১৯ দিন ধরে প্রেসক্লাবে অবস্থান করছে শিক্ষকরা!

মো. ইব্রাহিম খলিলঃ
এমপিওভূক্ত শিক্ষক-কর্মকারী জাতীয়করণ প্রত্যশী মহাজোট নেতৃত্বে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে জাতীয় প্রেসক্লাব এর সামনে এমপিওভূক্ত শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচির ১৯তম দিনে সারাদেশের এমপিওভূক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তৃতীয় দিনের মতো তিন ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করেছে। এ কর্মবিরতি আগামী ১৫ ও ১৬ মার্চ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী জাতীয়করণ প্রত্যাশী মহাজোটের পাঠানো এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জাতীয়করণ প্রত্যশী মহাজোটের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও আহবায়ক অধ্যক্ষ মাইন উদ্দীন ও সদস্য সচিব জসিম উদ্দিন আহমেদ দেশের সকল এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩ ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করায় সকলকে ধন্যবাদ জানান। আগামী ১৫ ও ১৬ মার্চ পর্যন্ত এ কর্মবিরতি বর্ধিত করা হয়েছে। ৩ ঘণ্টার এ কর্মবিরতি পালনের জন্য প্রতিষ্ঠান প্রধানসহ সকল এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের সহযোগিতা কামনা করেন।

মহাজোটের যুগ্ম-আহ্বায়ক অধ্যক্ষ মো. দেলাওয়ার হোসেন আজিজী বলেন, 'শিক্ষামন্ত্রণালয় থেকে ১৯ দিন ধরে প্রেসক্লাবের ধুলোবালিতে পড়ে থাকা শিক্ষকদের ব্যাপারে খোঁজ-খবর না নেওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। আমার মনে হয়, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা অভিভাবকহীন। তিনি দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনশন ও কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।'

তিনি আরও বলেন, 'আমরা মহাজোট নেতৃবৃন্দ পণ করে কর্মসূচি দিয়েছি। যতক্ষণ পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয়করণের ঘোষণা না আসবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাব না। আমরা সেভাবেই আমাদের কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছি। আজ মহাজোটের আহ্বানে দেশের শতকরা ৮০ ভাগ প্রতিষ্ঠানে তৃতীয় দিনের মতো ৩ ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করা হয়েছে। আমাদের দাবি মেনে নিতে কালক্ষেপন করা হলে আমরা কঠোর থেকে কঠোরতম কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।'

আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মচারীদের বক্তব্যে উঠে এসেছে, ১৯৯১ সাল পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষকগণ ৭ম গ্রেডে বেতন পেতেন, বর্তমানে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকগণ ৬ষ্ঠ গ্রেডে বেতন পান এবং টাইম স্কেল পেয়ে বর্তমানে অনেক প্রধান শিক্ষক ৪র্থ গ্রেডসহ সিলেকশন গ্রেডে বেতন পাচ্ছেন। কিন্তু বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকগণ ৭ম গ্রেডে চাকুরি শুরু করে ওই গ্রেডেই চাকুরি শেষ করতে হচ্ছে। নেই তাদের টাইম স্কেল ও আনুষাঙ্গিক সুবিধাদি । তাছাড়া বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষকগণের বেতন স্কেল ২৩ হাজার টাকা করা হলেও টাইমস্কেল না থাকায় সিনিয়র শিক্ষকরা টাইমস্কেল পেয়ে বর্তমানে সহকারী প্রধান শিক্ষকদের সমান বেতন পাচ্ছেন। এতে করে বিদ্যালয়ে সিনিয়র শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক মধ্যে পদবি ছাড়া আর কোনো ব্যবধান থাকল না। চাকুরির শুরুতে একজন মাস্টার্স পাশ করা সহকারী শিক্ষক সরকারি স্কুলে বেতন পান ১৬ হাজার টাকা স্কেলে। পক্ষান্তরে, এনটিআরসিএ থেকে পাশ করা একজন সহকারী শিক্ষক বেসরকারি হাই স্কুলে বেতন পান ১২ হাজর ৫শ' টাকা স্কেলে যা সম্পূর্ণ অমানবিক ও অযৌক্তিক। সমঅভিজ্ঞতা, সমযোগ্যতা ও একই মন্ত্রণালয়ের অধীনে আজকের দিনে এ বৈষম্য থাকতে পারে না।

তারা বলেন, সকল বৈষম্যের অবসানের একমাত্র পথ এমপিওভূক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ। শিক্ষকগণ আশায় বুক বেঁধে জাতীয় প্রেসক্লাবে অবস্থান করছেন মমতাময়ী মা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এসডিজি-৪ এর সফল বাস্তবায়ন ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে অনতিবিলম্বে এমপিওভূক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ করবেন।

সারাদেশ থেকে আসা শিক্ষকদের মধ্য থেকে বক্তব্য রাখেন, আব্দুল জব্বার, আব্দুল হাই সিদ্দিকী, মতিউর রহমান দুলাল, আফজালুর রশিদ, এমএ মান্নান, আবুল বাশার নাদিম, ইমরান হোসেন, আবুল বাশার, মো. মামুনুর রশিদ, মো. ফরিদ উদ্দিন, আব্দুল হাই সিদ্দিকি,ঝর্ণা বিশ্বাস ও তোফায়েল আহমেদ প্রমুখ।