ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :
ভারতে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে জটিলতার কারণে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর সীমান্ত পয়েন্টগুলো দিয়ে বাড়ছে অনুপ্রবেশ। প্রায় প্রতিদিনই সীমান্ত প্রহরীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে শত শত মানুষ অবৈধভাবে ঢুকে পড়ছে বাংলাদেশে। গত কয়েক দিনে বিজিবির হাতে আটক হয়েছে প্রায় তিন শতাধিক মানুষ। তাদেরকে অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলা দিয়ে পুলিশের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সীমান্তে সতর্কতা জারি করে বাড়ানো হয়েছে বিজিবির সদস্য সংখ্যা। সবচেয়ে বেশি অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেছে ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে। গত এক সপ্তাহে ওই সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী ২১৪ জনকে আটক করেছে বিজিবি। অবৈধ অনুপ্রবেশে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চুয়াডাঙ্গার জীবননগর সীমান্ত। ওই সীমান্তেও গত ৫ দিনে ২২ জনকে আটক করা হয়েছে।
ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গার একাংশের (জীবননগর উপজেলা) সীমান্তে দায়িত্ব পালনকারী খালিশপুর ৫৮ বিজিবির পরিচালক লে. কর্নেল কামরুল আহসান বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, হঠাৎ করেই সীমান্ত পয়েন্টগুলোতে অনুপ্রবেশ বেড়ে গেছে। গত কয়েক দিনে আমাদের হাতে ২১৪ জন অনুপ্রবেশকারী আটক হয়েছেন।
লে. কর্নেল কামরুল আহসান আরও জানান, মহেশপুর সীমান্তের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে কাঁটাতারের বেড়া না থাকায় এসব সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ বাড়ছে। তারপরও অনুপ্রবেশ নিয়ে বিজিবি সজাগ রয়েছে। এ বিষয়ে সার্বক্ষণিক সতর্ক রাখা হয়েছে জওয়ানদের। বাড়ানো হয়েছে সদস্য সংখ্যা।
সীমান্তের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ভারতের আসাম ও বেঙ্গালুরুসহ বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করা এ মানুষগুলোকে ভারতের নাগরিক পঞ্জির (এনআরসি) অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। যে কারণে ভারত সরকারের একটি সরকারি বাহিনীর চাপে তাদের দেশ ছাড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার দুজন জনপ্রতিনিধি বলেন, ‘ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যে বসবাসরতদের মধ্যে এনআরসি তালিকায় বাদ পড়ে যাওয়ায় প্রতিদিনই মহেশপুর উপজেলার জলুলী, পলিয়ানপুর, কুসুমপুর ও খোসালপুর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে অনেক মানুষ। তাদের বেশির ভাগেরই বাড়ি খুলনা, বাগেরহাট ও বরিশাল অঞ্চলে। বিগত কয়েক দশক ধরে এরা ভারতে পাড়ি জমিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করে আসছিল।’
ঝিনাইদহের মহেশপুর থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ রাশেদুল আলম টগর বলেন, ‘অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে শুক্রবার (২২ নভেম্বর) পর্যন্ত থানায় ১৮টি মামলা হয়েছে। সবগুলো মামলা বিজিবির দেওয়া। ’
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঝিনাইদহের মহেশপুর ও চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার বেশ কয়েকটি সীমান্ত পথ দিয়েও ভারত থেকে অনুপ্রবেশ ঘটছে। সীমান্তগুলোর মধ্যে রয়েছে গয়েশপুর, মেদিনীপুর, নতুনপাড়া ও বেণিপুর। প্রতিদিনই এসব সীমান্তে প্রহরীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কিছু চিহ্নিত দালালদের মাধ্যমে দেশে ঢুকে পড়ছে ভারতে বসবাসকারী বাঙালিরা।
সীমান্তের নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো বলছে, ভারত থেকে যে পরিমাণ মানুষ বাংলাদেশে ঢুকছে তার সামান্য অংশ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়েছে। কয়েকগুণ বেশি মানুষ চোখ ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে অনায়াসে দেশের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ছে।
জীবননগর থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম জানান, গত কয়েক দিনে আমাদের সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে ঢুকে পড়া ২২ জনকে আটক করে আমাদের কাছে সোপর্দ করেছে বিজিবি। পরে অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলা দিয়ে তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা-৬ বিজিবির পরিচালক লে. কর্নেল খালিকুজ্জামান জানান, ভারতে এনআরসি জটিলতার কারণে যাতে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ না ঘটে এ বিষয়ে আমরা সতর্ক আছি। চুয়াডাঙ্গার ১৭টি ও মেহেরপুর জেলার ৩টি বিওপিতে বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। একই সঙ্গে সীমান্তে বিজিবির সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে টহল জোরদারের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গ্রামবাসীদের সচেতন করা হচ্ছে। যাতে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দেখলেই তাদেরকে আটক করে আমাদের হাতে তুলে দেয়। কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার কয়েকটি সীমান্ত দিয়েও ভারত থেকে অবৈধ পথে প্রতিদিনই বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারীরা ঢুকছে বলে খবর পাওয়া গেছে। যদিও বিজিবির পক্ষ থেকে তা অস্বীকার করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া ৪৭ বিজিবির সেক্টর কমান্ডার লে. কর্নেল রফিকুল আলম বলেন, কুষ্টিয়া সীমান্ত দিয়ে এখনো কোন অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেনি। এ বিষয়ে আমরা সতর্ক আছি। সীমান্তে বাড়তি নজরদারি রাখা হয়েছে।
সম্পাদক মণ্ডলীর সভাপতি: প্রফেসর নূর মো. রহমত উল্লাহ। নির্বাহী সম্পাদকঃ ব্যারিস্টার মো. ইমরান খাঁন, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: মো. ওমর ফারুক
ইমেইল: [email protected] মোবাইল: ০১৭৫৪-২২২৫০২
অফিসঃ গ্রামঃ শ্রীমদ্দি(আলোনিয়াকান্দি), পোঃ- হোমনা, উপজেলাঃহোমনা, জেলাঃ কুমিল্লা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. ইব্রাহিম খলিল কর্তৃক কুমিল্লা জেলা থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত।