পিসিআর টেস্ট কুষ্টিয়া পাঠানোর জন্য সপ্তাহে একবার সেখানে যেতে হয় বলেই যাতায়াত খরচ ২’শ টাকা নেওয়া হয় এমন মন্তব্য করেন।
তবে একজন মানুষ সপ্তাহে একবার কুষ্টিয়া যাওয়ার জন্য সকল রোগীর নিকট থেকে ২০০ টাকা যাতায়াত খরচ ও ফটোকপির ২০ টাকা গ্রহণ কি শোভনীয় এমন প্রশ্নের বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান। তাছাড়া এ বিষয়ে সরকারি বরাদ্দ আছে কিনা জানতে চাইলে আরিফুজ্জামানের নিকট তার সদুত্তর নেই।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ রাশেদ আল মামুন বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই, তবে অভিযোগের বিষয়টি দু:খজনক। করোনা পরীক্ষার সরকারি ফি ১’শ টাকা নেওয়ার কথা। অতিরিক্ত ২২০ টাকার দায়ভার আরিফুজ্জামানকেই নিতে হবে। এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ সেলিনা বেগম জানান, করোনা টেস্টের জন্য মাত্র ১০০ টাকা সরকারি ফি এর বাইরে কোন খরচ নেই। ফটোকপি, হ্যান্ডগ্লোবস, স্যানিটাইজার, মাস্কসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ সরকারিভাবে হাসপাতালে পাঠানো হয়। বিধিবহির্ভূত কোন অর্থনৈতিক অসংগতির অভিযোগ প্রমাণ পেলেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।