মো. সাইফুল্লাহ্ খাঁন, জেলাপ্রতিনিধি, রংপুর : করোনার শুরুতে রংপুর নগরীর ফুটপাত থেকে উচ্ছেদের শিকার হওয়া হকারদের পুনর্বাসন করা হয় নি। দীর্ঘ আট মাস পার হলেও অসহায় হকারদের পুনর্বাসনে জেলা প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট কেউই কোনো পদক্ষেপ নেন নি বলেও অভিযোগ উঠেছে। এতে করে নগরীর শত শত হকার এখন রুটি রুজি রোজগারের কোনো উপায় না পেয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে।
জানা গেছে, করোনাকালে রংপুর জেলা প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন ও পুলিশ প্রশাসনের যৌথ অভিযানে নগরীর জাহাজ কোম্পানীর মোড় হতে কাচারি বাজার পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিনশ হকারের ব্যবসায়ের অস্থায়ী স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। উচ্ছেদের সময় এসব হকারদেরকে পুনর্বাসনের আশ্বাস দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ নিতে দেখা যায় নি।
হকারদের অভিযোগ, শুধু নগরীর জাহাজ কোম্পানী মোড় হতে কাচারী বাজার পর্যন্ত তাদের ৩১৯ জনকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। ঈদুল আজহার তৃতীয় দিনে কোনো রকমের পুনর্বাসন ব্যবস্থা ছাড়াই এই হকারদের উচ্ছেদ করা হয়েছিল।পরবর্তীতে হকার্স সমিতির অনুরোধে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার অনুমতিক্রমে রংপুর জিলা স্কুলের পশ্চিম পার্শ্বের প্রাচীর ঘেঁষে ফুটপাতের ধারে দোকান বসাতে শুরু করলে জিলা স্কুল কর্তৃপক্ষ ওইসব হকারদের সেখান থেকে সরিয়ে দেন। এরপর থেকে হকাররা তাদের পুনর্বাসনের দাবি জানিয়ে আসলেও জেলা প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ বা অন্য কেউ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেন নি।
এব্যাপারে গত ৮ নভেম্বর প্রায় অর্ধশত হকার সিটি কর্পোরেশন কার্যালয়ের সামনে মেয়র মোস্তফার পা জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করলে তিনি পরিত্যক্ত ওরিয়েন্টাল সিনেমা হলের সামনে অস্থায়ীভাবে দোকান বসানোর মৌখিক অনুমতি দেন। পরে তারা মেয়রের উপস্থিতিতে সেখানে দোকান বসালে ওইদিন বিকেলে মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের পুনরায় উচ্ছেদ করা হয়।
হকার জামাল ও ফেরদৌস বলেন, ওরিয়েনটাল সিনেমা হল এর প্রাচীর ঘেঁষে সাড়ে ৪ ফিট অন্তর ৩০ জন ব্যবসায়ী দোকান করতো। পরে প্রাচীর সংস্কারকালে মেয়রসহ জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের পরামর্শে হকারদের সুবিধার্থে ফুটপাত থেকে ৩ ফিট জায়গা আমাদের জন্য রেখে প্রাচীর নির্মাণ করা হলেও দফায় দফায় চালানো হচ্ছে উচ্ছেদ অভিযান।
কাপড় ব্যবসায়ী আব্দুল হামিদ বলেন, আমরা বিভিন্ন এনজিও থেকে চড়াসুদে ঋণ নিয়ে ফুটপাতে ব্যবসা করতাম। করোনা ভাইরাস ও উচ্ছেদের কারণে আজ পরিবার-পরিজন নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে ভয়াবহ সময় অতিবাহিত করছি। ঋণের জ্বালায় আজ আমি পলাতক।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক হকার বলেন, দীর্ঘ ১২ বছর যাবত বেল্ট ব্যবসা করে অতিকষ্টে সংসার চালিয়ে আসছি। ধারদেনা করে ফুটপাতের ওপর ক্ষুদ্র ব্যবসা করি। পুলিশ এলে পালিয়ে যাই, অনেক সময় পুলিশের হাতে শারিীরিকভাবে লাঞ্চিত হওয়াসহ মালামাল থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। অন্যদিকে জরিমানা ও মামলার হয়রানি তো আছেই। মেয়র ও প্রশাসনের কাছে যাওয়া আসা করতেই দিন শেষ। তাছাড়া পুনর্বাসন ছাড়াই অবৈধভাবে আমাদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। হকারদের পুনর্বাসন ছাড়া দ্বিতীয় কোনো পথ নেই।
এব্যাপারে রংপুর হকার্স সমিতির সভাপতি হুময়ুন কবীর মিঠু বলেন, মহামারি করোনাকালে বিশেষ করে আমরা হকাররা একেবারে অসহায় হয়ে পড়েছি। চড়া সুদের টাকায় ব্যবসা করতে হচ্ছে হকারদের। উচ্ছেদ হওয়ার পর থেকেই আমাদের পরিবারের সদস্যরা অনাহারে এবং কর্তারা গৃহ ছাড়া। এভাবে আর কতদিন? তাই মেয়রসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতি অনুরোধ পরিবারের কথা ভেবে অবিলম্বে সকল হকারদের পুনর্বাসন করেন। একইসাথে রংপুরের হকারদের জন্য বঙ্গবন্ধুর নামে বঙ্গবন্ধু হকার্স মার্কেট নির্মাণের দাবিও জানান তিনি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র মাহমুদুর রহমান টিটু জানান, এব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারব না। বিষয়টি নিয়ে মেয়রের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন তিনি। পরে সিটি মেয়র মোস্তফার মুঠোফোনে একাধিকার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।