রফিকুল ইসলাম :
একজন মুক্তিযোদ্ধা, ভালো শিক্ষক, সৎ ও আদর্শবান রাজনৈতিক নেতা এবং দক্ষ
আইনজীবী ছিলেন শামসুল হুদা। তরুণ শামসুল হুদা ৬০ দশকে বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলার ছাত্র যুবদের সংগঠিত করে বাঙালি জাতি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন । শামসুল হুদারা ৭ ভাই ও ২ বোন। সবাই ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা যা কুষ্টিয়াতে আর কোন পরিবারে নেই। তার অনুজ শামসুল হাদী ২৩শে মার্চ ১৯৭১সালে কুষ্টিয়া হাইস্কুল মাঠে হাজার হাজার ছাত্র জনতার উপস্থিতিতে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। তিনি তৎকালীন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭৫ সালে ঐতিহাসিক ছাতারপাড়া রক্ষীবাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন শামসুল হুদা। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ ভূমিকা রাখেন তিনি। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বি এল এফ এর কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন এবং কুষ্টিয়ার বংশীতলায় সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নিয়ে সেদিন প্রায় ১০০ জন পাকিস্থানী সেনাবাহিনীর জীবনাবসান ঘটান । মুক্তিযোদ্ধারা বিজয় লাভ করেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় ১৯৭২ সালে সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন নিয়ে ৩১শে অক্টোবর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ গঠন কুষ্টিয়া জেলার প্রথম কমিটির প্রচার সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং শক্ত হাতে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি বি এসসি শিক্ষক হিসাবে মিরপুরের তালবাড়ীয়া হাইস্কুলে যোগ দেন। কিছুদিন পরে চলে আসেন নিজ গ্রাম হাটশ হরিপুর দি ওল্ড হাইস্কুলে। বেশ সুনামের সাথেই তিনি শিক্ষকতা করেন। তার ভিতর সমাজ পরিবর্তনের আকাঙক্ষা ছিল প্রবল। ছোট ভাই শামসুল হাদীর মৃত্যু তিনি গ্রহণ করতে পারেননি। যে কারণে তিনি শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে রাজনীতির দিকে ঝুঁকে পড়েন। কুষ্টিয়া জেলা জাসদের সাথে আবারও যুক্ত হন এবং দলের সংকটময় সময়ে তিনি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। দলবাজি লুট-পাট সামরিক স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করতে যেয়ে অনেকবার কারাবরণও করেন। যে কারণে তিনি পরবর্তীকালে আইন ব্যবসায় যোগদান করেন এবং গ্রামের গরীব কৃষক দরিদ্র মানুষের আইনি সেবা দেন। সহজ-সরলভাবে বলা যায় বিনা পয়সায় হুদা ভাই কুষ্টিয়ার উন্নয়ন নিয়ে চিন্তা করতেন। তিনি উদ্যোগ নিয়ে কুষ্টিয়া উন্নয়ন পরিষদ গঠন করেন। তিনি এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন এবং অনেক কাজ করেছেন। তিনি গনতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন। সাম্প্রদায়িক জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলাতে প্রথম আন্দোলন শুরু করেন। যে কারণে জামাত-শিবির হুদা ভাইকে অনেক বার হত্যার চেষ্টাও করে ব্যর্থ হন । পরবর্তীকালে ২০০৩ সালে হুদা ভাই সাহসী ভূমিকা নিয়ে বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে একটি বই লেখেন। সেখানে কুষ্টিয়া, চুয়াডাংগা ও
মেহেরপুর এই তিন জেলার প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা ও প্রকৃত যুদ্ধাপরাধী রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করেন। জামাত- বি এন পি শাসনামলে যা ছিল অকল্পনীয় ঘটনা।হুদা ভাইয়ের বইটি এখন মুক্তিযোদ্ধাদের দলিলে পরিণত হয়েছে। শামসুল হুদার লেখা বেশ কিছু বই প্রকাশিত হয়েছে। ১)মৌলবাদী জামাত যুগে যুগে, ২)একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও কুষ্টিয়া ৩)ঘাতকের হিংস্র নখর, নাটক (মঞ্চস্থ) ৪)একাত্তরের ঠিকানা,নাটক(মঞ্চস্থ) ও ৫) বাঙালির মুজিব, নাটক।
শামসুল হুদার সাথে কারশেদ আলমের অনেক স্মৃতি একসাথে অনেক মিছিল- মিটিং করেছেন। কারশেদ আলম যখন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক (জাসদ) হুদা তখন জেলা জাসদের সহ-সভাপতি। তিনি জাতীয় আইনজীবী পরিষদের কুষ্টিয়ার আহবায়ক ছিলেন। একটি কথা না বললেই নয় ১৯৭১ সালে শামসুল হুদার মা বেগম সামসুন্নাহার নিজে হাতে একটি পতাকা বানিয়ে নিজ বাড়িতে উত্তোলন করে তার ৬ সন্তানকে যুদ্ধে পাঠিয়ে দেন। মাসহ শামসুল হুদার পরিবারের সকলের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন কারশেদ আলম। তিনি অ্যাড. শামসুল হুদার প্রতি লাল সালাম জানিয়েছেন ।
সম্পাদক মণ্ডলীর সভাপতি: প্রফেসর নূর মো. রহমত উল্লাহ। নির্বাহী সম্পাদকঃ ব্যারিস্টার মো. ইমরান খাঁন, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: মো. ওমর ফারুক
ইমেইল: [email protected] মোবাইল: ০১৭৫৪-২২২৫০২
অফিসঃ গ্রামঃ শ্রীমদ্দি(আলোনিয়াকান্দি), পোঃ- হোমনা, উপজেলাঃহোমনা, জেলাঃ কুমিল্লা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. ইব্রাহিম খলিল কর্তৃক কুমিল্লা জেলা থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত।