বাড়িয়ে দিলেন সহযোগিতার হাত
মো. ইব্রাহিম খলিল, হোমনা, কুমিল্লা>>

কুমিল্লার হোমনায় অবহেলিত এক ভিক্ষুক মুক্তিযোদ্ধাকে খুঁজে বের করে তাৎক্ষণিকভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন হোমনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আজগর আলী। গতকাল বুধবার তিনি ওই মুক্তিযোদ্ধাকে সাহায্য হিসেবে ২ বাণ্ডিল টিন ও ৬ হাজার টাকার চেক প্রদান করেন।এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা ফরেস্টার মো. ফজলে রাব্বী ও হোমনা উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. আক্তার হোসেন।
জানা গেছে, হোমনা উপজেলা প্রেসক্লাবের যুগ্ম- সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক জনতা পত্রিকার হোমনা উপজেলা প্রতিনিধি সৈয়দ আনোয়ারের ফেসবুক ওয়াল থেকে জানতে পেরে তিনি ওই মুক্তিযোদ্ধাকে তাৎক্ষণিকভাবে সহযোগিতা করার উদ্যোগ নেন।

মুক্তিযোদ্ধা খোরশেদ আলম- কুমিল্লা জেলার হোমনা উপজেলার চান্দের চর ইউনিয়নের রামপুর গ্রামের বাসিন্দা।
১৯৭১ সালে হানাদার বাহিনীর বর্বর হত্যা, ধর্ষণ,আর ধ্বংসলীলায় খোরশেদ আলমের যুবক চেতনা জাগ্রত হয়।বাংলা মায়ের মুক্তির নেশায় সেদিন বেরিয়ে পড়েন যুদ্ধ জয়ের স্বপ্ন নিয়ে। চলে যান হাতিমারা (তৎকালীন) ট্রেনিং সেন্টারে, মরহুম কালি ভুঁইয়া ও আঃ কুদ্দুছ এর অধীনেই ট্রেনিং গ্রহণ করে রাতের আঁধারে বন-জঙ্গলের দুর্গম পথে অন্য সঙ্গীয় মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে যুদ্ধের ময়দানে নেমে পড়েন। সেই থেকে শুরু- এরপর টানা নয় মাস রেকি করা, গাইড, সংবাদ সরবরাহ কিংবা পাকসেনাদের ক্যাম্প আক্রমনসহ সবকিছুতেই পারদর্শী হয়ে উঠেন খোরশেদ মিয়া।
হোমনা-মুরাদনগরসহ নানা জায়গায় মুুক্তিবাহিনীর সাথে যুদ্ধে গিয়েছেন তিনি। প্রায় সময় নিজ হাতে রান্না করে মুক্তিযোদ্ধাদের খাইয়েছেন।
যুদ্ধ শেষ হলো,স্বাধীন হলো বাংলাদেশ। পরিবার নিয়ে কোনভাবে চলছিল সংসার, বার্ধক্যসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে কোনো কাজ করতে না পেরে বাধ্য হয়েই বেছে নেন ভিক্ষাবৃত্তির জীবন! দু-মুঠো ভাতের জন্য এখন ঘুরছেন মানুষের দ্বারে দ্বারে!
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজগর আলী জানান, বিষয়টি সর্বপ্রথম আমার নজরে পড়লো সাংবাদিক আনোয়ার এর ফেসবুক দেয়ালে। ফোন করে ওই মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে আমার অফিসে আসতে বললাম। বীর মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠেই শুনলাম তার বীরত্বের কাহিনী এবং একই সাথে শুনলাম তার দুঃখ গাঁথা। মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতির জন্য চেষ্টা করেছেন, কিন্তু সময় মতো সার্টিফিকেটসহ প্রয়োজনীয় কাগজ- পত্র সংগ্রহ করতে না পারায়, তিনি মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত হন। খোরশেদ আলম একাত্তরে হানাদার বাহিনীকে হারিয়ে প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতার জয় ছিনিয়ে আনলেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি, জীবন সংগ্রামে পেয়েছেন ভিক্ষুকের স্বীকৃতি! দু-মুঠো ভাতের জন্য ঘুরছেন মানুষের দ্বারে দ্বারে! নিজ দায়িত্ববোধ থেকে এ অসহায় বীর মুক্তিযোদ্ধার জন্য কিছু করার প্রচন্ড আগ্রহ অনুভব করলাম। “জমি আছে- ঘর নেই” প্রকল্পের আওতায় মুক্তিযোদ্ধার নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিলাম। তাৎক্ষণিকভাবে সরেজমিন তদন্তের জন্য উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলীকে তার বাড়িতে পাঠালাম। কিন্ত আমার ইচ্ছা শক্তি বাধা পেলো মুক্তিযোদ্ধার পর্যাপ্ত জায়গার অভাবে। তাৎক্ষণিক কিছু করার আকাঙ্ক্ষায় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে ডাকলাম। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখার মানবিক সহায়তা তহবিল থেকে ২ বান্ডিল টিন ও ৬ (ছয়) হাজার টাকার চেক প্রস্তুত করে নিয়ে আসতে বললাম।
২ বান্ডিল টিন আর ৬(ছয়) হাজার টাকা কি এই বীর মুক্তিযোদ্ধার অসহায়ত্ব দূর করতে পারবে? পারবে কি তাকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দিতে? পারবে কি তার জীবনের শেষ ইচ্ছে- জাতীয় পতাকায় আদৃত হয়ে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় এ পৃথিবী থেকে চির বিদায় নেওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে?
মুক্তিযোদ্ধা খোরশেদ আলম জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট থেকে সাহায্য পেয়ে আমি খুশি। তবে আমার আফসোফ আমি সময়মতো কাগজ-পত্র জমা দিতে না পারায় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আজও স্বীকৃতি পাই নি।আমি যাতে মৃত্যুর আগে একজন মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাই সরকারের কাছে সেই দাবি জানাচ্ছি।
প্রসঙ্গত, ইউএনও আজগর অালী হোমনায় যোগদান করার অল্প দিনের মধ্যেই ইতোপূর্বে একাধিক অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন।