মো. ইব্রাহিম খলিলঃ

পূর্বঘোষিত সিদ্ধান্ত মোতাবেক এমপিওভুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী জাতীয়করণ প্রত্যাশী মহাজোট।

আজ শুক্রবার সারাদেশ থেকে আসা কয়েক হাজার শিক্ষকের উপস্থিতিতে ( জুম্মা'র নামাজের সময় ব্যতিত) সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

কর্মসূচির প্রথমদিনে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পাঠের মাধ্যমে কর্মসূচির শুরু হয়।

মহাজোটের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ মো. মাইন উদ্দিন বলেন "স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে গেলেও বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীগণ তাদের ন্যায্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। পাঠ্যক্রম, আইন এবং একই মন্ত্রণালয়ের অধীনে শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালিত হলেও সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মাঝে আর্থিক সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বিরাট পার্থক্য বিরাজমান। বৈষম্যগুলোর মধ্যে রয়েছে- বাড়ি ভাড়া, উৎসবভাতা, চিকিৎসা ভাতা, পদোন্নতি না থাকা, সন্তানের শিক্ষা ভাতা, হাউজ লোন, বদলি প্রথা, চাকরি শেষে নেই পেনশনের সুবিধা। অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টে শিক্ষক-কর্মচারীগণের নিকট থেকে প্রতি মাসে বেতনের ১০% হারে কেটে রাখলেও বৃদ্ধ বয়সে যথাসময়ে এ টাকা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা নেই। অনেক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারী টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যান। অধিকাংশ শিক্ষক নিজ জেলার বাইরে চাকরি করেন তাদের জন্য বদলী ব্যবস্থা চালু করা অতীব জরুরি। অধ্যক্ষ থেকে কর্মচারী পর্যন্ত নামমাত্র ১ হাজার টাকা বাড়িভাড়া ও ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা এবং একজন শিক্ষক ২৫% উৎসব ভাতা পান। এছাড়াও রয়েছে ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্ণিং বডির অনৈতিক হস্তক্ষেপ।'

তিনি বলেন, 'বিশ্বের কোনো দেশে শিক্ষা ব্যবস্থায় এমন বৈষম্য আছে বলে মনে হয় না। শিক্ষক কর্মচারী নির্যাতনের মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এন্ট্রি লেভেলের শিক্ষক নিয়োগ এনটিআরসিএ সুপারিশ করলেও নিয়োগ দিতে ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্ণিং বডির উৎচোক গ্রহণের অভিযোগও রয়েছে । প্রতিষ্ঠান প্রধান, সহ প্রধান , কর্মচারী নিয়োগ কমিটির হাতে থাকায় নিয়োগ বাণিজ্যের কথা হরহামেশাই শোনা যায়। এই বৈষম্য ও দুর্নীতি দূরীকরণে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ জরুরি। এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ হলে সবচেয়ে বেশী লাভবান হবে গ্রামের প্রান্তিক জনগোষ্ঠি। মেধাবীরা এ পেশায় আসবে। ফলে স্বল্প খরচে সকল নাগরিক একই মানের মানসম্মত শিক্ষা পাবে, শিক্ষার্থী ঝরে পড়া হ্রাস পাবে, প্রতিষ্ঠানের ফান্ডে থাকা হাজার হাজার কোটি টাকা সরকারের নিয়ন্ত্রণে আসবে। ফলে অপচয় ও দুর্নীতি রোধ হবে। বিনিময়ে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীগণ চাকরির নিশ্চয়তা পাবেন। অভিভাবকগণের শিক্ষা ব্যয় অনেক কমবে, শিক্ষায় কাঙ্খিত পরিবর্তন আসবে।'

সদস্য সচিব মো. জসিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, 'জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সু-স্পষ্ট ঘোষণা ছিল, “শিক্ষার জন্য খরচ কোনো ব্যয় নয় বরং ইহা উত্তম বিনিয়োগ।” বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধবিধ্বস্ত ও ভঙ্গুর অর্থনীতির দেশে ১৯৭৩ সালে ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেছেন, বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ৫০ টাকা থেকে ৭৫ টাকায় উন্নীত করেন এবং বেসরকারি কলেজের বেতন ১৫০ টাকায় উন্নীত করেন। তাছাড়া প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের জন্য রেশনিং এর ব্যবস্থা করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০১৩ সালে প্রায় ২৬ হাজার একশরও বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেছেন । ২০১৮ খ্রি. এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীগণের বেতন ৫% বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ও বৈশাখী ভাতার ব্যবস্থা করেছেন । এরই ধারাবাহিকতায় এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ সময়ের দাবি। এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণে প্রয়োজন শুধু সরকারের সদিচ্ছা ও সুষ্ঠু নীতিমালা। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন ও টিউশন ফি বাবদ যা আয় হয় তার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলেই ভর্তুকি ব্যাতিরেকেই জাতীয়করণ সম্ভব।'

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী ফোরাম ( বাবেশিকফো), বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষক-শিক্ষক কর্মচারী ফোরাম, এমপিওভুক্ত শিক্ষক অনলাইন পরিষদ, বাশিস (জসিম) , বাংলাদেশ সহকারি প্রধান শিক্ষক সমিতি, বাশিস ( মান্নাফি-প্রিন্স) , বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষক পরিষদ, বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ, বাংলাদেশ শিক্ষক সমাজ, ভোকেশনাল শিক্ষক সমিতি, জাতীয়করণ মঞ্চ, মাধ্যমিক সহকারি শিক্ষক সমিতি, বদলী প্রত্যাশী ’৭১, এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৃতীয় শ্রেণি কর্মচারী পরিষদসহ বিভিন্ন শিক্ষক-কর্মচারী সংগঠনের সমন্বয়ে এ জোট গঠিত হয়। সারা দেশ থেকে আসা শিক্ষক-কর্মচারীগণ অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন। এসময় তারা এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আয় রাস্ট্রীয় কোষাগারে জমা নিয়ে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণের দাবি জানান। সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয়করণের সুস্পষ্ট ঘোষণা না আসা পর্যন্ত তারা রাজপথে অবস্থানের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

এদিকে শিক্ষক নেতারা তাদের লাগাতার কর্মসূচি সফল করার জন্য প্রতিদিন শিক্ষক-কর্মচারীগণকে জাতীয় প্রেসক্লাবে উপস্থিত থাকার আহ্বান জানান।