আবু সায়েম মোহাম্মদ সা'-আদাত উল করীম:-
ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলাপমেন্ট (আইপিডি)
চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলার কেশবপুরে বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন ও পরবর্তী বি'স্ফোরণের ঘটনায় এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি এই ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীসহ হ'তাহতদের ঘটনায় গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)। কনটেইনার ডিপোতে অ'গ্নিকান্ড, বি'স্ফোরণ, জীবন ও জীবিকার অপূরণীয় ক্ষতির পেছনে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের দায় আছে যেমন; তদ্রুপ এই ধরনের রাসায়নিক কনটেইনার ডিপোর যথাযথ তদারকি, ব্যবস্থাপনা ও নজরদারির দায়িত্বে নিয়োজিত রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসমুহের নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার দায় ও রয়েছে বলে মনে করে আইপিডি। ব্যবসা, শিল্প ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডসমুহের অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বেড়ে উঠবার পাশাপাশি নির্মাণ ও উন্নয়নের সময় ভবন ও কমপ্লেক্সের মধ্যে ইমারত সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা, ব্যবহারকালীন নিরাপত্তা, অ'গ্নি নিরাপত্তা ও দুর্যোগকালীন প্রস্তুতির বিরাট ঘাটতি আমাদের শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষের নিরাপদ জীবন ও জীবিকাকে মা'রাত্মক ঝূঁ'কিতে ফেলে দিয়েছে।
আইপিডি মনে করে, সামগ্রিকভাবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমুহের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ধারাবাহিক ব্যর্থতার কারণে উপর্যুপরি এই ধরনের অ'গ্নিকাণ্ড, বি'স্ফোরণ প্রভৃতি ঘটনাসমুহ রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে যার অবর্ণনীয় ক্ষতি রাষ্ট্র তথা সাধারণ জনগণের উপর ভ'য়ংকরভাবে নেমে এসেছে।
পূর্বাপর অ'গ্নি দুর্ঘটনার সময়, বিশেষতঃ নিমতলী, চুড়িহাট্টা, রুপগঞ্জ হাশেম ফুডস ফ্যাক্টরীর অ'গ্নিকান্ডের ঘটনাসমুহের অব্যবহিত পরে রাষ্ট্র কর্তৃক এই ধরনের অ'গ্নিকান্ড প্রতিরোধ ও রাসায়নিক দ্রব্যাদির নিরাপদ ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে করণীয়সমুহ সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা ও দপ্তরসমুহের দায়-দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এটা বিস্ময়কর যে, এই ধরনের পূর্বের ঘটনাগুলোর হৃদয়বিদারক অভিজ্ঞতাসমুহ ধারণ করবার পর ও আমাদের এতদসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমুহ কর্তৃক আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যায়নি।
সীতাকুন্ডের কনটেইনার ডিপোতে অ'গ্নিকাণ্ড ও বি'স্ফোরণের ঘটনায় আমাদের বি'স্ফোরক অধিদপ্তর, কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, পরিবেশ অধিদপ্তর, শ্রম অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর, স্থানীয় প্রশাসন প্রত্যেকেরই উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে গাফিলতির বিষয়টি আবার ও সামনে উঠে এসেছে। সরকারের পক্ষ থেকে যথারীতি দোষীদের আইনের আওতায় নেবার প্রতিশ্রুতি দেয়া হচ্ছে। কিন্তু কাস্টমস সূত্রে এখন জানা যাচ্ছে, নিরাপত্তা ও যন্ত্রপাতির শর্ত পূরণ না করার কারণে ২০১৭ সালে বিএম কনটেইনার ডিপোর লাইসেন্স নবায়ন বন্ধ রাখা হয়েছিল। ফলে বর্তমান এই অ'গ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর এই ডিপোটিতে এ ধরনের রাসায়নিক পদার্থ খালাস ও মজুদে পর্যাপ্ত অ'গ্নিনির্বাপকসহ সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি স্পট হয়ে উঠেছে। একইসাথে এই ধরনের ডিপোতে ঝূঁ'কিপূর্ণ রাসায়নিক পদার্থ থাকবার বিষয়টি ফায়ার সার্ভিসের না জানা থাকবার বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার চরমতর দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ। পাশাপাশি ব্যবসা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের রাজনৈতিক-সামাজিক প্রভাবের কারণে আমাদের দেশে আইনের শাসন প্রয়োগের ক্ষেত্রে অনেক সময়ই শিথিলতা দেখা যায়, যা আমাদের শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষের জীবনকে ভী'ষণভাবে বিপন্ন করে তুলেছে। আরও একটি বিষয় এখানে তাৎপর্যপূর্ণ, এই কনটেইনার ডিপোতে ইউরোপিয়ান দেশের বিনিয়োগ থাকলেও এখানে ইউরোপিয়ান মানের কাছাকাছি অ'গ্নি নিরাপত্তা ও দুর্যোগ ঝূঁ'কি প্রশমনের তেমন কোন উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি। এই অ'গ্নিকান্ডের পর এই ডিপোতে ফায়ার হাইড্রেন্ট না থাকবার কারণে আশেপাশের পুকুর থেকে আ'গুন নেভানোর জন্য পানির সংস্থান করতে হয়েছে, যা দুর্যোগ মোকাবেলাকে প্রলম্বিত করেছে। জনবসতিপূর্ণ এলাকায় ঝূঁ'কিপূর্ণ ব্যবহার দেশের জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতিমালা অনুযায়ী নিষিদ্ধ সত্বেও বাংলাদেশের বিভিন্ন জনবহুল এলাকায় নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই স্থানীয় প্রশাসনের চোখের সামনেই এবং যাবতীয় আইন ও নিয়ম-নীতিকে বৃদ্ধাংগুলি দেখিয়ে এই ধরনের শিল্প-কারখানা-বি'পজ্জনক গুদাম গড়ে উঠছে প্রতিনিয়ত। সীতাকুণ্ডের কেশবপুরের কনটেইনার ডিপোর বি'স্ফোরণের প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে আশেপাশের এলাকায় যা এলাকাবাসীকে স্বাস্থ্যগত-পরিবেশগত-অর্থনৈতিকভাবে মা'রাত্মক ক্ষ'তির সম্মুখীণ করবে দীর্ঘদিন ধরে। বিএম কনটেইনার ডিপোর অ'গ্নিকাণ্ডের এই ঘটনার পর চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে অ'গ্নিকাণ্ডের ঝূঁ'কির কথা বিবেচনা করে স্মার্ট গ্রুপের প্রতিষ্ঠান আল-রাজী কেমিক্যাল কমপ্ল্যেক্স লিমিটেডের হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড তৈরির কারখানা বন্ধের দাবিতে বি'ক্ষোভ করেছে স্থানীয় এলাকাবাসী যা অত্যন্ত যৌক্তিক। পাশাপাশি আমরা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, পুরান ঢাকায় এতসব অ'গ্নিকাণ্ডের ঘটনার পরও এই এলাকা থেকে বি'পজ্জনক রাসায়নিক গুদাম এখনো সরেনি।
ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) মনে করে, শিল্প কারখানা ও রাসায়নিক গুদান-ডিপোসমুহকে যথাযথ ব্যবস্থাপনা ও নিয়মনীতির মধ্যে নিয়ে এসে শ্রমিকের জীবন ও জীবিকার সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানসমুহের মধ্যে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের কোন বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধিবিধান প্রতিপালনে শিল্প-কারখানা, গুদাম-ডিপোসমূহকে বাধ্য করবার জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নিতে হবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমুহকে। সাধারণ মানুষের দারিদ্র ও সস্তা শ্রমকে উপজীব্য করে কোন প্রভাবশালী উদ্যোক্তা কিংবা গোষ্ঠী যেন মানুষের জীবনকে এভাবে বি'পন্ন করতে না পারে সেজন্য রাষ্ট্র ও সরকারকে আমাদের সংবিধানে প্রতিশ্রুত জীবন ও জীবিকার নিরাপত্তা দিতে প্রয়োজনীয় সকল উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।
সম্পাদক মণ্ডলীর সভাপতি: প্রফেসর নূর মো. রহমত উল্লাহ। নির্বাহী সম্পাদকঃ ব্যারিস্টার মো. ইমরান খাঁন, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: মো. ওমর ফারুক
ইমেইল: mdibrahimkhalil494@gmail.com মোবাইল: ০১৭৫৪-২২২৫০২
অফিসঃ গ্রামঃ শ্রীমদ্দি(আলোনিয়াকান্দি), পোঃ- হোমনা, উপজেলাঃহোমনা, জেলাঃ কুমিল্লা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. ইব্রাহিম খলিল কর্তৃক কুমিল্লা জেলা থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত।