জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহঃ
‘গোলা ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু আর পুকুর ভরা মাছ গ্রামবাংলার সমৃদ্ধ ঐতিহ্য নিয়ে প্রচলিত প্রবাদটি আজও মানুষের মুখে মুখে ঘোরে। কিন্তু গ্রামের পর গ্রাম ঘুরেও দেখা পাওয়া যায় না গোলার। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার ভবনগর গ্রাম। গ্রামের পাড়ায়-পাড়ায়, বাড়িতে-বাড়িতে দাঁড়িয়ে আছে ধানের গোলা।
গ্রামের কৃষকেরা বলছেন, তারা এখনো অনেকে গোলায় ধান রাখেন। আবার অনেকের গোলা পরিত্যক্ত। তবে তারা স্মৃতি হিসেবে রেখে দিয়েছেন। গ্রামে এখনো অর্ধশত বাড়িতে গোলা রয়েছে।
শ্যামকুড় ইউনিয়নের ভবনগর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় ধানের গোলা। একই স্থানে পাশাপাশি একাধিক গোলাও আছে। গ্রামের পশ্চিম প্রান্তে চারটি গোলা রয়েছে। যার মালিক গ্রামেরই আমির হোসেন তরফদার। এর একটু পাশে ঝন্টু ম-লের বাড়িতে আরেকটি গোলা। একটু দূরে আমজাদ তরফদারের বাড়িতে রয়েছে আরও দুটি গোলা। আরেক পাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানেও একাধিক বাড়িতে ধানের গোলা।
ঝন্টু ম-ল জানান, এগুলো বাঁশ দিয়ে তৈরি। ওপরের ছাউনিতে অনেকে খড় ব্যবহার করেন, আবার অনেকে টিন ব্যবহার করেন। একটি গোলা তৈরি করতে কৃষকের খরচ হয় ২৫ থেকে ৫০ হাজার পর্যন্ত। যেগুলোতে ১৫০ থেকে ২৫০ মণ ধান রাখা যায়। গোলায় ধান রাখলে দীর্ঘদিন ভালো থাকে। গ্রামে পাঁচ শতাধিক পরিবারের বসবাস। কৃষকেরা আশপাশের চারটি মাঠে ফসল ফলান।
গ্রামের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম জানান, মাঠগুলোতে দুই হাজার বিঘা চাষযোগ্য জমি রয়েছে। আগে ১ হাজার ২০০ বিঘায় ধানের চাষ হতো, বাকিটা জমিতে ফলত অন্যান্য ফসল। বর্তমানে ধান চাষ কমে ৪০০ বিঘায় দাঁড়িয়েছে। যে কারণে গোলার ব্যবহার কমে গেছে। তিনি নিজেও ধান গোলায় রাখতেন, এখন আর রাখেন না।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হারুন-অর রশিদ জানান, বস্তার চেয়ে গোলায় ধান রাখলে ধান ভালো থাকে। কৃষকেরা এখনো গোলায় ধান রাখতে আগ্রহী। কিন্তু উৎপাদন খরচ মিটিয়ে ধান সংরক্ষণ করা তাদের জন্য কষ্টকর। তারপরও স্মৃতি হিসেবে তারা অনেকে বাড়ির আঙিনায় গোলা সংরক্ষণ করছেন।
শ্যামকুড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আমানুল্লাহ জানান, ‘গোলায় ধান রাখা কৃষকের জন্য খুবই ভালো। কিন্তু এগুলো আমাদের সমাজ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। কৃষক ধান উৎপাদন করে লাভবান হলে আবার মাঠে ধানের চাষ বৃদ্ধি পাবে, পাড়ায় পাড়ায় গোলা ভরা ধান পাওয়া যাবে।’
সম্পাদক মণ্ডলীর সভাপতি: প্রফেসর নূর মো. রহমত উল্লাহ। নির্বাহী সম্পাদকঃ মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন, উপ-সম্পাদক : মুন্সী নাজমুল হোসেন
ইমেইল: mdibrahimkhalil494@gmail.com মোবাইল: ০১৭৫৪-২২২৫০২
অফিস : শ্রীমদ্দি মোড়ের বাজার, হোমনা, কুমিল্লা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. ইব্রাহিম খলিল কর্তৃক কুমিল্লা জেলা থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত।