মো. আক্তার হোসেন, বিশেষ প্রতিনিধি :
কুমিল্লার হোমনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কনসালট্যান্টসহ জনবল সংকটে। ১৪ বছর আগে ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও জনবল কাঠামো উন্নীত হয়নি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির। শিশু, মেডিসিন, সার্জারী, ইএনটি, এ্যানেসথেওলজী, কার্ডিওলজি, অর্থোপেডিক্স, চর্ম ও যৌন ও চক্ষু জুনিয়র কনসালট্যান্ট, মেডিকেল অফিসার (ইউনানি), মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিও গ্রাফার), পরিসংখ্যানবিদ, ক্যাশিয়ার, স্টোরকিপারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য রয়েছে। ১০ জনের বিপরীতে ১ জন কনসালট্যান্ট থাকায় হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রয়োজনীয় কনসালট্যান্ট না থাকায় সাধারণ জনগণ পড়েছে নানা ভোগান্তিতে।
হোমনা উপজেলাসহ আশপাশের বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রতিদিন হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে গড়ে ৪০০ রোগী আসে। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের কাউকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে রেফার করেন মেডিকেল অফিসাররা। অনেক সময় হার্ট, ডায়াবেটিক, কিডনিসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে আসেন স্বজনরা। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না থাকায় কর্তব্যরত চিকিৎসকরা ঢাকা বা কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে রেফার করেন, যা অনেক রোগীর স¦জনদের ক্ষেত্রেই চিকিৎসা করানো কষ্টসাধ্য। অনেক গরীব রোগীর স্বজনদের ক্ষেত্রে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকায় অ্যামবুলেন্স ভাড়া করে ঢাকা বা কুমিল্লা নিয়ে চিকিৎসা করাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অনেক রোগীর স্বজনরা পরিবারের শেষ সম্বলটুকু ভিটে-মাটি বিক্রি করেও ঢাকা বা কুমিল্লা নিয়ে চিকিৎসা করাতে হয়।
তা ছাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অপারেশন থিয়েটার থাকার পরও অর্থোপেডিক, দীর্ঘদিন এ্যানেসথেসিস, সার্জারী, হার্টসহ অন্যান্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকা এবং অপারেশন থিয়েটারটি বন্ধ থাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত, সিজারিয়ান ও ছোট-খাটো অপারেশনসহ অন্যান্য জটিল অপারেশনের সেবা দিতে পারছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বাধ্য হয়ে রোগীদের স্বজনরা বেসরকারি কোনো ক্লিনিক বা হাসপাতালে নিয়ে বাড়তি টাকা দিয়ে অপারেশন করাতে হয়।এছাড়া হাসপাতালের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির জনবলের অবস্থা আরও খারাপ।
হাসপাতালের অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় একটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, দু’টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, ৮ টি ইউনিয়ন ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ও ২০ টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। ২০০৭ সালে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও জনবল কাঠামোর বেশিরভাগ পদই রয়েছে শূন্য। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও যে চিকিৎসক ও জনবল থাকার প্রয়োজন তার চেয়েও কম রয়েছে।মোট ১৬৬ টি পদের বিপরীতে রয়েছে ৯৪ জন। ৩১ জনের বিপরীতে চিকিৎসক রয়েছে ২১ জন। ছয় জন মিডওয়াইফসহ (ধাত্রী) ২৬ নার্সের বিপরীতে ২২ জন থাকলেও তৃতীয় শ্রেণির ৮৪ জনের বিপরীতে ৪২ জন এবং চতুর্থ শ্রেণির ২৫ জনের বিপরীতে ৯ জন রয়েছে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিও গ্রাফার) না থাকায় এবং এক্স-রে মেশিনটি অকেজো হয়ে পড়ে থাকায় হাসপাতালে আসা রোগীরা বেশি দামে বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে এক্স-রে করাতে হয়। অতি দ্রুত কাঙ্ক্ষিত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ জনবল নিয়োগ দিয়ে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. শহীদ উল্লাহ্ বলেন, প্রতিদিন গড়ে ৪০০ রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে হাসপাতালের আউটডোরে আসেন। অনেক সময় আমরা কোনো রোগীর ডায়াগনোসিস করতে সমস্যা হলে অথবা জটিল কোনো সমস্যা হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে রেফার করি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় রোগীগের চিকিৎসাসেবা দিতে আমাদের বেগ পেতে হচ্ছে এবং বাড়তি সময় দিতে হচ্ছে। তাছাড়া রোগীদের স্বজনদেরও বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে চিকিৎসা করাতে অনেক বেগ পেতে হচ্ছে। আশা করি, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ জনবল সংকট সমাধানে নজর দিবেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. আবদুছ ছালাম সিকদার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ জনবল সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ জনবল সংকটের কথা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো। আশা করি, পর্যায়ক্রমে সব শূন্য পদগুলো পূরণ করা হবে।
সম্পাদক মণ্ডলীর সভাপতি: প্রফেসর নূর মো. রহমত উল্লাহ। নির্বাহী সম্পাদকঃ ব্যারিস্টার মো. ইমরান খাঁন, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: মো. ওমর ফারুক
ইমেইল: mdibrahimkhalil494@gmail.com মোবাইল: ০১৭৫৪-২২২৫০২
অফিসঃ গ্রামঃ শ্রীমদ্দি(আলোনিয়াকান্দি), পোঃ- হোমনা, উপজেলাঃহোমনা, জেলাঃ কুমিল্লা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. ইব্রাহিম খলিল কর্তৃক কুমিল্লা জেলা থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত।