মো. আবু সালেক খান (রিপন)>>
প্রিয় শেখ রাসেল, তোমার জন্মদিনে, তোমার প্রিয় বাংলাদেশ জুড়ে তোমার জন্মদিন পালন করা হয়েছে। ১৯৭৫ সালে তুমি ছিলে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র, আর আমি ছিলাম তৃতীয় শ্রেণিতে। তুমি আর আমি একই স্কুলে পড়লেতো আমরা বন্ধুর মতোই হতাম, তাই না? তারপর দ্বাদশ ক্লাস পার হয়ে তুমি হয়তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে, আমি তার এক বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতাম, দেখা হলে তুমি হয়তো জিজ্ঞেস করতে কোন সাবজেক্টে তুমি ভর্তি হয়েছো? আমি বলতাম পলিটিক্যাল সায়েন্স ভাইয়া, আমার মনে হয় তুমি তখন বলতে ”ভাইয়া কেন বলছো? তুমি আর আমি বন্ধু, আমাকে নাম ধরে ডাকবে” তারপর হয়তো বলতে ” পলিটিক্যাল সায়েন্সে ভর্তি হয়েছো ভবিষ্যতে পলিটিশিয়ান হবে নাকি? আমি বলতাম ” ছাত্রলীগে অলরেডি যোগদান করেছি” তুমি খুশি হয়ে বলতে” তাই নাকি? হয়তো বুকে জড়িয়ে ধরে বলতে ” আমার আব্বার গড়ে তোলা ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ” আব্বা যে উদ্দেশ্য নিয়ে এই সংগঠন গড়েছেন সেটা সফল করে তুলতে হবে। তারপর হয়তো আমার ঘারে হাত রেখে নিয়ে যেতে মধুর ক্যাণ্টিনে। অনেকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলতে” আমরা একই স্কুলে পড়তাম, এ ছিল আমার এক বছরের জুনিয়র বন্ধু, কিন্তু এখনো বন্ধু। তারপর অরুণ দা কে মিষ্টি আর চায়ের অর্ডার দিয়ে টেবিলে বসে স্কুল জীবনের স্মৃতিচারণ করতে, পড়াশুনা, রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে, অনেকক্ষণ আড্ডা দিয়ে যাবার সময় হয়তো বলতে” সময় পেলেই আমাদের বাসায় এসো, মা বড় আপা, ছোট আপা, ভাইয়াদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিব” হয়তো বলতে ” আব্বার সঙ্গে দেখা করাতে পারবো না, তিনি দেশের কাজে ব্যস্ত থাকেন, তার পরও চেষ্টা করবো পরিচয় করিয়ে দিতে”। এই কথাগুলো শুধু কল্পনায় লিখলাম। এখন খুব জানতে ইচ্ছে করছে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট তোমার ঘুম ভাঙলো মেশিনগান, স্টেনগান, রাইফেলের গুলির বিকট আওয়াজ। এরই মধ্যে সেই গুলিতে নিহত হয়েছেন তোমার বড় ভাইয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল, গুলির শব্দে তুমি তোমার বড় ভাইয়ার মৃত্যু যন্ত্রনাকাতর কোন শব্দই হয়তো শুনতে পাওনি। তোমার সামনে তখন কতগুলো নরপশুর দল তারা তোমাকে মায়ের বুক থেকে ছিনিয়ে নিচে নিয়ে এসেছিল, তুমি তখন তোমার আব্বার ব্যক্তিগত সহকারী মহিতুল ভাইয়াকে দেখতে পেয়ে দৌড়ে গিয়ে তার হাত ধরেছিলে, তখনো গোলাগুলি চলছেই, গুলির বিকট শব্দে তোমার মা, জামাল ভাইয়া, ভাবীদের এবং অন্যান্য আত্মীয়- স্বজনের মৃত্যুর পূর্বে আর্তচিৎকার কিছুই শুনতে পাচ্ছিলে না, সর্বশেষে তোমার আব্বার সেই হুংকার ” তোরা কারা? তোরা কী চাস?” কিছুই শুনতে পাওনি , শুধুই গুলির শব্দ বিকট আওয়াজ। আচ্ছা রাসেল! তখন কি তোমার মনে হচ্ছিল” ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রোডের এই বাড়িটি ” বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির বাড়ি? তুমি রাষ্ট্রপতির কনিষ্ঠ পুত্র। আমার মনে হয় তুমি তা ভাবতে পারছিলে না, কারণ একজন রাষ্ট্রপতির বাড়ি এতো অরক্ষিত হবার কথা নয়, তার নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদাসতর্ক কোন সিকিউরিটি নেই, চারিদিকে পুলিশ পাহারা নেই, নেই কোনো গোয়েন্দা বাহিনীর নজরদারি। তুমি ভয়ার্ত কম্পমান হয়ে মহিতুল ভাইয়ার হাতধরে দাঁড়িয়েছিলে, তিনিই তোমার একমাত্র ভরসা’ একমাত্র আশ্রয়, তিনি হয়তো পরম মমতায় তোমাকে বুকে ধরে রেখেছিলেন। একসময় বিকট আওয়াজ থেমে গেলে তুমি মায়ের কাছে যাবে বলে কান্না করতে থাকলে, এরই মধ্যে কোন এক নরপশু এসে তোমার কোমল হাত ধরে দোতলায় তোমার মায়ের কাছে নিয়ে যাচ্ছিল, তুমি দেখতে পেলে তোমার আব্বার বিশাল দেহটি রক্তাক্ত অবস্থায় নিথর হয়ে পড়ে আছে। তখন কি তোমার মনে হয়েছিল তোমার আব্বা বাঙালি জাতির পিতা? আমার মনে হচ্ছে তখন তা তোমার মনে হয়নি। কারণ বাঙালি জাতির পিতা এভাবে রক্তাক্ত নিথর হয়ে মেঝেতে পড়ে থাকবার কথা নয়। তারপর তোমার শোবার ঘরে গিয়ে দেখতে পেলে তোমার মা ভাবীদের রক্তাক্ত নিস্প্রাণ দেহ। এরই মধ্যে ঘাতক তোমাকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে দিল, তোমার কচি প্রাণপাখিটি বড্ড অভিমানে, ক্ষোভে বুকভরা কান্না নিয়ে উড়াল দিয়ে চলে গেল দূর আকাশে। তোমাকে জানাচ্ছি- সেই ভয়াল ভোরে তোমার বড় আপা এবং ছোট আপা বিদেশে ছিলেন বলে বেঁচে গেছেন এবং আজও এক মহাসাগর বেদনা নিয়ে বেঁচে আছেন বাঙালি জাতির ভালবাসায়। তোমার বড় আপা ১৯৯৬ সালে তোমার প্রিয় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে যারা তোমাকে, বাঙালি জাতির পিতাকে, তোমার মা, ভাইয়া ভাবীদের হত্যা করেছিল তাদেরকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছিলেন, বিচারক তাদের মৃত্যুদন্ডের আদেশ দিয়েছিলেন, তোমার বড় আপা আমাদের বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী মৃত্যুদন্ডাদেশ কার্যকর করেছেন। তিনি আজও আমাদের প্রিয় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, আমরা আছি তাঁর সঙ্গে, আমরা জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে সংকল্পবদ্ধ এবং সোনার বাংলা নির্মাণে কাজ করে যাচ্ছি। প্রিয় রাসেল, তুমি শান্তিতে ঘুমিয়ে থাকো।
লেখক পরিচিতি:-সহযোগী অধ্যাপক (রাষ্ট্রবিজ্ঞান) -বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার অধিদপ্তর, বাংলাদেশ , ঢাকা
সম্পাদক মণ্ডলীর সভাপতি: প্রফেসর নূর মো. রহমত উল্লাহ। নির্বাহী সম্পাদকঃ ব্যারিস্টার মো. ইমরান খাঁন, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: মো. ওমর ফারুক
ইমেইল: mdibrahimkhalil494@gmail.com মোবাইল: ০১৭৫৪-২২২৫০২
অফিসঃ গ্রামঃ শ্রীমদ্দি(আলোনিয়াকান্দি), পোঃ- হোমনা, উপজেলাঃহোমনা, জেলাঃ কুমিল্লা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. ইব্রাহিম খলিল কর্তৃক কুমিল্লা জেলা থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত।