মো. সাইফুল্লাহ খাঁন, জেলাপ্রতিনিধি, রংপুর : বাঁশ-বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই, মাগো আমার শোলক-বলা কাজলা দিদি কই?- কবি যতীন্দ্র মোহন বাগচী’র কাজলা দিদি কবিতাটি এখন মনে করিয়ে দেয় কালের আবর্তে হারানো বাঁশ বাগানের কথা। আমরা জানি, এক সময়ে গ্রামীণ জনপদে বাঁশ বাগানের সংখ্যাও ছিল অধিক। সে সময়ে গৃহস্থালী, কৃষি ও ব্যবসা ক্ষেত্রে বাঁশের তৈরী পণ্যের আধিক্য ছিল। নিম্ন ও মধ্যবিত্তের বাড়ি-ঘর তৈরী হতো বাঁশ দিয়েই। সৌখিন আসবাব পত্র তৈরীর কাজেও বাঁশের ব্যবহার ঘিরে ক্ষুদ্রাকারে গড়ে উঠেছিল শিল্প। সে সময়ে গ্রামের ঘরে ঘরে বাঁশ শিল্পের দেখা মিললেও সময়ের সঙ্গে প্লাস্টিকের তৈরি পণ্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাঁশ শিল্প আজ বিলুপ্তির পথে। অন্যদিকে মাঠ পর্যায়ে বাঁশ চাষের সঠিক উদ্ভাবন ও পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় কমে এসেছে এর উৎপাদন। অনেকে নিরুৎসাহিত হয়ে বাঁশ বাগানের জমি এখন কৃষিকাজে ব্যবহার করছেন। আর বাঁশ ব্যবসায়ীরাও করছেন পেশা বদল। আশার বাণী হলো আধুনিকযুগেও এই বাঁশের ব্যবহার কমেনি, বিশেষ করে গৃহস্থালির খুঁটিনাটি কাজে বাঁশের ব্যবহার এখনো বিদ্যমান। তাই বংশ পরম্পরায় যুগ যুগ ধরে বাঁশের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা তা সরবরাহ করে গ্রাম-গঞ্জে,শহর বন্দরে মানুষের চাহিদা পূরণ করে আসছেন। তবে বাঁশের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আজ নানা অবহেলার কারণে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন। রংপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বাঁশ যোগান দেয় এমন শতাধিক ব্যবসায়ী আজ পথে পথে ঘুরছেন। তাদের কেউ কেউ নগরীর নিউ জুম্মাপাড়া ঈদগাহ মাঠ,শালবন মিস্ত্রিপাড়া, ফায়ার সার্ভিস মোড়, মুলাটল পুকুর পাড়,টেক্সটাইল মোড় ও চেকপোস্ট এলাকায় রাস্তার ধারে অস্থায়ীভাবে বাঁশ বিক্রি করছেন। জীবন ও জীবিকার তাগিদে নগরবাসীর বাঁশের চাহিদা মেটানো এই মানুষগুলোর নির্ধারিত স্থান না থাকায় কোথাও স্বস্তিতে দাঁড়াতে পারছেন না। তাদের প্রত্যাশা নগরীতে বাঁশ বিক্রির জন্য তাদের স্থায়ী জায়গা দেওয়া হোক।
হতাশাগ্রস্ত বাঁশ ব্যবসায়ী আজিজুল ইসলাম বলেন, আমরা গঙ্গাচড়া উপজেলার বড়াইবাড়ি, চ্যাংমারি,মন্থনা,গজঘণ্টা ও মহিপরের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাঁশ সংগ্রহ করি। এছাড়াও বুড়িরহাট, হাজিরহাট, পান বাজার, পাগলাপীর, পাওটানা এলাকাগুলো হতে ব্যবসায়ীরা বাঁশ এনে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ফেরি করে বাঁশ বিক্রি করে। কিন্তু ক্রয়-বিক্রয়ের নির্ধারিত কোনো স্থান না থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে ভ্যানযোগে অসংখ্য বাঁশ নিয়ে আসতে হয় । কোনো দিন বিক্রি হয়,কোনো দিন খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হয়। স্থায়ী জায়গা না থাকায় ফেরি করেও বাঁশ বিক্রি করতে হয়, অনেক সময় মানুষের গালিগালাজ শুনতে হয়। পরিবারের দিকে তাকিয়ে এভাবে জীবিকা নির্বাহ করতে হয় আমাদের। আমরাও তো দেশের জনগণ। তাহলে আমাদের নিয়ে সরকারের কোনো পরিকল্পনা আছে কি?
মহিপুরের বাসিন্দা মাহতাব উদ্দিন বলেন,২৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সেকেন্দার আলী কিছু বাঁশ ব্যবসায়ীকে নিউ জুম্মাপাড়া ঈদগাহ মাঠে অস্থায়ীভাবে জায়গা দিয়েছেন। এই জায়গাটিতে কতদিন থাকা সম্ভব হবে জানি না। তবে স্থায়ী জায়গা না থাকলে এই পেশা বদল করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। এছাড়াও, বাঁশের ঐতিহ্য ফেরানোর লক্ষে সহজ ও সাশ্রয়ী পদ্ধতিতে উৎপাদন, বিক্রির স্থান নির্ধারণসহ এর ব্যবহার বাড়িয়ে চাষী ও ব্যবসায়ীদের আর্থিকভাবে লাভবান করতে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
উল্লেখ্য, বাঁশ শিল্প বাঙালি সংস্কৃতির একটি বড় অংশ। তাছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাঁশের তৈরী জিনিষপত্রের এখনও ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিভিন্ন হাট-বাজারে এখনও কিছু কিছু বাঁশের তৈরী জিনিষপত্র দেখা যায়। জেলার বিভিন্ন এলাকায় এখনও অনেক পরিবার বাঁশ দিয়ে হাতের তৈরী ডালা, চালা, কুলা, পাখা, মাছ ধরার দোয়ারি, খালুই, পলো, কোচ, জুতি, টুকরি, টোপা, তালাই, ধানের গোলা, ডোল, পাখির নানা আকৃতির খাঁচা, লাঠি, ঝাড়সহ আরো অনেক গৃহকর্মের জিনিসপত্র বানিয়ে তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। কালের আবর্তনে স্থানীয় বাজারে এমনকি বাড়ি বাড়ি ফেরি করে করে বাঁশের তৈরি পণ্য বিক্রি আজ আর চোঁখে পড়ছেনা। বিলুপ্তির পর্যায়ে থাকা বাঁশ ব্যবসায়ীরাও আজ স্থায়ী জায়গা ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে পথে পথেই ঘুরছেন এবং পেশায় টিকে থাকতেও হিমশিম খাচ্ছেন।
সম্পাদক মণ্ডলীর সভাপতি: প্রফেসর নূর মো. রহমত উল্লাহ। নির্বাহী সম্পাদকঃ ব্যারিস্টার মো. ইমরান খাঁন, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: মো. ওমর ফারুক
ইমেইল: [email protected] মোবাইল: ০১৭৫৪-২২২৫০২
অফিসঃ গ্রামঃ শ্রীমদ্দি(আলোনিয়াকান্দি), পোঃ- হোমনা, উপজেলাঃহোমনা, জেলাঃ কুমিল্লা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. ইব্রাহিম খলিল কর্তৃক কুমিল্লা জেলা থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত।