ক্রাইম পেট্রোল ডেস্কঃ
কুমিল্লার দাউদকান্দিতে বোরকা পরিহিত তিন দু'র্বৃত্ত গু'লি করে যুবলীগ নেতা জামাল হোসেনকে হ'ত্যা করেছে। সিসিটিভি ফুটেজ থেকে এমন তথ্য মিলেছে। কিলিং মিশন সম্পন্ন করে দ্রুত তারা পায়ে হেঁটে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে দু'র্বৃত্তরা।
হ'ত্যাকাণ্ডের পর আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে এমন তথ্য পেয়েছে পুলিশ। এক মিনিট ২০ সেকেন্ডের ওই সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশ, পিবিআই, র্যাবসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দুর্বৃত্তদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে মাঠে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করছে।
সোমবার (১ মে ২০২৩ খ্রি.) আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এসব তথ্য জানিয়েছেন। এদিকে কমান্ডো স্টাইলে যুবলীগ নেতা হ'ত্যার ঘটনায় গৌরীপুর বাজারসহ স্থানীয় এলাকার ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের মধ্যে আ'তঙ্ক ও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
জানা গেছে, রোববার রাত পৌনে ৮টার দিকে দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর পশ্চিম বাজারে বোরকা পরিহিত ৩ দুর্বৃত্ত যুবলীগ নেতা জামাল হোসেনকে লক্ষ্য করে গু'লি চালিয়ে হ'ত্যা করে। অ'স্ত্রধারী দু'র্বৃত্তরা হেঁটে বোরকা পরে মসজিদ থেকে পূর্বদিকে জামাল হোসেনের ভাড়া বাসার দিকে যাচ্ছে। সিসি ক্যামেরায় থাকা সময় অনুযায়ী, তখন সন্ধ্যা সাতটা ৪৪ মিনিট। এর এক মিনিট ২০ সেকেন্ডের মাথায় একই পথ ধরে ওই তিন দু'র্বৃত্ত দৌড়ে পালিয়ে যায়। এ সময় একজনের মুখের আবরণ খুলে যায়। আরেকজনের হাত থেকে অ'স্ত্র পড়ে যায়। অ'স্ত্রটি কুড়িয়ে নিয়ে তারা পালিয়ে যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তদন্তসংশ্লিষ্ট এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, জামাল হোসেন গৌরীপুর পশ্চিম বাজার এলাকার বাসার সামনে একা দাঁড়িয়ে ছিলেন। পশ্চিম দিক থেকে বোরকা পরা দু'র্বৃত্তরা আসে। একজন এসে প্রথমে দাঁড়িয়ে থাকা জামাল হোসেনকে ধাক্কা দেয়। এ সময় জামাল এক দু'র্বৃত্তকে ঝাপটে ধরেন। তখন আরেক দু'র্বৃত্ত এসে লা'থি মেরে জামালকে মাটিতে ফেলে দেয়। এরপর দু'র্বৃত্তরা পর পর তিনটি গু'লি করে পশ্চিম দিক দিয়ে পালিয়ে যায়। গু'লির শব্দ পেয়ে অনেকে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। স্থানীয়রা গু'লিবিদ্ধ জামাল হোসেনকে প্রথমে গৌরীপুর সরকারি হাসপাতালে এবং পরে আ'শঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলে নেওয়ার পর সেখানে রাত ১০টায় চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত জামাল হোসেন ঘটনাস্থলের পার্শ্ববর্তী তিতাস উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। তিনি ওই উপজেলার জিয়ারকান্দি নোয়াগাঁও গ্রামের ফজলুল হকের ছেলে। তিনি গৌরীপুর পশ্চিম বাজার এলাকায় বাসা ভাড়া করে থাকতেন এবং সেখানে থাই গ্লাসের ব্যবসা করতেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশ, পিবিআই, র্যাব, ডিবি ও জেলা পুলিশের সদস্যরা বাজারের ব্যবসায়ী ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলছেন। গৌরীপুর বাজারে পোশাকপরা ও সাদা পোশাকের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য অবস্থান করছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, যুবলীগ নেতা জামাল হোসেন এলাকায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে বেশ সক্রিয় ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে ঘা'তকরা তার পূর্ব পরিচিত হতে পারে। তাই হয়তো তারা জামাল হোসেনের অবস্থান নিশ্চিত হয়েই বোরকা পরে হ'ত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে। বোরকা পরে এ ধরনের হ'ত্যাকাণ্ড এখানে আর কখনো ঘটেনি। তারা পেশাদার খু'নি হতে পারে। এ ছাড়া তিতাস উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের বিবদমান দ্বন্দ্বের জেরে ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ খু'নের ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
র্যাব-১১, সিপিসি-২ কুমিল্লা ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন জানান, 'হত্যাকাণ্ডের খবর জানার পরই আমরা ঘটনাস্থলে যাই এবং ছায়াতদন্ত শুরু করি। নিহত জামাল হোসেনের পরিবার ও স্থানীয় লোকজনের বক্তব্য ও সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ঘা'তকদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।'
পিবিআই কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান জানান, 'ঘটনাস্থল ছাড়াও আশপাশে থাকা বেশ কিছু সিসিটিভি ফুটেজ আমাদের হাতে এসেছে। এসব ফুটেজে হ'ত্যায় অংশগ্রহণকারীদের দেখা গেছে। দু'র্বৃত্তদের ঘটনাস্থলে যাওয়া ও কিলিং মিশন শেষে ফিরে যাওয়ার দৃশ্য রয়েছে। আশা করি, ঘা'তকদের শনাক্ত ও গ্রেফতারে আমরা সচেষ্ট হব।'
দাউদকান্দি মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ আলমগীর ভুঞা জানান, 'এ হ'ত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কাউকে শনাক্ত বা গ্রেফতার করা যায়নি। আইন-শৃংখলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থাগুলোও ঘা'তকদের শনাক্তের চেষ্টা করছে। এ ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। নিহতের ময়নাতদন্ত শেষে লাশ ঢাকা থেকে বাড়িতে এনে দাফনের পর রাতে মামলা হতে পারে।'
প্রসঙ্গত, স'ন্ত্রাসের জনপদ নামে খ্যাত এ গৌরীপুর বাজারে একের পর এক হ'ত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। দাউদকান্দির গৌরীপুর বাজার ঘেঁষে যাওয়া নদীর ওপর ব্রিজ পার হলে তিতাসের জিয়ারকান্দি গ্রাম। জিয়ারকান্দির এবং গৌরীপুরের মধ্যে গৌরীপুর বাজারের নিয়ন্ত্রণ, চাঁ'দাবাজিসহ আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এখানে জিয়ারকান্দির মনির হোসেন চেয়ারম্যান, শফিকুল ইসলাম চেয়ারম্যান ও নুরুজ্জামান চেয়ারম্যানসহ বেশ কয়েকজন হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।
সম্পাদক মণ্ডলীর সভাপতি: প্রফেসর নূর মো. রহমত উল্লাহ। নির্বাহী সম্পাদকঃ মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন, উপ-সম্পাদক : মুন্সী নাজমুল হোসেন
ইমেইল: mdibrahimkhalil494@gmail.com মোবাইল: ০১৭৫৪-২২২৫০২
অফিস : শ্রীমদ্দি মোড়ের বাজার, হোমনা, কুমিল্লা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. ইব্রাহিম খলিল কর্তৃক কুমিল্লা জেলা থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত।