মো. সাইফুল্লাহ খাঁন, জেলাপ্রতিনিধি, রংপুর :
রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ২৩ নং ওয়ার্ডের নিউ জুম্মাপাড়া করীমিয়া মাদ্রাসার পিছনে কেডি খাল খননের কাজ চলছে। সেখানে খালের ধারে বসবাসরত ভূমিহীনদের ১৩টি বাড়ির প্রায় ৭০ জন সদস্য খোলা আকাশের নিচে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। ঘরবাড়ি ভেঙ্গে সরিয়ে ফেলার কারণে তারা বর্তমানে চূরান্ত ভূমিহীন হয়ে পড়েছে। এই ভূমিহীনরা প্রত্যেকেই দিনমজুর। এ ঘটনার প্রতিকারে ভূমি বা দ্রুত পুণর্বাসন চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন ভুক্তাভোগীরা। এছাড়াও আরও বহু ঘরবাড়ি ভাঙা পড়বে বলে জানা গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পরিবারগুলো তাদের আসবাবপত্র নিয়ে খোলা আকাশের নিচে আর্তনাদ করছেন। ভূক্তভোগী ভূমিহীন বাদশাহ মিয়ার পরিবারে ৮ সদস্য।তিনি নারিকেল ও খেজুর গাছ পরিস্কার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তিনি বলেন, ৫দিন আগে জানানো হলো বাড়িঘর সরাতে হবে। নিরুপায় হয়ে বালবাচ্চা নিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করতে হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী আমাদের বাস্তুহারাদের জন্য জমি ও ঘরবাড়ির ব্যবস্থা করছেন। আমরা এখন কোথায় যাবো? প্রধানমন্ত্রী যেন দ্রুত আমাদের দিকে তাকান, আমরা পরিবার নিয়ে খোলা আকাশের নিচে আছি।
খালের ধারে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন তৈয়ব আলী, তিনি বলেন, ক্ষেত- খামারে কাজ করে পরিবারের ১০ সদস্যের খোরাক যোগাই। ঘরবাড়ী ভেঙ্গে কোনোরকম অন্যের বাড়ির পিছনে রাখছি। আজ পানি খাওয়ার মত উপায়ও নাই। আমরা কোথায় যাবো, কী করবো বুঝতে পারছি না। রংপুর সিটি মেয়র ও জেলাপ্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি আমাদের ভূমির ব্যবস্থা করুন।
ভূমিহীন
রেজিয়া খাতুন বলেন, আমাকে দেখার কেউ নেই। আমি প্রতিবন্ধী নাতি বেটা বউকে নিয়ে বাইরে আছি। আমাদের থাকার স্থানটুকু দিন। এখন এই পরিবারগুলোর থাকা ‘খাওয়া -দাওয়া এমনকি বাথরুম করার ব্যবস্থাও নাই।এখানে আরও পাঁচজন প্রতিবন্ধী আছে যাদের অবস্থা খুবই ভয়ানক। এভাবে খোলা আকাশের নিচে থাকাটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
এছাড়াও খালের ধারে অবৈধভাবে বসবাস করতেন ভূমিহীন মোহাম্মদ আলী, সাদেক, রেজিয়া খাতুন(প্রতিবন্ধী),জনি, রসিয়া, আব্দুল মজিদ, মজিদ কবিরাজ,আজাদ, জয়মুলনেছা, আব্দুল আজিজ নাজমাসহ সেখানে উপস্থিত বেশকিছু ভূমিহীন জানিয়েছেন, আমাদের অন্তত থাকার ভূমির ব্যবস্থা করুন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের আহাজারি ও অনুরোধটুকু পৌঁছিয়ে দিন, আমরা আজ নিরুপায়, রান্নাবান্না, থাকা -খাওয়া কোনো কিছুরই উপায় নেই।
এবিষয়ে ২৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সেকেন্দার আলী বলেন, তাদেরকে বহুদিন ধরে জানানো হয়েছে কেডি খালের কাজ শুরু হবে। কিন্তু তারা কর্ণপাত করেননি। এখন খালের কাজ শুরু হয়েছে, খালের জায়গা তো ছাড়তেই হবে। এক্ষেত্রে পরিবারগুলোকে নিরাপদ স্থানে নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, কেডি খাল আর শ্যামাসুন্দরী খাল যে প্রসঙ্গেই বলেন না কেন, এতে সিটি কর্পোরেশনের কোনো এখতিয়ার নেই। এই জমিগুলো খাস এবং জেলা প্রশাসনের সম্পত্তি। এখানে আমার কোনো ক্ষমতা থাকলে নিশ্চয়ই তাদের ব্যবস্থা করে দিতাম।
এ বিষয়ে রংপুর জেলাপ্রশাসক মো. আসিব আহসানের সাথে মুঠোফোন যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও পাওয়া সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ৬৪ জেলায় নদী খনন প্রকল্পের কাজের অংশ হিসেবে রংপুরে সাত মাথা রেলব্রিজ হতে চিকলী বিল পর্যন্ত এই খনন কাজ চলবে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড রংপুরের উপসহকারী প্রকৌশলী রাসেল মাহমুদ।