মো. ইব্রাহিম খলিলঃ
এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী জাতীয়করণ প্রত্যাশী মহাজোট আহুত এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণের আন্দোলন সাময়িকভাবে স্থগিত করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। প্রেসক্লাবের সামনের অবস্থান ও প্রতীকী অনশন কর্মসূচি মুলতবি করে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিকেন্দ্রীকরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

আজ শনিবার ৪৪তম দিনের মতো কর্মসূচি পালন শেষে পবিত্র রমজান মাসে তাদের ন্যায্য দাবি-দাওয়ার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ঘোষণা না আসায় শিক্ষক নেতারা রোজামুখে কান্নাজড়িত কণ্ঠে মহান আল্লাহর আদালতে বিচার দায়ের করে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন মহাজোট নেতৃবৃন্দ।

আজ ৮ এপ্রিল, ২০২৩ খ্রি. মহাজোটের পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান ও প্রতীকী অনশন পালিত হচ্ছে। পাশাপাশি ১২ থেকে ১৬ মার্চ এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে তিন ঘণ্টার কর্মবিরতি পালিত হয়েছে। প্রেসক্লাবের সামনে ধুলোবালি , বৃষ্টি ও কাদার মধ্যে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে দীর্ঘদিন লাগাতার অবস্থান করে সহস্রাধিক শিক্ষক-কর্মচারী অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন। ইতোমধ্যে দুইজন শিক্ষক অবস্থান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে অসুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। জোটভুক্ত সংগঠনসমুহের প্রায় সকল শীর্ষ নেতৃবৃন্দ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন । ইতোমধ্যে বিরোধীদলীয় উপনেতা জি. এম. কাদের এমপি আমাদের কর্মসূচিতে উপস্থিত হয়ে সংহতি প্রকাশ করেছেন। আমাদের যৌক্তিক দাবি মহান সংসদে জোরালোভাবে উপস্থাপনের আশ্বাস দিয়েছেন। এছাড়াও মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, শিরিন আক্তার এমপিসহ অনেকেই আমাদের কর্মসূচিতে উপস্থিত হয়ে সংহতি প্রকাশ করেছেন ও মহান জাতীয় সংসদে উপস্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। দীর্ঘ ৪৪ দিনে সারাদেশ থেকে পর্যায়ক্রমে দুই লক্ষাধিক শিক্ষক-কর্মচারী আমাদের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছেন। জাতীয়করণ প্রত্যাশী মহাজোট তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন। অনেক শিক্ষক-কর্মচারী ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে আসতে পারেননি কিন্তু তাঁদের সহকর্মীদের আসতে সহযোগিতা ও উৎসাহিত করেছেন। সেকারণে তাঁদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। জাতীয়করণ প্রত্যাশী মহাজোট ও জোটভুক্ত সংগঠনসমূহের নেতৃবৃন্দ যাদের অক্লান্ত শ্রম ও অর্থের বিনিময়ে দীর্ঘদিন আমাদের কর্মসূচি পালন করতে পেরেছি তাদের ঋণ শিক্ষক সমাজ ভুলতে পারবে না।

সংবাদকর্মী , আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য যাঁরা সার্বক্ষণিক আমাদের সহযোগিতা করেছেন তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। দীর্ঘ কর্মসূচির মাধ্যমে আমাদের দাবি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর টেবিল পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের বিশ্বাস আগামী বাজেটে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণের সুস্পষ্ট ঘোষণা থাকবে। গত কয়েকদিন ধরে জোটভুক্ত সংগঠনসমুহের নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন আঞ্চলিক সংগঠন ও কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শিক্ষক কর্মচারীগণের সাথে আলোচনা করে কর্মসূচি বিকেন্দ্রীকরণ ও কুটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধির প্রস্তাব করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল রাতে ভার্চুয়াল গণমিটিং ও আজকে উপস্থিত শিক্ষক-কর্মচারীগণের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে এবং মাননীয় বিরোধীদলীয় উপনেতার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে কর্মসূচি জেলা উপজেলা পর্যায়ে বিকেন্দ্রীকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

মহাজোটের পরবর্তী কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে-
১. আসন্ন পবিত্র ইদুল ফিতরের পর প্রথম কার্যদিবসে শিক্ষক-কর্মচারীগণের কালো ব্যাজ ধারণ ও এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে জাতীয়করণের সুবিধা সম্বলিত ব্যানার টানানো । ( ব্যানারের নমুনা কেন্দ্রীয় ভাবে দেওয়া হবে )
২. ২ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত জাতীয়করণের সুবিধাভোগী অংশীজনদের সাথে মতবিনিয় ও তাঁদের সাথে নিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার মাননীয় সাংসদের সাথে আলোচনা ও স্মারকলিপি প্রদান।
৩. ২০ মে শনিবার জেলা বা উপজেলার শহীদ মিনার বা প্রেসক্লাবের সামনে এবং ২৭ মে শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ঢাকা জেলা ও মহানগরের জাতীয়করণের সুবিধাভোগী অংশীজনদের নিয়ে অবস্থান কর্মসূচি ।

আসন্ন বাজেট বক্তৃতায় এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ বা এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীগণের বৈষম্য নিরসনে কোনো প্রস্তাবনা না থাকলে জোট নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
এসময় এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীগণকে উপরোক্ত কর্মসূচি পালন ও পালনে সহযোগিতা করার জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ করেন জোটের নেতারা ।