সম্পাদকীয় :
দেশের ১৭ কোটি মানুষের অধিকার নিশ্চিতকরণ, শিক্ষকদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা ও শিক্ষার মানোন্নয়নের স্বার্থেই এমপিওভুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ হওয়া উচিত। মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণা পত্রের অনুচ্ছেদ ২৩(২) -এ বলা হয়েছে- কোনরূপ বৈষম্য ছাড়া সমান কাজের জন্য প্রত্যেকের সমান বেতন পাওয়ার অধিকার রয়েছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৫(খ) এ বলা হয়েছে-কর্মের অধিকার, অর্থাৎ কর্মের গুণ ও পরিমান বিবেচনা করিয়া যুক্তিসঙ্গত মজুরীর বিনিময়ে কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তার অধিকার। অনুচ্ছেদ ২০(১) এ বলা হয়েছে-কর্ম হইতেছে কর্মক্ষম প্রত্যেক নাগরিকের পক্ষে অধিকার, কর্তব্য ও সম্মানের বিষয় এবং “প্রত্যেকের নিকট হইতে যোগ্যতানুসারে ও প্রত্যেককে কর্মানুযায়ী” এই নীতির ভিত্তিতে প্রত্যেকে স্বীয় কর্মের জন্য পারিশ্রমিক লাভ করিবেন।অনুচ্ছেদ ১৫(ক) এ বলা হয়েছে-অন্ন , বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষাও চিকিৎসাসহ জীবন ধারনের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা; অনুচ্ছেদ ১৭(ক) এ বলা হয়েছে-রাষ্ট্র একই পদ্ধতির গণমুখী ও সার্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সকল বালক-বালিকাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদানের জন্য; (খ) সমাজের প্রয়োজনের সহিত শিক্ষাকেসঙ্গতিপূর্ণ করার জন্য এবং সেই প্রয়োজন সিদ্ধ করিবার উদ্দেশে যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও সদিচ্ছাপ্রনোদিত নাগরিক সৃষ্টির জন্য; (গ) আইনের দ্বারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করিবার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।
এছাড়া দেশের এমপি, মন্ত্রী ও আমলারাও কোনো না কোনো শিক্ষকের হাত ধরেই আজ বিভিন্ন পদে আসীন রয়েছেন। কিন্তু স্বাধীনতার ৫২ বছর পেরিয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত শিক্ষকসমাজ অবহেলিত রয়ে গেছেন। মানবিক দিক থেকে বিবেচনা করলেও শিক্ষকদের জীবনমান উন্নয়নে সরকারের উচিত শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেয়া।
এমতাবস্থায়, এমপিওভুক্ত বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি জাতীয়করণের মাধ্যমে শিক্ষাক্ষেত্রের বৈষম্য দূর করা হবে এমন আশায় বুক বেঁধে অধীর আগ্রহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি ঘোষণার অপেক্ষায় দিন গুনছেন শিক্ষকসমাজ। দেশের এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে তাদের চাকরি জাতীয়করণের দাবি করে আসছেন। আসলে তাদের এ দাবি কতটা যৌক্তিক তা ভেবে দেখা জরুরি।একজন এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক ১ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া, ৫শ’ টাকা চিকিৎসাভাতা ও মূল বেতনের ২৫% উৎসব ভাতা পেয়ে থাকেন। নেই বদলি, পদোন্নতি ও পেনশন সুবিধা। চাকরি শেষে এককালীন সুবিধা পাওয়ার জন্য বছরের পর বছর ভোগান্তির শিকার হয়ে অনেক শিক্ষক রোগ-ব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে বিনা চিকিৎসায় এবং পরিবার-পরিজনকে নিয়ে নাখেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হচ্ছে। আর মৃত্যুর পূর্বে জাতিকে দিয়ে যাচ্ছেন অভিশাপ।
সরকারি-বেসরকারি শিক্ষকের মধ্যে আর্থিক বৈষম্যের দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায় , একজন সরকারি শিক্ষক মূল বেতনের ৪০% থেকে ৫০% বাড়ি ভাড়া, মূল বেতনের সমপরিমান উৎসব ভাতা ১ হাজার ৫শ’ টাকা চিকিৎসা ভাতা পেয়ে থাকেন। এছাড়াও রয়েছে বদলি ও পদোন্নতিসহ সব ধরনের সুবিধা।এ যেন সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকের মধ্যে পাহাড়সম বৈষম্য। বর্তমানে ১ হাজার টাকায় কিচেন রুমে থাকার সুযোগও নেই।২৫% উৎসব ভাতায় ২৫% উৎসব পালনই সম্ভব এর বেশি আশা করা যায় না।৫শ’ টাকা চিকিৎসা ভাতাও নগণ্য।
এতে দেখা যায়, একজন বেসরকারি শিক্ষক সামাজকিতা রক্ষা করতেও ব্যর্থ হন।পরিবার -পরিজনের ন্যূনতম চাহিদাটুকুও পূরণ করতে না পারায় তাকে মানবেতর জীবন যাপন করতে হয়।অথচ বেসরকারি শিক্ষকরা সরকারি শিক্ষকদের সমযোগ্যতা ও দক্ষতা নিয়ে সমপরিমান কাজ করলেও আর্থিকভাবে চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। এটা চলতে পারে না। তাছাড়া দেশের প্রায় ৯৭ ভাগ শিক্ষকই বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত । এসব প্রতিষ্ঠানে পাঁচ লাখের বেশি শিক্ষক-কর্মচারী কর্মরত আছেন। আর বাকি ৩ ভাগ সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন।সরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রেও আসন থাকে সীমিত। সে কারণে প্রতিযোগিতামূলক ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে অতি মেধাবী স্বল্পসংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পায় সরকারি প্রতিষ্ঠানে। অবশিষ্ট স্বল্পমেধাসম্পন্ন ও প্রায় মেধাশূন্য শিক্ষার্থীদের ঠাঁই হয় দেশের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। আর সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া শিক্ষার্থীদের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার মহান দায়িত্বটুকু গ্রহণ করেন দেশের অবহেলিত বেসরকারি শিক্ষক সমাজ।বেসরকারি শিক্ষকদের অবহেলিত রেখে পুরো শিক্ষা ব্যবস্থায় গুণগত পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আয় রাষ্ট্রীয় কোষাগারে নিয়ে জাতীয়করণ করা হলে সরকারের খরচও তেমন হবে না। শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ করা হলে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে এদেশের প্রায় ১৭ কোটি মানুষ, শতভাগ সফল হবে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, উজ্জ্বল হবে সরকারের ভাবমূর্তি, বাস্তবায়ন হবে জাতির পিতার সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন। তাই শিক্ষার মানোন্নয়ন জনস্বার্থ ও ন্যায়বিচারের প্রতিষ্ঠায় এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি জাতীয়করণের মাধ্যমে শিক্ষাক্ষেত্রের বৈষম্য দূর করা জরুরি। আর এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ হলে এটি হবে বর্তমান সরকারের সবচেয়ে বড় সফলতা।
সম্পাদক মণ্ডলীর সভাপতি: প্রফেসর নূর মো. রহমত উল্লাহ। নির্বাহী সম্পাদকঃ ব্যারিস্টার মো. ইমরান খাঁন, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: মো. ওমর ফারুক
ইমেইল: [email protected] মোবাইল: ০১৭৫৪-২২২৫০২
অফিসঃ গ্রামঃ শ্রীমদ্দি(আলোনিয়াকান্দি), পোঃ- হোমনা, উপজেলাঃহোমনা, জেলাঃ কুমিল্লা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. ইব্রাহিম খলিল কর্তৃক কুমিল্লা জেলা থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত।