মাহতাব উদ্দিন আল আল মাহমুদ,ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার ঐতিহ্যবাহী রানীগঞ্জ গোহাটি। জেলার বৃহৎ হাটগুলোর মধ্যে এটি একটি। প্রতিবছর এই গোহাটি থেকে কয়েক কোটি টাকা রাজস্ব পায় সরকার। তবে কোটি টাকা রাজস্ব দেওয়া এই হাটে হয়নি লাখ টাকার উন্নয়ন। পূর্বে গোহাটী ছিল রাণীগঞ্জ বিদ্যালয় মাঠে। বছর খানেক আগে গোহাটী স্থানান্তর করা হয়। হাটের অবস্থান স্থানান্তর হলেও ছিল না রাস্তা, শৌচাগার এবং হাটে আসা ক্রেতা বিক্রেতাদের রাত্রি যাপন করার নির্দিষ্ট স্থান।
তবে দীর্ঘ কয়েক যুগ পর যেন নবরূপে সাজছে ঐতিহ্যবাহী রাণীগঞ্জ গোহাটি। মহাসড়ক থেকে হাটে যাবার জন্য তৈরি করা হচ্ছে আধুনিক আরসিসি রাস্তা। হাটে আসা গবাদিপশু ক্রেতা- বিক্রেতাদের জন্য তৈরি করা হয়েছে শৌচাগার। এছাড়াও হাটে আসা ব্যক্তিদের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে একটি মসজিদ এবং হাটে বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে আসা গরু, ছাগলসহ অন্য প্রাণিদের সহজেই পানি পান করানো ও গোসল দেওয়ার জন্য ইট-সিমেন্ট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে পানি ধরে রাখার হাউজ। এসবের ফলে আধুনিক সকল সুযোগ- সুবিধার ব্যবস্থা হলো এই হাটে। এতে করে হাটটিতে বৃদ্ধি পাবে ক্রেতা-বিক্রেতাসহ গবাদিপশু ব্যবসায়ীদের উপস্থিতি। বাড়বে কেনাবেচা। ভোগান্তি কমার পাশাপাশি বাড়বে সরকারের রাজস্ব।
ঘোড়াঘাট উপজেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, রাণীগঞ্জ গোহাটির উন্নয়ন কাজের জন্য বরাদ্দ পাওয়া গিয়েছে ২ কোটি টাকা। দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আ লিক মহাসড়ক থেকে হাটটিতে যাতায়াতের জন্য তৈরি করা হচ্ছে ১ হাজার মিটার আরসিসি রাস্তা।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) এই রাস্তা উন্নয়ন কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজেলা রাণীগঞ্জ বাজারের হাইস্কুল সংলগ্ন এলাকায় ছিল গোহাটির অবস্থান। সপ্তাহে দু’দিন এই হাটে গরু-ছাগল কেনাবেচা হয়। এই দুটি বাজার এবং মহাসড়কে অস্বস্তিকর যানজট সৃষ্টি হওয়ায় হাটটি প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে স্থানান্তর করা হয়। নতুন স্থানে হাটটিতে যাবার জন্য ছিল না তেমন কোন রাস্তা। হালকা বৃষ্টিতে লালমাটির রাস্তা রূপ নিতো কাঁদার স্তুপে। গবাদিপশু বহন করা তিন ও চার চাকার যানবাহণ যাতায়াত করা ছিল দুস্কর। যার কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হতো ব্যবসায়ীদের।
স্থানীয় তালেবুর রহমান বলেন, ‘অনেকদিন পর হাটের উন্নয়ন হচ্ছে। নতুন রাস্তার পাশে ড্রেন নির্মাণের অনুরোধ জানাচ্ছি। নচেৎ রাস্তাটি পরবর্তীতে ভেঙ্গে যেতে পারে।’
আইনুল ইসলাম নামে আরেকজন বলেন, ‘আগে মাটির রাস্তা দিয়ে হাটাচলা করা যেত না। নতুন রাস্তা হচ্ছে। এতে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সুবিধা হলো। আমরা গ্রামবাসীও এই রাস্তার সুবিধা ভোগ করতে পারবো।’
সংশ্লিষ্ট ৩নং সিংড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘দেশের সকল জেলার ব্যবসায়ী এই হাটে আসেন। হাটটি থেকে সরকার প্রায় ১৮ কোটি টাকা রাজস্ব পায়। ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়ন ফান্ডে ১৫ শতাংশ হিসেবে আমরা প্রায় ২ কোটি টাকা পেয়েছি। সেই টাকা দিয়ে রাস্তা নির্মাণ কাজ শুরু করেছি। এছাড়াও হাটের ভেতরে ৯টি শৌচাগার তৈরি করা হয়েছে। হাটের উন্নয়নে আমরা বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছি। বৃহৎ এই হাটের উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান থাকবে।’