মো. সাইফুল্লাহ খাঁন, জেলাপ্রতিনিধি, রংপুর :
পরিবেশ রক্ষায় নিয়োজিত রংপুর বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরে পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় বিভিন্ন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটিতে জনবল রয়েছে মাত্র তিন ভাগের এক ভাগ। ফলে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো তদারকি, পরিবেশ দূষণ, বিভিন্ন অভিযানসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ে সার্বিক সেবা দিতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি।
বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, পরিচালক, উপ-পরিচালকসহ ২০ পদের বিপরীতে জনবল থাকার কথা ২৬ জন। এর বিপরীতে বাস্তবে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৬ জন। তবে কাগজে-কলমে কর্মকর্তা কর্মজচারী মিলে রয়েছেন ৯জন। অনুমোদিত ১৩ পদে কোনো জনবলই নেই। সব মিলে শূন্য রয়েছে ১৭টি পদ। সেখানকার প্রথম শ্রেণির ম্যাজিরস্ট্রটসহ ৩জন অন্যত্র প্রেষণে দায়িত্ব পালন করছেন।
জানা গেছে, বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরে দীর্ঘ দিন ধরে সিনিয়র কেমিস্ট, জুনিয়র কেমিস্ট, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা, সিনিয়র টেকনিশিয়ান, সাঁট লিপিকার কাম কম্পিউটার অপারেটর, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, স্টোরকিপার, প্রসেস সার্ভার, অফিস সহায়ক, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, নমুনা সংগ্রহ সহকারীর দুটি, নিরাপত্তা প্রহরীর দুটি এবং পরিদর্শকের তিনটি পদ শূন্য রয়েছে।
এ ছাড়াও, অনুমোদিত জনবল অনুযায়ী এ কার্যালয়ে প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের পদ রয়েছে মাত্র একটি। এ পদে দায়িত্বে রয়েছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আলী রাজীব মাহমুদ। কিন্তু তিনি প্রেষণে দায়িত্ব পালন করছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের ঢাকা সদর দপ্তরে। এ কারণে অভিযান পরিচালনা করা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। একমাত্র ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট পাবনায় এবং অফিস সহায়ক দিনাজপুর জেলা কার্যালয়ে সংযুক্ত রয়েছেন।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরিবেশ অধিদপ্তরকে শিল্প প্রতিষ্ঠানের দূষণ জরিপ, দূষণকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান চিহ্নিতকরণসহ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা, প্রয়োজন অনুসারে বিধি লঙ্ঘনকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, মামলা দায়ের, পরিবেশ দূষণকারীদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়, জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবিলায় জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন, শিল্পকারখানা পরিদর্শন ও পরিবেশগত ছাড়পত্র প্রদান, পরিবেশ দূষণ–সংক্রান্ত অভিযোগ গ্রহণ, বিভিন্ন এলাকার পুকুর, টিউবওয়েল ও খাবার পানির গুণগত মান নির্ণয়ের জন্য নিয়মিত নমুনা সংগ্রহ, পরিবেশগত গণসচেতনতা সৃষ্টি, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও জীব নিরাপত্তায় কার্যক্রম গ্রহণ, পরিবেশগত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিভিন্ন প্রকল্প ও গবেষণাকর্ম গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন, নিষিদ্ধঘোষিত পলিথিন শপিং ব্যাগ উৎপাদন ও বাজারজাতকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ পরিবেশ সংরক্ষণ সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজ নিয়মিত পরিচালনা করতে হয়। এসব বিষয়ে দৈনন্দিন পরিচালনা বা দেখভালের কথা থাকলেও জনবলের অভাবে তা সঠিকভাবে হচ্ছে না।
অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ইট ভাটা রয়েছে ৯৫৩টি। এর মধ্যে অবৈধ ইটভাটা রয়েছে ৮১৯টি। অটোরাইস মিল আছে ৫২১টি। এইসব কার্যক্রমে জনবলের অভাবে অবৈধ ইট ভাটাগুলোতে অভিযান পরিচালনা করা বা পরিবেশ সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব হচ্ছে না। এ কার্যালয়ে কোনো এক্সকেভেটর নেই। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সময় অবৈধ কোনো ইট ভাটা বা পরিবেশের ক্ষতিকারক অবৈধ অন্য কোনো স্থাপনা উচ্ছেদ করতে এক্সকেভেটর অপরিহার্য হয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে এক্সকেভেটর ভাড়া করতে হয়।
রংপুর বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক সৈয়দ ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘রংপুর বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের অনেক কাজ। এতে অনুমোদিত ২০টি পদে জনবল থাকার কথা ২৬ জন। বাস্তবে আছে মাত্র ৬ জন। কার্যালয়ের একমাত্র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থেকেও নেই। অনেকেই বলে পরিবেশ অধিদপ্তর কাজ করে না। কিন্তু জনবল সংকট, সেটা কেউ কেউ জেনেও বুঝতে চায় না। ’
তিনি আরও বলেন, ‘বিভাগে ইট ভাটার সংখ্যা ৯৫৩টি। একেকটি ইটভাটা একবার পরিদর্শন করলে পুনরায় সেটি পরিদর্শন করতে ৩ থেকে ৪ বছর সময় লেগে যায়। জনবল সংকটসহ নানা প্রতিকূল অবস্থায় পরিবেশ সংরক্ষণে রংপুর বিভাগীয় অফিস সঠিকভাবে কাজ করতে পারছে না।’ এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের হস্তক্ষেপ চান তিনি।
সম্পাদক মণ্ডলীর সভাপতি: প্রফেসর নূর মো. রহমত উল্লাহ। নির্বাহী সম্পাদকঃ মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : মো. ওমর ফারুক, উপ-সম্পাদক : মুন্সী নাজমুল হোসেন
ইমেইল: mdibrahimkhalil494@gmail.com মোবাইল: ০১৭৫৪-২২২৫০২
অফিস : শ্রীমদ্দি মোড়ের বাজার, হোমনা, কুমিল্লা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. ইব্রাহিম খলিল কর্তৃক কুমিল্লা জেলা থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত।