মো. সাইফুল্লাহ খাঁন,জেলাপ্রতিনিধি, রংপুর : শীতের পিঠা গ্রাম বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অংশ। শীতের সকালে ধোঁয়া ওঠা পিঠাতেই যেন লুকিয়ে আছে লাখো কোটি মানুষের শৈশব। শীতকাল এলেই রসনাবিলাসী বাঙালিদের ঘরে ঘরে নতুন চালের পিঠা তৈরীর আনন্দ বেড়ে যায়। এসময় গ্রামের মানুষ প্রায় প্রতিদিনই নানান রকম পিঠা তৈরি ও স্বাদ গ্রহণ করেন। তবে যান্ত্রিক সভ্যতা ও গতিশীলতার যুগে এদেশে শহর-বন্দর,গ্রাম-গঞ্জের সেই পিঠার আমেজ তুলনামূলক কম হলেও এই মৌসুমে বোঝা যায় পিঠা বাঙালির কতো প্রিয়। একদিকে শহরে বাসা বাড়িতে পিঠা তৈরীর দৃশ্যও খুব একটা চোখে পড়ছে না। অন্যদিকে দেশে প্রায় শতাধিক রকমের সুস্বাদু পিঠার দেখা মিললেও কালক্রমে হাড়িয়ে যাচ্ছে সেই বাহারি আইটেমগুলো।তবু শীত আসলেই পিঠার জনপ্রিয়তা বেশ বেড়ে যায়। তাই শহরের ব্যস্ত মানুষগুলোর পিঠার চাহিদা মেঠাতে মৌসুমী পিঠা বিক্রেতারা ব্যস্ত সময় পার করেন। বিকেল হলেই শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পিঠার পসরা সাজিয়ে বসেন তারা। সন্ধ্যা হলে ক্রেতাদের ভিড় বাড়তে থাকে সেই দোকানগুলোতে। এদিকে শীত বাড়ার সাথে সাথে রংপুর নগরীর আনাচে-কানাচে,মোড়ে মোড়ে পিঠা বিক্রির ধুম পড়ছে।রাস্তায় ভ্যানে করে কিংবা ফুটপাতে বসে ধোঁয়া উঠা ভাপা ও চিতই পিঠা বিক্রির দৃশ্য সর্বত্রই চোখে পড়ছে। পাঁচ-দশ টাকায় পিঠার স্বাদ পেতে ভীড় করা ক্রেতারা বলছেন শহরে ব্যস্ততায় বাসা বাড়িতে পিঠা তৈরীর প্রচলন কমে গেলেও এসব মৌসুমী পিঠা বিক্রেতারাই ধরে রেখেছেন হাজার বছরের সেই ঐতিহ্য। স্থানীয় পিঠা বিক্রেতাদের সংখ্যা নগণ্য হওয়ায় বিগত কয়েক বছর যাবত নগরবাসীদের পিঠার চাহিদা পুরণ করছেন কুড়িগ্রামের রৌমারি থেকে আসা মৌসুমী পিঠা বিক্রেতারা। যাদের প্রায় ৪০ জন বর্তমানে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে তথা সুপার মার্কেট,ধাপ মেডিক্যাল, চেকপোস্ট, বাস টার্মিনাল, ঢাকা স্ট্যাণ্ড, শাপলা চত্বর, স্টেশন রোড, ছালেক মার্কেট, প্রেসক্লাব, জাহাজ কোম্পানীর মোড়, পায়রা চত্বর সিটি বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় তিন চাকার ভ্যানে করে পিঠা বিক্রির এই আয়োজন করে আসছেন। এমন একজন পিঠা বিক্রেতা সবুজ মিয়া নগরীর সুপার মার্কেটের সামনে সন্ধ্যা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত বিরামহীন শুধু ভাপা পিঠা বিক্রি করেন।
রৌমারি হতে আসা এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জানায়, এক কেজি চালে ৫ টাকা মূল্যের ৪২ টি ও ১০টাকা মূল্যের ২০টি পিঠা তৈরি করি। এক্ষেত্রে খেজুরগুড়, নারিকেলসহ বিবিধ খরচ ১৫০ টাকার কম নয়। আসন্ন শীতে এখানে প্রতিদিন ৩০কেজি চালের ভাপা পিঠা বিক্রি করছি।
তিনি আরও জানান, দীর্ঘ সাত বছর যাবত রংপুরে এসে মৌসুমী পিঠা বিক্রি করি। হাসি মুখে জানালেন, এবার মহামারি করোনাকালে ক্রেতাদের সমাগম পূর্বের তুলনায় কম। পিঠা কিনে পরিবারের জন্যও নিয়ে যাচ্ছেন।
পিঠাপ্রেমিক আব্দুর রশীদ জানান,ব্যস্ততার কারণে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ঘরে পিঠা বানানো কষ্টসাধ্য। তাই গৃহিণীর চাপ কমাতে পরিবারের সদস্যদের জন্য রেডিমেড পিঠা সঙ্গে নিয়েছি।
কুড়িগ্রাম থেকে ৩৫ বছর পুর্বে রংপুরে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন হাফিজ আলী। শীতের মৌসুমে নগরীর নিউ জুম্মাপাড়া এলাকায় ভাপা ও চিতই পিঠা বিক্রি করেন। চিতই পিঠার আকর্ষণ হিসেবে ধনে,সরিষা ও শুঁটকি ভর্তা ব্যবহার করছেন তিনি। বিক্রি সন্তোষজনক তবে খানিকটা হতাশাগ্রস্ত স্বরে জানালেন, এখনকার দিনে ৩/৪ পদের পিঠা ছাড়া অন্যসব চোখেই পড়ে না।তাই বাঙালির ঐতিহ্য রক্ষায় সরকারি উদ্যোগে দেশের সর্বত্র পিঠা মেলার আয়োজন ও কার্যকরী পদক্ষেপ জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
ক্ষুদ্র মৌসুমী ব্যবসায়ী নুরনবী ইসলাম বিক্রি করছেন তেলে ভাজা তেল পিঠা। পিঠা বিক্রি করে শীতের মৌসুমে পরিবার নিয়ে ভালই আছেন বলে জানালেন নুরনবী। শীতের মৌসুমে পিঠা বিক্রি করে এক শ্রেণির মৌসুমী ব্যবসায়ী জীবিকা নির্বাহ করেন। তারা অন্য মৌসুমে নানা ব্যবসা করলেও শীতকালে পিঠার ব্যবসাই তাদের একমাত্র অবলম্বন। কারণ শীতের পিঠার ক্ষুদ্র ব্যবসা করতে তেমন পুঁজির দরকার হয় না। চাহিদা বেশি হওয়ায় মুনাফাও বেশি। মোটামুটি ৩-৪হাজার টাকা হলেই এ ব্যবসা করা যায়। এসব বিক্রেতা শীতের মৌসুমে নগরীর বিভিন্ন মোড়ে ও রাস্তার ধারে পিঠা তৈরি ও বিক্রি করা শুরু করেন। এভাবে মৌসুমী ব্যবসা করেই রুটিরুজি রোজগারে ব্যস্ত থাকেন তারা।
সম্পাদক মণ্ডলীর সভাপতি: প্রফেসর নূর মো. রহমত উল্লাহ। নির্বাহী সম্পাদকঃ ব্যারিস্টার মো. ইমরান খাঁন, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: মো. ওমর ফারুক
ইমেইল: mdibrahimkhalil494@gmail.com মোবাইল: ০১৭৫৪-২২২৫০২
অফিসঃ গ্রামঃ শ্রীমদ্দি(আলোনিয়াকান্দি), পোঃ- হোমনা, উপজেলাঃহোমনা, জেলাঃ কুমিল্লা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. ইব্রাহিম খলিল কর্তৃক কুমিল্লা জেলা থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত।