জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহঃ
স্বপ্ন ছিল বিদেশ গিয়ে অন্যদের মত চাকরি করে স্বাবলম্বী হয়ে কিনবে গাড়ি, গড়বে বাড়ি। সন্তানদের লেখাপড়া শিখিয়ে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে মানুষের মত মানুষ করে গড়ে তুলবে এমন আশায় বুক বেঁধে ছিল ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডু উপজেলার চাদপুর গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে আব্দুল জব্বার ও একই গ্রামের রুহুল আমিনের ছেলে মামুন নামের দুই যুবক। কিন্তু তাদের সে আশা আজ ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না ইউনিয়নের কুঠি দূর্গাপুর গ্রামের আদম বেপারী মহিউদ্দিন ও তার ছেলে রহিম এর খপ্পরে পড়ে তারা এখনও নিখোঁজ রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার হরিনাকুন্ডু উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে আব্দুল জব্বার ও একই গ্রামের রুহুল আমিনের ছেলে মামুন এক বছর পূর্বে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য সহায় সম্বল বিক্রি করে নগদ ৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা তুলে দেয় আদম বেপারী মহিউদ্দিনের হাতে। এর পর তারা ওই দুইজনকে মালয়েশিয়ায় পাঠায়। পাঠানোর পর দালাল মহিউদ্দিন এর ছেলে মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত রহিমের খপ্পরে পড়ে ভুক্তভোগী আব্দুল জব্বার ও মামুন। প্রথমে রহিম ওই দেশে নিয়ে মামুন ও জব্বারকে একটি কাজ দেয়। তারপর তাদের কাজের উপার্জনকৃত অর্থ থেকে কমিশন নেয় সে। এভাবেই প্রায় ১ বছর যাবৎ কমিশন নিতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা কমিশন দিতে অপরাগতা জানালে দালাল রহিম তাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে পাসপোর্ট কেড়ে নেয়। তখন তারা নিরূপায় হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে। পরে জীবন বাঁচাতে ক্ষুধার তাড়নায় কাজের সন্ধানে দিকবিদিক ছোটাছুটি করতে থাকে আব্দুল জব্বার ও মামুন। তারা তাদের জীবনের অসহনীয় ঘটনাবলী তুলে ধরে বাড়িতে স্বজনদেরকে জানিয়ে দেয় মোবাইল ফোনে। শুরু হয় পরিবারের মাঝে আহাজারি। এক পর্যায়ে স্বজনরা আদম বেপারী মহিউদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে ভুক্তভোগীরা তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার কথা বলে। এ নিয়ে এলাকায় দফায় দফায় শালিসী বৈঠক বসে। সেখান থেকে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয় তাদেরকে যত দ্রুত সম্ভব দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে এবং দুটি পরিবারকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৬ লক্ষ টাকা ফেরত দিতে হবে। বিষয়টি উভয়পক্ষই লিখিতভাবে গ্রহণ করে। কিন্তু নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হলেও অদ্যাবদি তাদের কোন টাকা ফেরত দেওয়া হয়নি পাশাপাশি বিদেশ থাকা আব্দুল জব্বার ও মামুনকে ফেরত আনা হয়নি।
স্বজনরা অভিযোগ করেন, চার মাস যাবৎ ধরে আব্দুল জব্বার ও মামুনের কোন সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। তারা মরে গেছে না বেঁচে আছে তাও বোঝা যাচ্ছে না। এ ঘটনায় দুটি পরিবারের মাঝে চলছে আহাজারি। পরবর্তীতে ভুক্তভোগীরা প্রশাসনসহ বিভিন্ন জায়গায় ধরনা দিয়েও কোন সুবিচার পাচ্ছে না। এছাড়াও আদম বেপারী মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে সে বিভিন্ন সময় প্রায় ১৫ জনকে বিদেশ পাঠানোর নামে তাদের সহায় সম্বল বিক্রি করে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ ধরণের অপকর্ম করেও বহাল তবিয়তে ঘুরছে আদম বেপারী মহিউদ্দিন। বর্তমানে ওই সকল পরিবার মানবেতর জীবন যাপন করছে। তারা আদম বেপারী মহিউদ্দিন ও তার ছেলে রহিমের শাস্তি দাবি করেছেন।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত আদম ব্যবসায়ী মহিউদ্দিনের সাথে কথা বললে তিনি জানান, আমি এ পর্যন্ত অনেককেই বিদেশ পাঠিয়েছি। আমার ছেলে রহিম মালয়েশিয়া আছে। সেখানে সে অনেককে কাজ দিয়েছে। এর আগে কখনও এরকম সমস্যা হয়নি। তবে আব্দুল জব্বার ও মামুনের বিষয়ে একটু সমস্যা হয়েছে। সমাধানের জন্য আমি চেষ্টা করছি। তারা কোথায় আছে কীভাবে আছে এখনও জানা যায়নি। আশা করি, মালয়েশিয়া থাকা আমার ছেলে রহিমের মাধ্যমে দ্রুতই তাদের খোঁজ খবর নিয়ে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।
এই ব্যাপারে ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি মঈন উদ্দিন বলেন, এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তপূর্বক দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সম্পাদক মণ্ডলীর সভাপতি: প্রফেসর নূর মো. রহমত উল্লাহ। নির্বাহী সম্পাদকঃ ব্যারিস্টার মো. ইমরান খাঁন, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: মো. ওমর ফারুক
ইমেইল: mdibrahimkhalil494@gmail.com মোবাইল: ০১৭৫৪-২২২৫০২
অফিসঃ গ্রামঃ শ্রীমদ্দি(আলোনিয়াকান্দি), পোঃ- হোমনা, উপজেলাঃহোমনা, জেলাঃ কুমিল্লা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. ইব্রাহিম খলিল কর্তৃক কুমিল্লা জেলা থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত।