মো. ইব্রাহিম খলিল:
এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের জন্য যুগ যুগ ধরে শিক্ষকরা সংবাদ সম্মেলন, স্মারকলিপি প্রদান ও বিভিন্ন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারের কাছে দাবি করে আসলেও তাদের সেই দাবি স্বাধীনতার ৫২ বছরেও কোনো সরকারের পক্ষে পূরণ করা সম্ভব হয়নি। বর্তমান সরকারের টানা তিন মেয়াদ ক্ষমতার শেষ প্রান্তে এসেও শিক্ষকদের কাঙ্ক্ষিত ও যৌক্তিক দাবিটি পূরণ করতে সক্ষম হয়নি। সেকারণে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি,২০২৩ খ্রি. এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী জাতীয়করণ প্রত্যাশী মহাজোটের আহ্বানে সারাদেশ থেকে আগত হাজার হাজার শিক্ষক-কর্মচারী এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণের লক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবে টানা ৪৪ দিন আন্দোলনে থাকার পরও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার সাড়া না পেয়ে আন্দোলন স্থগিত করেন মহাজোট নেতৃবৃন্দ।
গত ১১ জুলাই ২০২৩ খ্রি. থেকে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি(বিটিএ) এর আহ্বানে আবারও এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের লক্ষে লাগাতার আন্দোলন করছেন শিক্ষকরা। ইতোমধ্যে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী জাতীয়করণ প্রত্যাশী মহাজোটসহ দেশের প্রায় সবগুলো সমমনা শিক্ষক সংগঠনগুলো বিটিএ এর কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা ও সংহতি প্রকাশ করে। ফলে সারাদেশ থেকে লক্ষাধিক শিক্ষক-কর্মচারী নিয়মিত আন্দোলনে অংশগ্রহণ করছেন। এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক কোনো সারা না পাওয়ায় দেশের এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে তালা ঝুলানোর কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিটিএ এর নেতৃবৃন্দ।এ ঘোষণার পর থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঝুলছে তালা। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান চাকরি হারানোর ভয়ে খোলা রাখলে ঠিকমতো ক্লাস নিচ্ছেন না তারা।
ইতোমধ্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি আন্দোলনরত ও আন্দোলনবিহীন শিক্ষকদের নিয়ে আলোচনায় বসলেও তা ফলপ্রসূ হয় নি। কারণ বৈঠকে যারা আন্দোলন করেনি তাদেরকেও বৈঠকে ডাকা হয়েছে এবং তাদেরকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। অপরদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষকদের আসন ব্যবস্থা এবং শিক্ষামন্ত্রীর কথাবার্তায় শিক্ষক নেতৃবৃন্দকে অপমানিত করা হয়েছে বলে শিক্ষক নেতারা দাবি করছেন।
এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষকদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন যা শিক্ষক সমাজের জন্য মানহানিকর। শিক্ষক নেতারা বলছেন, সরকার নির্ধারিত যোগ্যতার ভিত্তিতেই সরকারি এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়োগ সম্পন্ন হয়। এখানে শিক্ষকদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যৌক্তিক নয়।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, 'এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ করা হলে ক্যাডার-নন-ক্যাডারসহ সরকারি এবং বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে সমস্যার সৃষ্টি হবে।'
তার এমন মন্তব্যের সমালোচনা করে শিক্ষক নেতারা বলেন, গত কয়েক বছরে সরকার যেসব এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করেছে তখন তো এধরণের কথাগুলো আলোচনায় আসে নি। এখন এসব কথা সামনে টেনে আনাই হচ্ছে শিক্ষকসমাজকে তাদের ন্যায্য অধিকার জাতীয়করণ থেকে বঞ্চিত করার অপচেষ্টা। এ শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষকসমাজের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, আমরা তার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছি। এখন আমাদের একমাত্র ভরসাস্থল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমরা বিশ্বাস করি, অনতিবিলম্বে তিনি আমাদের দাবি জাতীয়করণের ঘোষণা দিয়ে আমাদেরকে রাজপথ থেকে স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করবেন।
এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের হিসাব:
কলেজের সংখ্যা: ৪,০০৭ টি,মাধ্যমিক: ১৯,৮৪৮টি, মাদ্রাসা: ৯,৩৪১ টি। মোট এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান-৩৯,০৯২ টি।
শিক্ষকের সংখ্যা:
কলেজ: ১,১৭,৩৩৭ জন, মাধ্যমিক-২,৪৩,৫৫৩ জন,মাদ্রাসা-১,১৩,৩৬৮ জন, এবং কারিগরি-৩২,৩৭৮ জন।
ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা:
কলেজ-৩৭,৬৭,৭৮৪ জন,মাধ্যমিক-৯১,৬০,৩৬৫ জন,মাদ্রাসা-২৪,৬০,৩০৫ জন,কারিগরি-৮,৭৫,২৭০ জন
মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা- ১,৬২,৬৩,৭২৪ জন
প্রতি মিকর্থী মাসিক ২০ টাকা হারে বেতন দিলে বার্ষিক আয় হবে(১৬২৬৩৭২৪*২০*১২)= ৩৯০ কোটি টাকা।
ভর্তি ফি/ সেশন ফি শিক্ষার্থী প্রতি গড়ে ৪০০/- টাকা করে নিলে মোট আয় হবে( ১,৬২,৬৩,৭২৪*৪০০)=৬৫০ কোটি টাকা।
অন্যান্য আয়: প্রতি প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক আয় গড়ে ৫০ হাজার টাকা ধরা হলে মোট আয় হবে(৩৯,০৯২*৫০,০০০)= ২০০ কোটি টাকা।
বর্তমানে এমপিও খাতে সরকারের বার্ষিক ব্যয় হচ্ছে ১,৪২৫ কোটি টাকা। আর জাতীয়করণ করলে প্রয়োজন হবে ২,৫০০ কোটি টাকা।
সরকারের বার্ষিক আয় হবে(১,৪২৫+৩৯০+৬৫০+২০০)= ২,৬৬৫ কোটি টাকা( বর্তমান এমপিও'র জন্য প্রদত্ত অর্থসহ)। সরকারের বার্ষিক উদ্বৃত্ত থাকবে(২,৬৬৫-২,৫০০)=১৬৫ কোটি টাকা। তাহলে জাতীয়করণে বাধা কোথায়?
সম্পাদক মণ্ডলীর সভাপতি: প্রফেসর নূর মো. রহমত উল্লাহ। নির্বাহী সম্পাদকঃ ব্যারিস্টার মো. ইমরান খাঁন, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: মো. ওমর ফারুক
ইমেইল: [email protected] মোবাইল: ০১৭৫৪-২২২৫০২
অফিসঃ গ্রামঃ শ্রীমদ্দি(আলোনিয়াকান্দি), পোঃ- হোমনা, উপজেলাঃহোমনা, জেলাঃ কুমিল্লা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. ইব্রাহিম খলিল কর্তৃক কুমিল্লা জেলা থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত।